ঢাকা শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

রূপগঞ্জে গাজী টায়ার ফ্যাক্টরিতে আগুন, নিখোঁজ ১৭৬, উদ্ধার ১৪

আরিফ হাসান আরব, রূপগঞ্জ

প্রকাশিত: আগস্ট ২৬, ২০২৪, ০৭:১১ পিএম

রূপগঞ্জে গাজী টায়ার ফ্যাক্টরিতে আগুন,  নিখোঁজ ১৭৬, উদ্ধার ১৪

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার রুপসী এলাকায় অবস্থিত সাবেক পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর মালিকানাধীন গাজী টায়ার ফ্যাক্টরিতে দ্বিতীয় বারের মতো আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। গত (২৫ আগস্ট) রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ফ্যাক্টরির ভেতরে থাকা ৬তলা বিশিষ্ট একটি ভবনে আগুন লাগার সোমবার (২৬) আগস্ট সোমবার বেলা ৩ টায়ও নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। আগুন নেভানোর জন্য ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট টানা কাজ চালিয়ে যাছেন। একদল দুর্বৃত্ত ফ্যাক্টরিতে থাকা মালামাল লুটপাট চালিয়ে যাচ্ছেন। লুটপাট করতে গিয়ে এখন পর্যন্ত ১৭৬ জন  ব্যক্তি নিখোঁজ বলে দাবি করেছেন নিখোঁজদের স্বজনরা। ইতি মধ্যে স্বজনরা ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাদের কাছে নিখোঁজদের নাম ঠিকানা দিয়েছেন।

স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, সাবেক পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী এবং সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীরের মালিকানাধীন রূপসী এলাকায় গাজী টায়ার কারখানা ও কর্ণগোপ এলাকায় গাজী পাইপ এবং ট্যাংক কারখানা রয়েছে। এ দুটি প্রতিষ্ঠানে প্রায় ২৫ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। গত ০৫ আগস্ট স্বৈরাচারি আওয়ামীলীগ সরকারের পতন হওয়ার পর বিক্ষুব্ধ শত শত লোকজন ও লুটপাটকারীরা লাঠিসোটা নিয়ে রূপসী এলাকায় গাজী টায়ার কারখানা ও কর্ণগোপ এলাকায় গাজী পাইপ এবং ট্যাংক কারখানায় প্রবেশ করে ভাংচুর ও মালামাল লুটপাট শুরু করেন। এক পর্যায়ে ওই দুটি কারখানায় আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। পরে রূপগঞ্জের নবকিশোলয় হাইস্কুলের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী রোমান মিয়া হত্যা মামলার আসামী গোলাম দস্তগীর গাজীকে ঢাকার শান্তিনগর এলাকা থেকে গ্রেফতার এবং নারায়ণগঞ্জ আদালতে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে সোপর্দ করার পর আদালত ৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এ খবরের পরই রোববার সন্ধ্যার দিকে কয়েক শতাধীক লোকজন লাঠিসোটা নিয়ে রূপসী গাজী টায়ার কারখানার সামনে ও ভেতরে ঢুকে পরে। এরপর আবারো ভাংচুর ও লুটপাট শুরু করেন। স্থানীয় বেশ কিছু বিএনপি নেতাকর্মীরা এসে ভাংচুর ও লুটপাটে বাঁধা দিলে তা না মেনে ভাংচুর ও লুটপাট চলতেই থাকে। এক পর্যায়ে রাত সাড়ে ৯টার দিকে কারখানার ভেতরের ৬তলা ভবনের ভেতরে প্রবেশ করেন কয়েক শতাধীক লোকজন। ওই ভবনে ক্যামিকেল ও টায়ার তৈরির কাঁচামাল ছিলো। ভবনের ভেতরে লুটপাট নিয়ে দুটি পক্ষের মাঝে হাতাহাতি ও মারপিটেয়র ঘটনা ঘটে। এসময় একটি পক্ষ ভবন ত্যাগ করলে ভবনের প্রবেশ গেট বন্ধ হয়ে যায়। এক পর্যায়ে পুরো ভবনে আগুন লেগে যায়। এসময় আগুন পুরো ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে আগুনের লেলিহান শিখা ৬০ থেকে ৮০ ফুট উঁচুতে উঠে পড়ে। ভবনের ভেতরে আটকা পড়া অনেকেই স্বজনদের ফোন করে বাঁচানোর জন্য আকুতি জানায় বলে বেশ কয়েকজন স্বজন দাবি করেছেন। খবর পেয়ে ঢাকার ফুলবাড়িয়া ফায়ার সার্ভিস, ডেমড়া ফায়ার সার্ভিস, কাঞ্চন ফায়ার সার্ভিস, কাঞ্চন ফায়ার সার্ভিস, আড়াইহাজার ফায়ার সার্ভিসসহ ১২টি ইউনিট কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। বেলা ৩টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। এদিকে, ভবনে প্রবেশ করে নিখোঁজ হয়েছেন এমন ব্যক্তির খোজে গাজী টায়ার কারখানায় ভির করছেন স্বজনরা। এখন পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের কাছে ১৭৬ জন নিখোঁজ ব্যক্তির তালিকা দিয়েছেন স্বজনরা। বেশির ভাগ নিখোঁজদের বাড়ি উপজেলার মিকুলী, রূপসী কাজিপাড়া, ছাতিয়ান, মুগরাকুল, কাহিনা, বরপা, মাসাবো, তারাব, বরাব, মুড়াপাড়াসহ আশ-পাশের এলাকার।

