যশোরের চৌগাছায় ইজিবাইকসহ নিখোঁজের ৩ দিন পর সোহাগ হোসেন রকি (২২) নামে এক যুবকের লাশ উদ্ধার হয়েছে। রকি উপজেলার পাতিবিলা ইউনিয়নের পুড়াহুদা গ্রামের লিয়াকত হোসনের ছেলে। তিনি ১৬ জানুয়ারি চৌগাছা শহরে আসার পর সন্ধ্যা থেকে নিখোঁজ ছিলেন। ইজিবাইক ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যেই এই হত্যা বলে প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হচ্ছে।
রোববার ১৯ জানুয়ারি রাত ২টা ৪৫ মিনিটের দিকে চৌগাছা পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের তরিকুল ইসলাম পৌর কলেজের পিছনের ভৈরব নদের (মুক্তদহ মাঠ) কচুরিপানার নিচ থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ পিবিআই যশোর ও চৌগাছা থানা পুলিশ।
এ ঘটনায় নিহত রকির বন্ধু পুড়াহুদা গ্রামের শরিফুল ইসলামের ছেলে সোহানুর রহমান (২০), চৌগাছা পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের ইছাপুর গ্রামের মৃত আব্দুর রহিমের ছেলে সজল ইসলাম (১৮) ও পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের পাঁচনমনা গ্রামের কামাল হোসেনের ছেলে সুজন হোসেনকে (২১) আটক করে পিবিআই। পরে তাদের স্বীকারোক্তিতে উল্লেখিত স্থানে রাত ১টা ১০ মিনিট থেকে ২টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে লাশ উদ্ধার করে পিবিআই যশোর ও চৌগাছা থানা পুলিশ।
নিহতের চাচা আজিজুর রহমান জানান, ১৬ জানুয়ারি বাড়ি থেকে ভাড়া নিয়ে চৌগাছা বাজারে আসার পর রকি বাড়ি ফিরে না গেলে সন্ধ্যার পর থেকে তাকে খুঁজাখুঁজি শুরু হয়। রাত ৮/৯টা পর্যন্ত তার মোবাইলে কল গেলেও পরে বন্ধ পাওয়া যায়। পরে তারা চৌগাছা থানায় জিডি করেন। কোন সন্ধান না পেয়ে যশোর পিবিআইয়ে গিয়ে অভিযোগ দিলে পিবিআই তদন্ত শুরু করে এবং সন্দেহভাজন হিসেবে সোহানুর, সজল ও সুজনকে আটক করে। পরে তাদের স্বীকারোক্তিতে গভীর রাতে ভৈরব নদ থেকে রকির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা পুলিশ ও পিবিআইকে জানায়, ১৬ জানুয়ারি সন্ধ্যায় ইজিবাইক চালক রকি ও হত্যাকারী ৩ বন্ধু চৌগাছার গুড় মেলা ঘুরে গাঁজা খাওয়ার উদ্দেশ্যে তরিকুল ইসলাম পৌর কলেজের পিছনে ভৈরব নদ এবং ভৈরব নদ থেকে কপোতাক্ষ নদের সংযোগ খালের মিলনস্থলের নির্জন জায়গায় যায়। সেখানে চার বন্ধু একসাথে বসে গাঁজা সেবন করে। এরপর সাথে নিয়ে যাওয়া লাড্ডু (মিষ্টি জাতীয় খাবার) রকি বেশি খেয়ে ফেলে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে বাকবিতন্ডা হয়। এক পর্যায়ে সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটের দিকে তাদের সাথে থাকা রশি গলায় পেঁচিয়ে তিন বন্ধু রকিকে হত্যা করে। পরে রকির লাশ ভৈরব নদের কচুরিপনার মধ্যে লুকিয়ে রেখে তার ইজিবাইক নিয়ে পালিয়ে যায়। এবং চুরির ইজিবাইক বিক্রি করতে দুই বন্ধু যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাঠি যাবার পথে চৌগাছা-যশোর সড়কের আমবটতলা পার হলে আরেকপক্ষ তাদের কাছ থেকে ইজিবাইক ও তিনবন্ধুর মোবাইল ফোন কেড়ে রেখে তাড়িয়ে দেয়। পরে অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে চৌগাছা থানা পুলিশের সহায়তায় পিবিআই আসামিদের আটকের পর তাদের স্বীকারোক্তিতে লাশ উদ্ধার করে। লাশ উদ্ধারের পর ইজিবাইক এবং হত্যাকারীদের মোবাইল উদ্ধারে আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আসামিদের পিবিআই যশোরে নেয় এবং লাশের ময়না তদন্তের জন্য ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট যশোর জেনারেল হাসপাতালে পাঠায়।
পিবিআই যশোরের পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন সাংবাদিকদের জানান, ইজিবাইক উদ্ধারে আরও কাজ চলছে। তাদের আরও জিজ্ঞাসাবাদের পর বলা যাবে কি কারনে এই হত্যাকান্ড তারা ঘটিয়েছে।
চৌগাছা থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) কামাল হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এ বিষয়ে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
আপনার মতামত লিখুন :