পল্লীকবি জসীম উদ্দীনের `ধানক্ষেত` কবিতায় চিত্রিত হয়েছে মাঠ জুড়ে পাঁকা ধান ক্ষেতের এমনি দৃশ্য। তিনি লিখেছেন-‘‘পথের কিনারে মোর ধানক্ষেত, সবুজ পাতার পরে, সোনার ছড়ায় হেমন্তরানী সোনা হাসিখানি ধরে। মাঝে মাঝে এর পাকিয়েছে ধান, কোন খানে পাকে নাই, সবুজ শাড়ি অঞ্চলে যেন ছোপ লাগিয়েছে তাই।”
ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার ফসলের মাঠ জুড়ে কৃষকের ফলানো ধানের ছড়াছড়ি। রোপা আমন ধানের চনমনে গন্ধে মাতোয়ারা কৃষক, ব্যস্ত কৃষাণী। দিগন্তজোড়া মাঠ সেজেছে সোনালী- হলুদ ধানের রঙে। ঘাম ঝরানো স্বপ্নের সোনার ফসল ঘরে তুলতে শুরু করেছেন কৃষক। ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন কৃষাণী এবং তাদের পরিবারের ছোট ছেলেমেয়েরাও। ধান নিয়ে তারা মেতেছেন এক অন্যরকম আনন্দ উৎসবে।
কৃষাণী বাড়ীর আঙ্গিনায় ধান শুকাতে তা গোবর-মাটি দিয়ে প্রস্তুত করছেন। ধান মাড়াইয়ের পর কৃষাণী রোদে শোকাচ্ছেন। রাত জেগে ধান সিদ্ধ করছেন। দিনে আবার সিদ্ধ ধান রোদে শোকাচ্ছেন।যেন দম ফেলার সময় নেই কৃষক, কৃষাণীর।
এই ধান বিক্রির পর কৃষাণীর গায়ে উঠবে নতুন শাড়ি, শিশুরা পাবে ভালো মানের খাবার, রঙিন জামা। কৃষাণ-কৃষাণির বাড়ি বাড়ি শুরু হবে পিঠা-পায়েস, ক্ষির, ফিরনি ও নানা রকমের খাবারের মহোৎসব।নতুন জামাইয়ের আগমনে মুখরিত হয়ে উঠবে শ্বশুরালয়।
অনুকূল আবহাওয়া, কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও মাঠ পর্যায়ের তদারকির কারণে চলতি রোপা-আমন মৌসুমে ময়মনসিংহের নান্দাইলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ধান উৎপাদন হবে বলে আশা কৃষি বিভাগের। আমন ধান আবাদে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি কৃষকদের চাষের প্রশিক্ষণ দিয়েছে কৃষি বিভাগ। তবে চলতি মৌসুমে উচ্চ ফলন ও হাইব্রিড ধান আবাদ লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করার অন্যতম কারণ।
উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায়, এ বছর নান্দাইলে ১৩টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় ২২ হাজার ৪১০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধান আবাদ করা হয়েছে। এরমধ্যে ৩০টি রাজস্ব প্রদর্শনী রয়েছে।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, উৎসব মুখর পরিবেশে চারিদিকে আমন ধান কাটা শুরু হয়েছে। মাঠে মাঠে সোনার ধান দেখে হাসি ফুটছে কৃষকের মুখে।দিনরাত হাড়ভাঙা পরিশ্রম করছেন কৃষকরা।সকালে কাচি হাতে বের হয়ে ধান কাটা শেষে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে আসেন কৃষক।কাটা ধান জমিতেই বিছিয়ে রাখছেন। ধান শোকানোর পর ধান ভাঙার মেশিন দিয়ে ধান মাড়াই করছেন। মনের আনন্দে কৃষাণী সেই ধান ঘরে তুলছেন।এবার আমন ফলনের রেকর্ড ছাড়াবে বলে আশা করেন স্থানীয় কৃষি বিভাগ ও কৃষকরা।
উপজেলার বীরকামট খালী, লোহিতপুর, লক্ষীপুর গ্রামের চাষি মুজিবর, আলম, রোকন, সেলিমসহ অনেকেই জানান,এইবার রোপা আমনের বাম্পার ফলনে তারা বেজায় খুশী।
কৃষক মিলন, দুলাল, শহিদ বলেন, আমনের বাম্পার ফলনে আমরা খুব খুশী। অহন ধান কাটা শুরু অইছে। আমরা খুব ব্যস্ত। ফলন খুব ভালো অইছে।
উপজেলার বীরবেতাগৈর ইউনিয়নের বীরকামট খালী গ্রামের ধান কাটার শ্রমিক সেলিম, রাজ্জাক, শহীদ, শফিকুল বলেন, অহন আমরা আমন ধান কাটা শুরু করছি। ৭শ, ৮শ টাকা কাঠা ধরে ধান কাটতাছি। বর্তমানে এই টাকায় আমরার সংসার চলেনা।
নান্দাইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাইমা সুলতানা বলেন, এ বছর আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। সময়মত সার ও বীজের পর্যাপ্ত সরবরাহ, মাঠ পর্যায়ে তদারকি, কৃষকদের বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শের কারনে লক্ষমাত্রার চেয়ে ফলন বেশি হয়েছে। বাজারে ধানের দাম ভালো। এভাবে ধানের দাম থাকলে নান্দাইলের কৃষকরা অনেক লাভবান হবেন।
আপনার মতামত লিখুন :