সিরাজগঞ্জের ৯টি উপজেলার বিভিন্ন ফসলের মাঠে মাঠে হিমেল বাতাসে দোল খাচ্ছে হলুদ সরিষা ফুল। শিশির সিক্ত ফসলের মাঠ হলুদ সরিষা ফুলের গন্ধ বাতাসে ভাসছে। দূর থেকে সরিষার খেতগুলো দেখে মনে হয়, কে যেন হলুদ চাদর বিছিয়ে রেখেছে। সরিষা ফুলের হলুদ রাজ্যে মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত যেমন মাঠ।
ফসলের মাঠে ফোটা ফুলগুলো রোদ ঝলমল আলোয় প্রকৃতির মাঝে অপরূপ সৌন্দর্যের শোভা ছড়াচ্ছে। তেমনি সরিষার হলুদ রাজ্য দেখতে ভিড় করছেন শিশু-কিশোর সহ সব বয়সী নারী-পুরুষ প্রকৃতিপ্রেমীরা। একই সঙ্গে শীতের কুয়াশাকে উপেক্ষা করে চাষিরা সরিষা খেতের যত্ন নিচ্ছেন তেমনি বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকেরা কিন্তু কপালে পড়েছে চিন্তার ভাঁজ চলনবিলে সরিষা ফুলে ঝাঁকে ঝাঁকে মৌমাছির মতো দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়ছেই। এমন কি এই সুন্দর মুহর্তকে ধরে রাখার জন্য তুলছেন ছবি। কেউবা মুঠোফোনে তুলছেন সেলফি। ছবিকে সুন্দর করার জন্য নেমে যাচ্ছেন জমির মধ্যে। আর এটিই কৃষকের আতঙ্কের কারণ। তাদের পায়ের নিচে পরে নষ্ট ফুল ও গাছ। যদি এভাবে প্রতিদিন কয়েকশ দর্শনার্থী জমির মধ্যে নামে! আর এটা যদি মাস ব্যাপী চলতে থাকে, তাহলে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধন হবে আর ফসল ঘরে তোলার দরকার হবে না!
সরেজমিনে চলনবিল তাড়াশের প্রত্যন্ত অঞ্চল ঘুরে দেখা যায়, মৎস্য ও শস্য ভান্ডার খ্যাত চলনবিল জুড়ে সবুজের বুকে হলুদ ফুল দোল খাচ্ছে। সেই ফুলের মৌ মৌ গন্ধ চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। আর এই শীতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মিষ্টি মিষ্টি রোদে সব বয়সী নারী-পুরুষেরা তাদের স্মৃতিকে ধরে রাখতে সরিষা ক্ষেতে ছবি তুলছেন। অনেকেই সেলফি তুলছেন পরিবারের সাথে আবার সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছাড়ছেন। শিশু-কিশোররা হলুদ ফুলে মিতালি করছে।
চলনবিলের মাগুড়া গ্রামের কৃষক মো. শাহিন জানান, এ বছর ১০ বিঘা জমিতে স্বল্প মেয়াদি টরি-৭ সরিষা চাষ করেছেন। আর ভালো ফলনের আশাও করছেন। তবে আতংকে আছেন দর্শনার্থীদের নিয়ে। তার জমি গুলো রাস্তার পাশে হওয়ায় আতঙ্ক আরও বেশী! দর্শনার্থী ছবি তোলার জন্য যে ভাবে জমির মধ্যে চলে যাচ্ছে, এতে তাদের ফসলের বেশ ক্ষতি হচ্ছে। বাধ্য হয়েই সারাদিন জমির কাছে থাকতে হচ্ছে। কেউ কেউ সোজা জমির মধ্যে নেমে যায়, মানা করলেও শোনে না! এ নিয়ে অনেকের সাথে খারাপ আচরন হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কি করবো বলুন, ফসল যদি নষ্ট হয়ে যায় তাহলে আমরা ক্ষতির মুখে পরবো। জমিতে না নেমে আইলে দাড়িয়ে ছবি তোলার জন্য দর্শনার্থীদের প্রতি অনুরোধও করেন।
রানীদিঘী গ্রামের কৃষক গোলাম রব্বানী বলেন, ৬ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছেন। বোরোর আগে বাড়তি উপার্জনের আশায় স্বল্প মেয়াদি সরিষা চাষ করেছেন। তার প্রতি বিঘা জমিতে হালচাষ, সেচ, সার ও বীজ বপন বাবদ ৬ হাজার টাকা মতো খরচ হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এ বছর তাড়াশের গত মৌসুমে সরিষা চাষ হয়েছিল ১০৩১২ হেক্টর জমিতে। চলতি মৌসুমে ১১০০০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও ইতিমধ্যে তা ছাড়িয়ে গেছে। গত বছরের তুলনায় সরিষা চাষ বেশি হয়েছে প্রায় ৬৭৯ হেক্টর জমিতে।
তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, সরিষা চাষ সম্প্রসারণের জন্য কৃষি বিভাগ অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। সরকারিভাবে ৮৪০০ জন কৃষক কে বীজ ও সার সহায়তা দেয়া হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আশা করছি সরিষার আবাদ লক্ষ মাত্রার চেয়ে বেশি হবে।
আপনার মতামত লিখুন :