আগাম জাতের মুড়িকাটা পেঁয়াজের রাজধানী খ্যাত, ফরিদপুরের সদরপুর, নগরকান্দা, সালথা এবং ভাঙ্গা উপজেলায় এবছর পেঁয়াজের ব্যাপক আবাদ হয়েছে। এ উপজেলা গুলোর লক্ষাধিক কৃষক পরিবার পেঁয়াজ রোপণের মাধ্যমে আর্থিক সচ্ছলতার আশায় নতুন স্বপ্ন বুনছেন।
এসব এলাকায় পেঁয়াজ আবাদে ব্যস্ত থাকা কৃষকদের সাহায্য করে যাচ্ছেন বাড়ির গৃহিণী, ছেলে-মেয়েসহ স্বজনরা। তাদের সঙ্গে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন স্থানীয় ও দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা অনেক নারী-পুরুষ শ্রমিকও।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পেঁয়াজ আবাদের শীর্ষ জেলাগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় জেলা হিসেবে পরিচিত হচ্ছে ফরিদপুর। দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজের সিংহভাগ যোগান দেয়া হয় ফরিদপুর থেকে। ফলে প্রতি বছর নভেম্বর-ডিসেম্বর মাস এলেই নানা প্রজাতির পেঁয়াজ রোপণে ব্যস্ত সময় পার করেন কৃষকরা। গত কয়েক বছর ধরে পেঁয়াজের দাম ভালো পাবার কারণে এবার কৃষকরা অধিক পরিমাণ জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করছেন। এ বছর ফরিদপুর জেলায় রেকর্ড পরিমান জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করা হচ্ছে। সদরপুর, নগরকান্দা, সালথা ও ভাঙ্গা উপজেলা ছাড়াও জেলার চরভদ্রাসন, মধুখালী, বোয়ালমারী, আলফাডাঙ্গা এবং ফরিদপুর সদর উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকার মাঠজুড়ে বর্তমানে কৃষকরা বিভিন্ন জাতের পেঁয়াজ রোপণের কাজ করছেন। এ জেলায় আগাম জাতের মুড়িকাটা পেঁয়াজের পাশাপাশি আরো চাষাবাদ হয় হালি পেঁয়াজ, দানা পেঁয়াজ এবং পেঁয়াজ বীজ।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, এ বছর ফরিদপুরে ৪৩ হাজার ২৬০ হেক্টর আবাদি জমিতে পেঁয়াজের চাষ করা হচ্ছে। যা গত বছরের তুলনায় বেশী। এরমধ্যে মুড়িকাটা পেঁয়াজ ৫ হাজার ৩শ হেক্টর জমিতে, হালি পেঁয়াজ ৩৬ হাজার ১৪০ হেক্টর জমিতে রোপণের কাজ চলছে। এছাড়া ১ হাজার ৮২০ হেক্টর জমিতে দানা পেঁয়াজ রোপণ শুরু হয়েছে। জেলায় চলতি মৌসুমে সাড়ে ৫ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সরেজমিনে সদরপুর ও ভাঙ্গা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি পেঁয়াজ রোপণে ব্যস্ত সময় পার করেছেন কৃষকেরা। গতবছর আগাম জাতের মুড়িকাটা পেঁয়াজের দাম ভালো পাওয়ায় এবছর অধিক সংখ্যক কৃষক মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষে ঝুঁকেছেন।
পেঁয়াজ চাষ নিয়ে সদরপুর উপজেলা এক চাষি রমজান মুন্সীর সাথে কথা হলে তিনি জানান, এবার শ্রমিক, সার ও সেচের খরচ বেড়ে যাওয়ার কারণে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। তবে এ বছর যে দামে মুড়িকাটা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে এমন দাম বাজারে থাকলে কৃষক লাভবান হবে।
ভাঙ্গা উপজেলার এক চষি সরোয়ার হোসেন জানান, এবার পেঁয়াজ উৎপাদনে খরচ বেড়েছে বহু গুণে। সরকার যদি কৃষকদের প্রণোদনার মাধ্যমে সার, ডিজেল দিয়ে সহযোগিতা করতো তাহলে কৃষক উপকৃত হতো। তবে এর পরেও পেঁয়াজের বাজার ভালো বলে আমরা আশার আলো দেখছি।
এ বিষয়ে সদরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিটুল রায় বলেন, সদরপুরসহ ফরিদপুরের প্রতিটি উপজেলার মাটি ও আবহাওয়া পেঁয়াজ আবাদে খুবই উপযোগী। অন্যসব উপজেলার মতো সদরপুরেও মুড়িকাটা পেঁয়াজ ও পেঁয়াজের বীজ খুব ভালো উৎপাদন হয়। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে সদরপুরের চাষিরা ভালো লাভবান হবেন।
আপনার মতামত লিখুন :