ঢাকা সোমবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০২৫

তুলশীগঙ্গা নদী পুন:খননে সুফল পাচ্ছে কৃষকরা

আক্কেলপুর (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: জানুয়ারি ১২, ২০২৫, ০৮:৫৪ পিএম

তুলশীগঙ্গা নদী পুন:খননে সুফল পাচ্ছে কৃষকরা

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

তুলশীগঙ্গা নদী পুন:খনন করার ২৮ বছর পর বাঁধ নির্মাণের সুফল পাচ্ছে জয়পুরহাটের আক্কেলপুর কৃষকেরা। ১৯৯৫ সালে নদীর উভয় তীরে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করা হলেও নদী খনন না হওয়ায় সুফল পাননি কৃষকরা। গভীরতা না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই নদীর পানি মাঠে ঢুকে প্লাবিত হয়ে নষ্ট হতো এলাকার হাজার হাজার হেক্টর আমন ও রবি শস্যের ক্ষেত। সেই থেকে নদী খননের দাবি ছিল ভুক্তভোগী কৃষকদের। অবশেষে তুলশীগঙ্গা নদী পুনঃখনন করার পর পাল্টে গেছে এলাকার সেই চিত্র। খননের পর ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধিসহ বর্ষার পানি দ্রুত নদী পথে অপসারিত হওয়ায় নদীর দুই তীরে ফসলের মাঠগুলোতে এখন চাষ হচ্ছে শীত কালীন সবজি। আমন ও শাক সবজি  ৪৫ হেক্টর জমিতে এবার নদীর পানি দিয়ে চাষ করতে পেরে খুশি নদী তীরবর্তী কৃষকরা।

সরেজমিনে নদী তীরবর্তী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নদী পুন:খননের ফলে উভয় তীরের জমিতে ব্যাপকহারে মুলা, আলু, ‍ফুলকপি বাঁধাকপিসহ শীতকালীন শাকসবজি চাষ করা হয়েছে। চারিদিকে সবুজের সমারোহ। বিশেষ করে উপজেলার মাদারতলীর ঘাট, আওয়ালাগাড়ী, সোনামুখী, বিহারপুর, কেশবপুর হাস্তাবসন্তপুর, জাফরপুর, অনন্তপুর, শ্রীরামপুর, গুনিপুর মাঠের জমিতে গত বছর থেকে আমন ধানসহ শীতকালীন সবজি চাষ করছেন কৃষকরা। অথচ নদীর গভীরতা না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতে গত ২৮ বছর ধরে নদীর দু‍‍`পাশের এসব মাঠের প্রায় ৩শত ৪০ বিঘা জমি বর্ষার পানিতে ডুবে থাকায় আমন ধান চাষ করতে পারেনি কৃষকরা। খননের ফলে ফলে বর্ষার পানি নদী পথে দ্রুত অপসারিত হওয়ায় বর্তমানে প্লাবিত হচ্ছে না ফসলের মাঠ। ফলে খুব সহজেই শীতকালীন সবজি চাষ করতে পারছেন তুলশীগঙ্গা নদীর দু‍‍`পারের কৃষকরা।

পানি উন্নয়ন বোড় থেকে জানা যায়, বন্যা নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে ১৯৯৫ সালে তুলশীগঙ্গা নদীর আক্কেলপুর উপজেলা অংশের উভয় তীরে দীর্ঘ বাঁধ নির্মাণ করা হয়। একই সাথে নদীর পানি ধরে রেখে শুষ্ক মৌসুমে ফসল সেচের জন্য ১ থেকে ৪ জল কপাট বিশিষ্ট ১৩টি সুইসগেটও নির্মাণ করা হয়। বাঁধের সুফল পেতে নির্মাণের পর থেকে তলশীগঙ্গা নদী পুন:খননের দাবি জানিয়েআসছিল এলাকাবাসী। অবশেষে ২০২০ সালে জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবির বহরমপুর থেকে আক্কেলপুরের দক্ষিণ গণিপুর পর্যন্ত তুলশীগঙ্গা নদীর ৫৪ কিলোমিটার অংশ পুনঃখননের উদ্যোগ নেয় জয়পুরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ড। দুই বছর মেয়াদে ২০২২ সালে সম্পন্ন হয় নদী পুনঃখনন প্রকল্পের কাজ। যেখানে ব্যয় হয় ৬০ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের জরিপ সূত্রে জানা গেছে, তুলশীগঙ্গা নদী পুন:খনন প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে উপজেলায় ৪৫হেক্টর জমির ফসল উৎপাদনে কৃষকরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে লাভবান হচ্ছেন।