বরপা এলাকার ইকবাল হোসেন বলেন, আমার বন্ধু আলী আসাদ, আবু সাঈদ, স্বপন খাঁন, শাহিনসহ ৫ জন নিখোঁজ রয়েছে। তারা কারখানার ওই ভবনে রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঢুকে আর বের হয়নি। মোবাইল ফোনে রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত কথা হয়েছে। তখন বলেছে তারা ভবনে আটকা পড়েছে। আমাদের বাঁচান। এরপর আর ফোনে পাওয়া যায়নি।

কোনাপাড়া এলাকার রাবেয়া খাতুন বলেন, তার মেয়ের জামাই হযরত আলী গাজী টায়ার কারখানায় মালামাল নিতে আসছে। বাড়ি থেকে বলে আসছে। এখন আর তার খোজ পাচ্ছিনা। শুনছি আগুন লাগছে যেই ভবনে সেখানে আটকা পড়েছে।

মাসাবো এলাকার আসাদ মিয়া বলেন, তার ছোট ভাই বাবু মিয়া কসাইয়ের কাজ করেন। বন্ধুদের সঙ্গে গাজীর কারখানা থেকে মাল নিতে আসে। রাত ১০টা পর্যন্ত কথা হইছে এরপর থেকে আর কথা হয়নি।

বরপা এলাকার সুরাইয়া বেগম বলেন, রাত সাড়ে ৯টার দিকে আমার নাতি নিরব ও তার বন্ধু মিল্লাত মিলে টায়ার কারখানায় প্রবেশ করে। পরে যেই ভবনে আগুন লেগেছে ওই ভবনে আটকা পড়ে। এখন আর খোঁজ পাচ্ছিনা।

ভয়াবহ এই আগুনে কারখানার আশ-পাশের মার্কেট, হাটবাজার, শিল্প কলকারখানা এবং এলাকাবাসী চরম আতঙ্কে রয়েছেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপজেলা প্রশাসন, আইনশৃংখলাবাহিনী, বিএনপি নেতারা ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেছেন ।

এবিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (প্রশিক্ষক) রেজাউল করিম বলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এখন পর্যন্ত আগুন নিয়ন্ত্রণে আসেনি। নিখোঁজদের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। আগুন নেভানোর পর নিখোঁজদের ব্যপারে বলা যাবে। বেলা পাঁচটা পর্যন্ত সজনরা আমাদের কাছে ১৭৬ জন নিখোঁজের তালিকা দিয়েছেন।

বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী মনিরুজ্জামান মনির বলেন, দলীয় নাম ভাঙ্গিয়ে কেউ অপরাধ করলে সাংগঠনিক ভাবে দল থেকে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। গাজী সাহেব অপরাধ করলে তার বিরুদ্ধে প্রচলিত আইন অনুযায়ী বিচার করা হবে। কিন্তু সাধারন মানুষের রুটি রোজগারের জায়গা এই কারখানা। কারখানা ধ্বংশ করলে এখানে কর্মরত ২০ থেকে ২৫ হাজার শ্রমিক কর্মচারী কোথায় যাবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার আহসান মাহমুদ রাসেল বলেন, কেউ কোন প্রকার অরাজকতা, লুটপাট, আইনশৃংখলার অবনতি ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করলে আইনশৃংখলা বাহিনী তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নিবে। প্রচলিত আইনে সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

গাজী টায়ার ফ্যাক্টরির এডমিন ম্যানেজার সাইফুল ইসলাম বলেন, ভাঙচুর লুটপাট অগ্নিসংযোগে প্রায় দশ হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে আমরা ধারণা করছি। সরকারের সহযোগিতা পেলে ক্ষতিগ্রস্ত কারখানাটি পুনরায় চালু করা হবে।

আরবি/জেডআর

Link copied!