কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরের পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদে বড়শি শিকারীদের আনাগোনা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বড়শি শিকারীরা বড়শি দিয়ে শিকার করছেন বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছ। ফলে নদ সংলগ্ন এলাকায় উৎসব মুখর পরিবেশ বিরাজ করছে।
জানা গেছে, উপজেলার সাহেবের চর গ্রামের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ। কাক ডাকা ভোর থেকেই শুরু হয় শত শত বড়শি শিকারির আনাগোনা। বর্তমান সময়ে বড়শিতে নানান ধরনের মাছ উঠায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকাসহ পাশ্ববর্তী উপজেলা থেকেও মাছ শিকার করতে আসছেন নানা বয়সী শৌকিন শিকারী। মাছ ধরার হাতিয়ার হিসেবে সবার হাতে প্রতীয়মান হচ্ছে রঙবেরঙের চোখ ধাঁধানো অত্যাধুনিক ছিপ। ভাঙ্গন প্রতিরক্ষা বাঁধের ব্লকে বসেই নদের জলে টোপ লাগানো বড়শি ফেলে তুলে নিচ্ছেন বহু প্রজাতির ছোট বড় মাছ।
স্থানীয়রা জানান, রাতদিন শিকারীদের বড়শি দিয়া প্রতিরক্ষা বাঁধের জলের উপর ভেসে থাকা ব্লকগুলিতে বসেই চলছে মাছ শিকার।
উপজেলার ঠাডাকান্দা গ্রামের কদ্দুস মিয়া, ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইলের এনামুল হক, আরিফ, হোসেনপুর উপজেলার হাজীপুরের মাসুদ মিয়া,বোর্ডের বাজারের আল-আমিনসহ অনেকের সাথে কথা হয়, তারা বলেন আমরা সময় সুযোগ মিললেই ছুটে আসি এখানে মাছ ধরতে।
স্থানীয় বাসিন্দা এরশাদ হোসেন জানান, শীতের সময় কখনো কখনো কোনো কোনো শিকারীরা প্রচন্ড ঠান্ডায় জবুথবু হয়ে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে নদীর জলে ভেসে থাকা ফিরতিংগার (ফাৎনা) উপর, কখন মাছে ঠোকর দেয়! এ প্রতিক্ষায় কোনো কোনো সময় শীতল হাওয়া, গুরি গুরি বৃষ্টি কিংবা শৈতপ্রবাহ শিকারীর উপর দিয়ে চলে যায়, তারা কোনা অক্ষরেও টের পায়না। মনে হয় তারা যেন হিমালয়ের পাদদেশে গভীর ধ্যানে মগ্ন।
শিকারীদের রমরমা উপস্থিতিতে স্থানীয়দের নদের জলে গোসল করাটাও মুশকিলে পরিণত হয়েছে। প্রতিরক্ষা বাঁধের উপর যায়গায় যায়গায় দেখা মিলছে স্থানীয় ও আগন্তুক মৎস্য শিকারীদের।এটা অবশ্য সাহেবের চরের মানুষের সফলতা বলেও আখ্যা দেন স্থানীয় সবুজ আহমেদ,ইব্রাহিম ও খোকন মিয়া।
জলে ছিপ মেলে ফিরতিংগা বা ফাৎনার দিকে আপন মনে চাতকের ন্যায় তাকিয়ে থাকা মনমোহিনী একটি কারবার। ছিপ ফেলে মাছ ধরা পৃথিবীব্যাপী মানুষের অন্যতম একটি শখ। বাশেঁর শক্ত ও দৃঢ় কাঠিতে সূতা বেঁধে নদের পানিতে ছেড়ে দেয়া হয়। সূতার অন্য প্রান্তে থাকে লোহার তৈরী বড়শী। বড়শীতে টোপ লাগিয়ে ছিপ ফেলা হয়।মাছ টোপ গিললে সূতায় টান পড়ে এবং তখন ছিপ দ্রুত টেনে তোলা হয়। সূতার মাঝামাঝি থাকে ফাৎনা যা পানিতে ভেসে থাকে। টোপে মাছ ঠোকর দিলে ফাৎনা নড়ে ওঠে। টোপ-গেলা মাছ নড়াচড়া শুরু করলে ফাৎনা নড়তে থাকতে, ডুবু ডুবু হয়। তাতে বোঝা যায় মাছ টোপ গিলেছে। তখন ছিপ দ্রুত তুলে নিতে হয়। এভাবেই দিনভর চলছে শিকারী ও মাছের যুদ্ধ।
প্রকৃতি যখন রাতের আধার কাটিয়ে প্রাত সাজে ব্যাস্ত, পূর্ব দিগন্তে সূর্য্যি মামার তন্দ্রা মুক্ত ভাব। সেই পাখির ডাকা ভোর কাটিয়ে শুরু হয় দূরান্ত থেকে মাছ শিকারীদের আবির্ভাব। কেউবা শখে কেউবা পেশাগত কেউবা সাংসারিক মাছ চাহিদা মিটাতে বড়শি দিয়ে মাছ ধরছেন।সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত বহিরাগত অসংখ্য শিকারী দেখা যায়। আবার রাতেও কিছু শিকারীকে বড়শি দিয়া মাছ ধরতে দেখা যায়।
স্থানীয় ইউপি সদস্য কামরুজ্জামান কাঞ্চন জানান, বড়শি দিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে শিকারিরা মাছ ধরছে। প্রকৃতপক্ষে নদ-নদীর মাছ অনেক সুস্বাদু হয়।
উপজেলার সিদলা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সিরাজ উদ্দীন বলেন,এ উপজেলার সিদলা ইউনিয়নের অন্তর্গত আমার প্রিয় গ্রাম সাহেবের চরের বুক ছিরে বয়ে চলা ব্রহ্মপুত্র নদে বড়শি দিয়ে মাছ ধরার সম্রাজ্য তৈরি হয়েছে।এটা অত্যন্ত সুখকর।আমাদের এলাকার জন্য গর্বের বিষয়।
আপনার মতামত লিখুন :