ঢাকা শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪

পিতা পুত্রের হাঁসের খামার, মাসে আয় অর্ধ লাখ

সুজন মৃধা, কলাপাড়া

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৬, ২০২৪, ০৮:২৪ পিএম

পিতা পুত্রের হাঁসের খামার, মাসে আয় অর্ধ লাখ

পিতা পুত্রের হাঁসের খামার, মাসে আয় অর্ধ লাখ। ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

দেশীয় জাতের হাঁসের খামার করে সফল হয়েছে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের কুমিরমারা গ্রামের বাসিন্দা মোস্তফা জমাদ্দার। দেশীয় খাবার ধান ও শামুক খাইয়ে হাঁস পালন করে হয়েছে লাখপতি। ১৬ টাকা পঞ্চাশ পয়সা করে প্রতি ৩ থেকে ৪ দিন পর পর ৪ থেকে ৫ শত ডিম বিক্রি করে তারা। এতে মাসে প্রায় অর্ধ লক্ষ টাকা আয় হয় তার।

জানা গেছে, গ্রামিন পরিবেশে দেশীয় পদ্ধতিতে খামারটি পরিচালনা করছেন মোস্তফা জমাদ্দার। এতে সহযোগিতা করছেন তার পুত্র ইমাম জোমাদ্দার। তারা পিতা পুত্র মিলে নিজ বাড়ির দুটো পুকুরে তিন শতাধিক দেশী হাঁস পালন করেছেন। হাঁসগুলো সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পুকুরের মধ্যেই ঘোরাফেরা করে। এ ক্ষেত্রে পুকুরে নেট জাল দিয়ে চতুরপাশ আটকে দিয়েছেন তারা।

মোস্তফা জমাদ্দার জানান, তিন শতাধিক হাঁস থেকে তারা প্রতি ৪ দিন পরপর ৪ থেকে ৫ শত ডিম বিক্রি করেন। খামারের শুরুর দিকে প্রতি ৪ দিন পরপর ৭ থেকে ৮ শত ডিম বিক্রি করতেন। হাঁসগুলো কিছুটা বয়স হওয়ায় বর্তমানে ডিমের পরিমান কমে গেছে। বাজারে দাম চড়া থাকায় প্রতিটি ডিম বর্তমানে ১৬.৫০ পয়সা হারে কলাপাড়া পৌর শহরের পাইকারি দোকানে বিক্রি করেন।

হাঁস পালন পদ্ধতি সম্পর্কে মোস্তফা জোমাদ্দার বলেন, হাসগুলো শুধু শামুক আর ধান খাওয়ার কারনে শারীরিক দিকদিয়ে সুস্থ সবল থাকে। যে কারনে ডিমের উৎপাদন ও সাইজ ভালো হয়। এ ছাড়া খোলামেলা ভাবে একটি বদ্ধ জায়গায় থাকার কারনে হাঁসগুলো পার্শবর্তী অন্যান্য হাসের সাথে মিলতে পারেনা, এতে রোগ বালাই কম হয়।

খামারী ইমাম জোমাদ্দার বলেন, প্রতি মাসে এ হাঁসের খামার থেকে গড়ে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা ইনকাম করছেন তারা।

তিন শতাধিক হাঁস পালনে প্রতিদিনের খরচের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেহেতু হাঁস গুলো দেশি তাই দেশীয় পদ্ধতিতেই আমরা পালন করি। খাবার হিসেবে ব্যবহার করছেন ধান আর শামুক। তিনশত হাঁসকে প্রতিদিন সর্বোচ্চ ২০ কেজি ধান ও ৩০০শ কেজি শামুক খাওয়াচ্ছেন। আর এ শামুকগুলো বিনামূল্যে সংগ্রহ করছেন তার বাড়ির পার্শ্ববর্তী পাখিমারা-কুমির মারা খাল থেকে। এ খালে নৌকা ও ঝাঁকিজাল দিয়ে কখনো মোস্তফা জমাদ্দার আবার কখনও ইমাম জমাদ্দার নিজেরাই সংগ্রহ করছেন শামুক। প্রতিদিন সকাল বিকাল দুইবার শামুক খাওয়ান হাঁসগুলোকে। এতে তাদের আলাদা কোন খরচ করতে হয় না।

খামারী ইমাম জোমাদ্দার আরও বলেন, তিনি বিদেশ যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু নানা জটিলতায় তা আর যাওয়া হয়ে ওঠেনি। পরবর্তীতে বাবার কাজে অংশগ্রহণ করে স্বল্প পুঁজিতে লাভের পরিমান দেখে খামার বড় করার পরিকল্পনা করেছেন। তাই সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা ও অর্থ সহায়তা চান তারা।

ক্রেতা মো. ফারুক খান বলেন, এখন দেশি ডিমের যে দাম তাকে প্রত্যেকে কমবেশি বাড়িতে হাঁস পালন করলে নিজেদের চাহিদা মিলানো সম্ভব।

উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা মো. মারুফ ইসলাম বলেন, সম্প্রতি তিনি খামারটি পরিদর্শন করেছেন। দেশীয় পদ্ধতিতে খামারটি পরিচালনা করায় এর বায়োএবিলিভিটি ঠিক রয়েছে। এতে হাঁসের রোগ কম হওয়ায় খামারি বেশ লাভবান হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, হাঁসের প্রধান খাবার শামুক, যা তারা প্রতিদিনই হাঁসগুলোকে খাওয়াচ্ছেন। যে কারনে শারীরিক দিক দিয়ে হাঁসগুলো সবল ও ডিম উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি অন্যান্য খামারিদের এ পদ্ধতি অনুসরণ করার বিষয়ে পরামর্শ দেন।

আরবি/জেডআর

Link copied!