সূত্রটি জানায়, খননের পর নদীর বর্তমান প্রস্থ প্রায় ৪৫ মিটার এবং গভীরতা ৬ মিটার। আর এ ৫ মিটারে পানি থাকবে সব সময়। বাঁধের সুইস গেটগুলো চালু থাকায় বর্ষা মৌসুমে নদীর পানি আর মাঠে ঢুকতে পারছে না। ফলে নদী তীরবর্তী ফসলের মাঠগুলো প্লাবিত না হওয়ায় এখন আমন ও শীতকালীন চাষ নিয়ে দুশ্চিন্তা দূর হয়েছে কৃষকদের।

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আক্কেলপুর উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী মো. মুনসুর আলী সরদার বলেন, নদী পূন: খননের ফলে এউপজেলার নদী তীরবর্তী কৃষকরা পানি সেচের সুধিবা পাচ্ছেন। সরকারি হিসেব অনুযায়ী উপজেলায় ২টি বিদ্যুৎ ও ৩০টি ডিজেল চালিত শ্যালো ও ওয়াটার পাম্প (এলএলপি) এর মাধ্যমে ৩শত ৫২জন কৃষক তুলশীগঙ্গা নদী থেকে সেচের আওতায় রয়েছে। নদীতে পানি সংরক্ষণের জন্য উপজেলার শেষ সীমানা শ্রীরামপুর এলাকায় একটি রাবার ড্যাম স্থাপন হলে এলাকার কৃষকগণ আরও উপকৃত হবেন।

উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. ইমরান হোসেন বলেন, আগে বর্ষা মৌসুমে নদী তীরবর্তী আক্কেলপুরের বিস্তৃর্ণ ফসলের মাঠ পানিতে ডুবে থাকতো। এতে আমন ফসল ও শীতকালীন সবজি চাষ ব্যহত হত। নদী খননের ফলে নাব্যতা বৃদ্ধি পাওয়ায় সে অবস্থা এখন আর নেই। বরং এখন উপজেলায় নদীর তীরবর্তী প্রায় ৪৫ হেক্টর জমিতে এলএলপি (লো লিফটিং পাম্প) মাধ্যমে নদীর পানি ব্যবহার করে ব্যাপকহারে শীতকালীন শাক-সবজি ও অন্যান্য ফসল চাষ করা হচ্ছে।

নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, তুলশীগঙ্গা নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় নদীর দু‍‍`পাশের ফসলের জমিগুলো বর্ষার পানিতে জলাবদ্ধ হয়ে থাকতো। এতে জেলার বিশাল অঞ্চল জুড়ে আমনসহ শুষ্ক মৌসুমে রবি শস্য ও অন্যান্য ফসল উৎপাদন ব্যাহত হতো। এজন্য নদীর ৫৪ কিলোমিটার অংশ পুন:খনন করা হয়েছে। তার মধ্যে আক্কেলপুর উপজেলায় প্রায় ২০ কিলোমিটার। এখন জলাবদ্ধতা বা বন্যার আশঙ্কা দূর হয়েছে। কৃষকরা আমন ও বর্তমানে শীতকালীন সবজি চাষ করতে পারছে।

তিনি আরও বলেন, বর্ষাকালে অনাবৃষ্টির করাণে সম্পূরক সেচ প্রদানের উদ্দেশ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় এলএলপির (লো লিফটিং পাম্প) এর মাধ্যমে সম্পূরক সেচ ব্যবস্থা আনার জন্য ডিজাইনের প্রক্রিয়াধীন আছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড আক্কেলপুর উপজেলার নদীর শেষ প্রান্ত দক্ষিণ গুনিপুরে নদীর মাঝ খানে পানি নিয়ন্ত্রণ অবকাঠামো (হওয়ার কাম রেগুলেটর) এর ডিজাইন প্রণয়নের ক্যারিগরি কমিটি গঠন করা হয়েছে।  

আরবি/জেডআর

Link copied!