জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অধীনে পরিচালিত ধর্মীয় শিক্ষা কেন্দ্রগুলোতে শিক্ষাব্যবস্থার নজিরবিহীন অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম ও দায়িত্বহীনতার করুণ চিত্র ফুটে উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে যে, ৫ আগস্টের পর থেকে বেশিরভাগ শিক্ষাকেন্দ্রে ধর্মীয় শিক্ষাদান কার্যক্রমে চরমভাবে স্থবিরতা বিরাজ করছে। শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন শিক্ষাকেন্দ্রে এসে অপেক্ষা করলেও অধিকাংশ শিক্ষকের অনুপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। অথচ এই শিক্ষকরা প্রতিমাসে ৬ লক্ষ ৪০ হাজার টাকার বেতন উত্তোলন করছেন, যা কেবলমাত্র অনিয়মই নয়, বরং ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি চরম উদাসীনতার প্রতিফলন।
উপজেলার ইসলামিক ফাউন্ডেশন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এই উপজেলায় মোট ১২৭টি ধর্মীয় শিক্ষাকেন্দ্র রয়েছে। তৎমধ্যে ৩৮টি মসজিদভিত্তিক প্রাক-প্রাথমিক কেন্দ্র, ৮৮টি সহজ কোরআন শিক্ষা কেন্দ্র এবং ১টি বয়স্কদের সহজ কোরআন শিক্ষা কেন্দ্র রয়েছে। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি পরিদর্শন করে দেখা যায়, অনেক শিক্ষাকেন্দ্রে সাইনবোর্ড থাকলেও শিক্ষাদান কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে অকার্যকর।অনেক ক্ষেত্রে মসজিদভিত্তিক কেন্দ্র না হয়ে অন্যের বাড়িতে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে নামমাত্র পাঠদান চালানো হচ্ছে।কোনো শিক্ষার্থী উপস্থিত না থাকলেও হাজিরা খাতায় উপস্থিতি দেখানো হয়।
ধর্মীয় শিক্ষাকেন্দ্রগুলোর এমন চরম অব্যবস্থাপনা ও স্থবিরতা দ্রুত নিরসন করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন অভিভাবক ও এলাকার আলেম সমাজ।
শিক্ষার্থীদের অভিভাবকের সাথে কথা হলে তারা ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, “আমরা সন্তানদের ধর্মীয় শিক্ষা নিতে পাঠাই কিন্তু শিক্ষকরা ঠিকমত দায়িত্ব পালন করছেন না।শিক্ষাদানেও চরম উদাসীন। অথচ তারা মাস শেষে ঠিকই বেতন নিচ্ছেন। যদি তারা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হন, তবে তাদের অপসারণ করে যোগ্য কাউকে নিয়োগ দেওয়া হোক।
উপজেলার সচেতন আলিম সমাজের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে মাওলানা নুরুজ্জামান সরকার বলেন, “শিক্ষকরা ধর্মীয় শিক্ষার মতো একটি পবিত্র দায়িত্ব পালন করছেন অথচ তাদের মধ্যে এমন স্থবিরতা মেনে নেওয়া যায় না। এটি শুধু দায়িত্বহীনতাই নয়, ইসলামের প্রতি একপ্রকার অবমাননা। এভাবে চলতে থাকলে সমাজে ধর্মীয় শিক্ষা ও নৈতিকতার অবক্ষয় দেখা দেবে।
প্রাক-প্রাথমিক ও সহজ কোরআন শিক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষকদের পক্ষে পারুল খাতুন ও মফিদুল ইসলাম বলেন, “আমরা শিক্ষক হিসেবে যথাসাধ্য চেষ্টা করি শিক্ষাদানে।তবে শিক্ষার্থীদের অনিয়মিত উপস্থিতি আমাদের শিক্ষাদানে প্রভাব ফেলছে। আমরা দায়িত্ব পালনে উদাসীন নই বরং শিক্ষার্থীদের ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি আকৃষ্ট করতে প্রতিনিয়ত চেষ্টা করছি।
কালাই উপজেলার ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপক আব্দুর রউফ জানান, “শিক্ষকদের দায়িত্বহীনতার বিষয়ে আমরা অবগত হয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কালাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীমা আক্তার জাহান বলেন, “ধর্মীয় শিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষকদের এমন দায়িত্বহীনতা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা এ বিষয়ে অবগত হয়ে ইতিমধ্যে তদন্ত শুরু করেছি।বিষয়টি নিয়ে কোনো ধরনের অবহেলা সহ্য করা হবে না।
আপনার মতামত লিখুন :