দিনাজপুরের বীরগঞ্জে মাঠজুড়ে এখন সোনালি ধানের উৎসব। শুরু হয়েছে আমন ধান কাটার মৌসুম। দলবদ্ধভাবে এখন ধানকাটা ও মাড়াইয়ের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা।
পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও ধান কাটার কাজে নিয়োজিত হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবার উপজেলায় আমন মৌসুমে রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল প্রায় ২৯ হাজার ৫৭৫ হেক্টর জমিতে আমণ ধানের চাষ করেছে কৃষকরা। লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয় ২৯ হাজার ৫৭৮ হেক্টর। এর মধ্যে ব্রি ধান-৪৯, ব্রি ধান-৫১, ব্রি ধান-৭৫, ব্রি ধান-৮৭, বেনা ধান-৭, বেনা ধান-১৭, বেনা ধান- ২০, ক্ষীর কোন ধান, স্বর্ণা ধান চাষ করেছে কৃষকরা। ধানসহ অন্যান্য ফসল কাটা ও সংগ্রহের কাজে কৃষকরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। কষ্টের ফসল ঘরে তোলার আনন্দে কৃষকদের মনে বেশ উচ্ছাস দেখা যাচ্ছে, কারণ এই ফসলের উপরই নির্ভর করছে তাদের বছরের আয়ের একটি বড় অংশ। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ইতিমধ্যে অনেক কৃষকরা তাদের মাঠের পাকা আমণ ধান কেটে ঘরে তুলেছে। কৃষকরা জানান, ভালো রৌদ্র হওয়ার ফলে আমরা ধান কাটতে পারছি। উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামে কৃষকরা আমন ধানের আবাদ করেছে। প্রতি বিঘাতে ১৬/১৭ মণ ধান হবে বলে কৃষকরা ধারণা করেছে। উপজেলার শিবরামপুর, পলাশবাড়ী, শতগ্রাম, পাল্টাপুর, সুজালপুর, নিজপাড়া, মোহাম্মদপুর, ভোগনগর, সাতোর, মোহনপুর ও মরিচা ইউনিয়নের বেশ কয়টি গ্রাম ঘুরে দেখা
গেছে পুরুষের পাশাপাশি নারীরা ধান কাটা কাজে ব্যস্ত সময় পার করেছেন।
সুজালপুর ইউনিয়নের বোয়ালমারী গ্রামের সতীশ বর্মন বলেন, গত বছরের তুলনায় এবছরে বৃষ্টির পানি কম থাকলেও ফলন ভালো হয়েছে। বিঘা প্রতি জমিতে ১৮/১৯ হাজার টাকা খরচ করে প্রায় ১৭/১৮ মণ ধান পাবে বলে তারা ধারণা করেছে। এছাড়া পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও শ্রম হিসাবে কাজ করে থাকে।
শিবরামপুর গ্রামের কৃষক জালাল উদ্দীন বলেন, জমিতে আমণ ধানের চাষ করেছি। ধানের ফলন দেখে আমি আনন্দে আত্মহারা হয়েছি। এবছরে বৃষ্টির পানি কম থাকলেও প্রতি বিঘাতে ১৬/১৭ মণ ধান আশা করছি। বাজারের দরও ভালো। আমাদের প্রতি বিঘা জমিতে ধান রোপন শুরু থেকে ঘরে তোলা পর্যস্ত প্রায় ১০/১২ হাজার টাকা খরচ হলেও আনন্দ পাচ্ছি। জমিতে মটরের সেচ দিয়ে খরচ বেশী হলেও ধানের ফলন হয়েছে।
কৃষি শ্রমিক পদ্মা রায় বলেন, প্রতিদিন সকাল ৭ টা থেকে ১ টা পর্যন্ত কাজ করলে ৫ শত টাকা মজুরি পাই, আর দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত দেড়শত টাকা। আমাদের মতো গরীব পরিবারের মহিলাদের জন্য ঘরে বসে থাকা সম্ভব নয়, তাই আমরা খেটে অর্থ উপার্জন করে স্বামী সন্তানদের নিয়ে সুখে আছি। কাজের মধ্যে একটু শান্তি ও আনন্দও খুঁজে পাই।
তিনি আরো বলেন, আমরা গরীব ঘরের মেয়ে, তাই সবসময় কাজ করতে হয়। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত শ্রম দিয়ে দিনশেষে মোট ৫০০/৬০০ টাকা আয় হয়। ঘরে বসে থাকতে পারি না, কিন্তু এই কাজের মাধ্যমে একটু সুখও পাই। পরিবারকে নিয়ে অনেক ভালো আছি।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শরিফু ইসলাম জানান, এ বছর বীরগঞ্জ উপজেলায় ২৯ হাজার ৫শত ৭৫ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে, এবং আবহাওয়া সহায়ক হওয়ায় কৃষকরা ভালো ফলন পেয়েছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধানের ফলন ভালো হয়েছে। কিছু এলাকায় ধান কেটে ঘরে তোলা শুরু হয়েছে এবং কৃষকরা খুশি হয়ে তাদের শ্রমের ফল উপভোগ করছেন।
আপনার মতামত লিখুন :