টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে কলেজ ছাত্র ইমন গুলিতে নিহত হত্যা মামলায় সাবেক কৃষিমন্ত্রী ও আ.লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাককে পাঁচদিনের রিমান্ডে নিয়েছে মির্জাপুর থানা পুলিশ। শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) হতে এই রিমান্ড শুরু হয়েছে বলে মির্জাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোশারফ হোসেন জানিয়েছে।
তিনি জানান, নিহত ইমন গোপালপুর উপজেলার হেমনগর ইউনিয়নের নলিন মন্ডল বাড়ী এলাকার জুলহাস মিয়ার ছেলে। তিনি অলোয়া মনিরুজ্জামান খান বিএম কলেজ থেকে ২০২৩ সালে এইচএসসি পাস করে হেমনগর ডিগ্রি কলেজে ভর্তি হন। ইমন গোড়াই এলাকায় একটি পোষাক কারখানায় কাজ করতেন। গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক সংলগ্ন মির্জাপুর উপজেলার গোড়াই হাইওয়ে থানার সামনে তাদের শান্তিপুর্ণ কর্মসূচী চলছিলো। তখন একদল দুস্কৃতিকারী হাইওয়ে থানায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এসময় গোপালপুর এলাকার কলেজ ছাত্র ইমন গুলিবিদ্ধ হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৮ আগস্ট ইমন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। এই ঘটনায় ইমনের ভাই সুমন বাদী হয়ে গত ১৯ আগস্ট মির্জাপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাককে প্রধান আসামী করা হয়। গত ১৪ অক্টোবর ঢাকা মহনগর গোয়েন্দা পুলিশ ড. আব্দুর রাজ্জাককে গ্রেপ্তার করে।
গত ১১ নভেম্বর আব্দুর রাজ্জাককে টাঙ্গাইলে মির্জাপুর আমলী আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করা হলে বিচারক ইসমত আরা পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।শুক্রবার সকালে টাঙ্গাইল কারাগার থেকে ড. আব্দুর রাজ্জাককে মির্জাপুর থানায় পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
মির্জাপুর থানায় দায়ের করা মামলার বিবরনে জানা গেছে, এই হত্যা মামলায় ড. আব্দুর রাজ্জাক ছাড়াও সাবেক মন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু, সাবেক এমপি খান আহমেদ শুভ, তানভীর হাসান ছোট মনি, হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারী, ছানোয়ার হোসেন, সাবেক এমপি জোয়াহেরুল ইসলাম জোয়াহের, আমানুর রহমান খান রানা ও অনুপম শাজাহান জয়, মির্জাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মীর শরীফ মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক ব্যারিষ্টার তাহরীম হোসেন সীমান্ত, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য ও ডোহাতলী গ্রামের মৃত ফজলুর রহমানের ছেলে সাবেক চেয়ারম্যান মো. শরিফুর রহমান শরিফ, টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র এস এম সিরাজুল ইসলাম আলমগীর, টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি গোলাম কিবরিয়া বড় মনি, টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আশরাফুজ্জামান স্মৃতি, সাংগঠনিক সম্পাদক জামিলুর রহমান মিরন, সাইফুজ্জামান সোহেল, মির্জাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মীর শরীফ মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার তাহরীম হোসেন সীমান্ত, সাবেক এমপি খান আহমেদ শুভর ব্যক্তিগত সহকারী ও ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মীর আসিফ অনিক, হংকং প্রভাসি সহসভাপতি আবুল কালাম আজাদ লিটন, সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আল মামুন, টাঙ্গাইল জেলা যুব লীগের সহসম্পাদক মঈন হোসেন রাজীব, মির্জাপুর উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক সেতাব মাহমুদ, গোড়াই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী হুমায়ুন কবীর, আজগানা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের সিকদার, ফতেপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ মিয়া, ওয়ার্শি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুবুল আলম মল্লিক হুরমহল এবং আনাইতারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল ময়নাল হকসহ ১৫৭ জনের নাম উল্লেখ রয়েছে।
এছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও ৫০০ জনের নামে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার পর গ্রেপ্তার আতংকে পলাতক আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
এ ব্যাপারে মির্জাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মোশারফ হোসেন বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলকালে গুলিবিদ্ধ হয়ে কলেজ ছাত্র ইমন নিহত হয়। এই মামলায় ড. আব্দুর রাজ্জাককে পাঁচদিনের রিমান্ডে আনা হয়েছে। পলাতক অপর আসামীদের গ্রেফতারে কাজ করছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যগন।
আপনার মতামত লিখুন :