সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় করতোয়া নদীতে মৎস্য অভয়াশ্রমে নির্বিবাদে মারা হচ্ছে মা মাছ। স্থানীয় লোকজন নৌকায় করে অভয়াশ্রমের নির্দিষ্ট এলাকায় বড়শি (ছিপ) ফেলে মারছে বোয়াল, রুই, চিতল, কালবাউস, আইড়সহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। উপজেলা মৎস্য বিভাগ ঘাটিনা রেল সেতু ও সড়ক সেতুর মাঝে প্রায় ৫০০ মিটার অংশে মাছের অভয়াশ্রম তৈরি করেছে। নির্দিষ্ট এলাকায় অসংখ্য লাল পতাকা দেওয়া হয়েছে। রেডজোন হিসেবে চিহ্ন নদীর এই অংশ টুকু সংরক্ষিত রাখা হয়েছে। এই অংশটির গভীরতা প্রায় ৪০ ফুট। রেডজোন অংশে মাছের নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য অসংখ্য কোঞ্চিসহ বাঁশ পোতা হয়েছে। সেখানে ফেলা হয়েছে তেঁতুলগাছের ডাল। যাতে করে মা মাছেরা এখানে নিরাপদ আশ্রয়ে থেকে ডিম দিয়ে মাছের প্রজনন বৃদ্ধি করতে পারে। নদীর রেডজোন অংশের পাশে একটি সাইন বোর্ড লাগানো আছে। সেখানে লেখা হয়েছে মৎস্য অভয়াশ্রম। এখানে মাছ শিকার নিষিদ্ধ। কিন্তু মৎস্য লোভীরা সরকারি নিয়ম না মেনে অবৈধভাবে মাছ ধরছে। উপজেলা মৎস্য বিভাগ মাঝে মাঝে অভিযান চালালেও তা খুব কাজে আসছে না।
সরেজমিনে গেলে স্থানীয় লোকজন জানান, প্রায় দেড় যুগ আগে এই নদীতে উপজেলা মৎস্য বিভাগ মাছের অভয়াশ্রম তৈরি করছে। প্রতিবছর এখানে লম্বা কোঞ্চিওয়ালা বাঁশ পোতা হয়। ফেলা হয় অসংখ্য তেঁতুলগাছের ডাল। এখানে মাছ শিকার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু এক শ্রেণির অসাধু লোক দিনে এবং রাতে সুযোগ বুঝে নৌকা নিয়ে নদীতে এসে নিষিদ্ধ এলাকায় বড়শি দিয়ে বড় বড় নানা প্রজাতির মাছ শিকার করে নিয়ে যাচ্ছে। উপজেলা মৎস্য বিভাগ থেকে মাসে কয়েকবার করে এখানে অবৈধভাবে মাছ ধরা লোকজনকে আটকের জন্য অভিযান চালালেও যেকোন উপায়ে খবর পেয়ে মৎস্য শিকারীরা নৌকা নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। মৎস্য বিভাগ থেকে এলাকার লোকজনকে ডেকে এখানে মাছ শিকার বন্ধের অনুরোধ জানানো হয়েছে। কিন্তু অবৈধভাবে মাছ ধরা মৎস্য শিকারীরা কোন নিয়মনীতি মানছেন না।
স্থানীয় বাসিন্দা নুর ইসলাম জানান, আসলে এদেশের কিছু মানুষের মধ্যে দেশ প্রেম নেই। এরা নিজের স্বার্থকে বড় করে দেখে। মৎস্য বিভাগ লাখ লাখ টাকা খরচ করে এই জনপদের মানুষের জন্য মৎস্য প্রজননের ব্যবস্থা করে। কিন্তু লোভী মৎস্য শিকারীরা কখনও প্রকাশ্যে আবার কখনও রাতের আঁধারে অবৈধভাবে ছিপ ফেলে মাছ শিকার করে নিয়ে যাচ্ছে। এদেরকে রোধ করা যাচ্ছে না।
বুধবার সরেজমিনে মৎস্য অভয়াশ্রমে গিয়ে দেখা যায়, ৩টি ডিঙ্গি নৌকায় করে কয়েকজন রেডজোনে বড়শি ফেলে মাছ ধরছে। অন্যায়ভাবে মাছ ধারছেন কেন জিজ্ঞাসা করা হলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মৎস্য শিকারী বললেন, মাছ ধরা অপরাধ আমরা জানি। তারপরেও কাঁচা মাছের লোভ সামলানো খুব কঠিন সে কারণে মাঝে মাঝে আমরা বড়শি ফেলে দু একটি মাছ ধরি।
এ ব্যাপারে উল্লাপাড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হলে সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আতাউর রহমান জানান, অনেক অর্থ ব্যয় করে পাশর্বর্তী করতোয়া নদীতে মাছের অভয়াশ্রম তৈরি করা হয়েছে। এখানে বোয়াল, রুই, চিতল, কালবাউস, আইড়, বাইম মাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির মা মাছের নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এসব মাছ এখানে ডিম দিয়ে প্রজনন বৃদ্ধি করে থাকে। কিন্তু এলাকার কিছু অসাধু মৎস্য শিকারী নৌকায় করে নিষিদ্ধ এলাকায় বড়শি ফেলে বড় বড় মাছ শিকার করে থাকে। মৎস্য বিভাগ প্রশাসন ও থানা পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে অনেকবার সেখানে অভিযান চালিয়ে অসাধু মৎস্য শিকারীদের ধরার চেষ্টা করেছে। কিন্তু কোননা কোনভাবে তারা খবর পেয়ে সময় মত পালিয়ে যায়। কোনভাবেই এদেরকে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। মৎস্য বিভাগের লোকবল কম। তারপরেও মৎস্য বিভাগ প্রয়োজনে কম সময়ের ব্যবধানে বার বার এখানে অভিযান পরিচালনা করবে।
আপনার মতামত লিখুন :