কখনো মাদকবিক্রেতা, কখনো চুরি-বাটপারি আবার মাঝে মাঝে নিরিহ মানুষদের ধরে মারধর-বকাবকিসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত তিনি। গত ৫ আগস্টের পর তার দৌরাত্ব আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। বলছি পিরোজপুর জেলার শংকরপাশা ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা বেল্লাল ফরাজীর কথা। তার নিজ এলাকা চালনা গ্রামে কয়েক জনের একটি চক্র বানিয়ে প্রায়ই সংঘটিত করেন মাদককারবারী, চুরি, মারামারিসহ বিভিন্ন অপরাধ। এর কারণে গত কয়েক বছরে জেলে গেছেন একাধিক বার। মাদক বিক্রির সময় ডিবি পুলিশের হাতে ধরা পড়ে জেল খাটেন মাসের পর মাস। তার নামে মাদক, চুরি ও মারামারিসহ কমপক্ষে ৪টি মামলা হয়েছে। সম্প্রতি স্বেচ্ছাসেবক দলের এই নেতা বেল্লাল ফরাজী তার দলবল নিয়ে হামলা চালায় চালনা গ্রামের একটি নিরিহ পরিবারের উপর। এ হামলায় ঐ পরিবারের বেশ কয়েকজন আহত হয়, ভুক্তভোগী পরিবার থানায় মামলা দায়ের করেছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
হামলার শিকার মো. মাহফুজ শেখ বলেন, প্রথমে আসামি বেল্লাল ফরাজী আমার ছোট ভাই গায়ে হাত দেয়। সে বিষয়ে আমি জানতে চাইলে বিল্লালের সাথে আমার কথা কাটাকাটি বাধে। তার ঠিক কিছু সময় পরে সন্ত্রাসী বিল্লাল ও তার অপরাধ জগৎ এর সঙ্গীদের নিয়ে আমার বাড়িতে হামলা-ভাংচুর ও লুটপাট চালায়, সেই সময় নগত টাকা ও স্বর্ণলষ্কার নিয়ে যায়।
তিনি আরো বলেন, হামলার সময় ঘরে আমার স্ত্রী ছিলো, সে ছয় মাসের গর্ভবতী তার পেটেও লাথি মারা হয়েছে। তার চেকাপ চলছে হাসপাতালে। এঘটনায় পিরোজপুর সদর থানায় মামলা দায়ের করেছি। তবে সে ক্ষমতাশালী দলের কর্মী হওয়ায় এখনো তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আমরা পুলিশ প্রশাসনের কাছে বিচারের দাবি জানাই। এঘটনায় গ্রামবাসীর মধ্যে বিক্ষোভ তৈরি হয়েছে। গ্রামবাসীরা সন্ত্রাসী বেল্লাল ফরাজীর বিচার চেয়ে জেলা বিএনপি ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাদের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন।
গ্রামের মুদি দোকানদার মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, বেল্লাল ফরাজী এর আগে গ্রামের অনেক ময়মুরুব্বিদের সাথে বেয়াদবি করেছে। অনেককে মারধর করেছে। সে চুরি-মাদক বিক্রির অপরাধে একাধিক বার জেল খেটেছে। আমরা গ্রামবাসীরা তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ।
আরেক গ্রামবাসী মো. মাকসুদুল বলেন, নতুন বাংলাদেশে এসব ছোটখাটো পাতি নেতাদের থামানো না গেলে এদের অপরাধ দিন দিন বৃদ্ধি পাবে। স্বেচ্ছাসেবক দলের নাম ভাঙিয়ে একের পর এক অপরাধ করে যাচ্ছেন। আমরা এলাকাবাসী ওর বিচার চাই।
এদিকে অভিযুক্ত ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের এই নেতা বেল্লাল ফরাজীর দাবি, তিনি কাউকে মারধর করেননি, উল্টো তাকে মারধর করেছে। তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সব মিথ্যা।
জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আসাদুজ্জামান মিঠু জানান, শংকরপাশা ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক বেল্লাল ফরাজীর মাদক, চুরি বা মারামারির মত অভিযোগে যুক্ত কিনা বা তা বিরুদ্ধে যদি এধরনের মামলা হয়ে থাকে আমরা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল খোঁজখবর নিয়ে তাকে দল থেকে বহিস্কার করবো।
আর জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সাইদুল ইসলাম কিসমত বলেন, বিএনপি বা অংঙ্গ সংগঠনের যদি কোনো ব্যক্তি দলীয় পরিচয়ে এমন অসামাজিক অপরাধে জড়িত থাকে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা লিখিত কোনো অভিযোগ তার (বেল্লাল ফরাজী) বিরুদ্ধে পাইনি।
পিরোজপুর সদর থানার ওসি মো. সোবাহান বলেন, বেল্লাল ফরাজীর বিরুদ্ধে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তদন্ত চলছে, তদন্ত শেষে দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে। বেল্লাল ফরাজীর বিরুদ্ধে আগেরও একাধিক মামলা রয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :