ঢাকা মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৪

যমুনায় ১০ মাস সার উৎপাদন বন্ধ, মানবেতর জীবন শ্রমিক পরিবারের

সরিষাবাড়ী (জামালপুর) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: অক্টোবর ২২, ২০২৪, ০৫:২৫ পিএম

যমুনায় ১০ মাস সার উৎপাদন বন্ধ, মানবেতর জীবন শ্রমিক পরিবারের

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

দেশের সর্ববৃহৎ যমুনা সারকারখানায় গ্যাস সংকটের কারণে দীর্ঘ ১০ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে ইউরিয়া উৎপাদন। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় কারখানার মুল্যবান যন্ত্রাংশ মরিচা ধরে নষ্ট হওয়ার উপক্রম হতে চলেছে। আর কারখানার সাথে জড়িত সহস্রাধিক শ্রমিক পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।  কারখানা সুত্রে জানা যায়, ১৯৯১ সালে জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার তারাকান্দিতে প্রতিষ্ঠিত হয় যমুনা সারকারখানা।

বাংলাদেশ রাসায়নিক শিল্প সংস্থা (বিসিআইসি) নিয়ন্ত্রণাধীন কেপিআই-১ মানসম্পন্ন যমুনা সার কারখানাটি প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে দৈনিক ১ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন ইউরিয়া উৎপাদন করে আসছিল। কারখানার নিরবিচ্ছিন্ন উৎপাদনের জন্য দৈনিক ৪২-৪৩ পিএসআই গ্যাসের প্রয়োজন। গ্যাসের চাপ স্বল্পতা ও বিভিন্ন ত্রুটির কারনে উৎপাদন কমে বর্তমানে ১ হাজার ২০০ মেঃ টন ইউরিয়া উৎপাদন হয়। সাম্প্রতি ঘোড়াশাল-পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার কোম্পানিতে সার উৎপাদন নিরবিচ্ছিন্ন রাখার সিদ্ধান্ত নেয় বিসিআইসি। এ জন্য সেখানে পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে যমুনা সারকারখানায় গত ১৫ জানুয়ারী থেকে গ্যাসের চাপ কমিয়ে দেয় তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন আন্ড ডিস্ট্রিবিউশর কোম্পানি। এর পর থেকেই যমুনায় ইউরিয়া উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় কারখানার মুল্যবান যন্ত্রাংশ মরিচা ধরে নষ্ট হওয়ার উপক্রম হতে চলেছে। দ্রুত গ্যাস সংযোগ দিয়ে বৃহৎ এ শিল্প কারখানাটি সচল রাখতে না পারলে পুরোপুরি নষ্ট হওয়ার শঙ্কায় রয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ। 

যমুনা সার কারখানা থেকে জামালপুর, শেরপুর, ময়মনসিংহ, টাংগাইল, রাজবাড়ি ছাড়াও উত্তরবঙ্গের ১৬ জেলার প্রায় আড়াই হাজার ডিলার যমুনার সার উত্তোলন করেন। দীর্ঘদিন সময় উৎপাদন বন্ধ থাকলে কারখানার কমান্ডিং এরিয়ায় সার সংকট হওয়ার শঙ্কায় আছে সার ব্যবসায়ীরা।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, যমুনার সার জমিতে ব্যবহারে ফসল বৃদ্ধি পায়। গাছও সতেজ হয়। বাইরের দেশ থেকে আমদানি করা সার জমিতে ব্যবহার করলে ফসল ভালো হয়না। জমির উর্বরতা কমে যায়। এভাবে দীর্ঘদিন যমুনা সার কারখানা বন্ধ থাকলে পূর্ব পুরুষের ব্যবহার করা এই সার সংকট হওয়ার আশংকায় স্থানীয় কৃষকরা।

কারখানার শ্রমিকরা জানান, জীবনযাপন অনেক নিম্নমানে চলে গেছে। সেই সাথে কারখানা বন্ধ থাকায় কারখানার যন্ত্রাংশও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কারখানা দীর্ঘদিন বন্ধ থাকলে একসময় চিনি, পাট শিল্পের মতো এ শিল্পও বন্ধ হয়ে যাবে বলে আশংকা করছে কারখানার শ্রমিকরা।

যমুনা সারকারখানার শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের (সিবিএ) সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুর্শেদ আলম তালুকদার সাংবাদিকদের বলেন 

ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের দোসররা এই শিল্পকে ধ্বংস করতে গ্যাস সংকটের অজুহাতে যমুনা সারকারখানায় গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দেয়। এতে কারখানার সাথে জড়িত প্রায় ৩-৪ শতাধিক পরিবহন বন্ধ হয়ে যায়। পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে কারখানা বন্ধ থাকায় এ পরিবহন শ্রমিক ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। যমুনা সার কারখানায় গ্যাস সংযোগ দিয়ে পরিবহন শ্রমিক, ব্যবসায়ীদের মানবেতর জীবনযাপন থেকে উদ্ধার করবে এমনটাই দাবি এ নেতার।

যমুনা সার কারখানার উপপ্রধান প্রকৌশলী (রসায়ন) ফজলুল হক জানান, গ্যাস সংযোগ না থাকায় দীর্ঘ ১০ মাসের বেশি সময় ধরে কারখানা বন্ধ, কারখানায় বড় ধরনের কোন ত্রুটি নেই, ছোট ছোট যা ছিল তা মেইনটেন্স করা হয়েছে আগেই। গ্যাস পেলে কারখানা চালু করা হবে বলে জানান তিনি।

আরবি/জেডআর

Link copied!