ঢাকা রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

পলাতক স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সাভাস, অপরাধের নেতৃত্বে ভাই সুভাস

ময়মনসিংহ ব্যুরো

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২২, ২০২৪, ০৮:১০ পিএম

পলাতক স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সাভাস, অপরাধের নেতৃত্বে ভাই সুভাস

ওয়ার্ড কাউন্সিলর ওমর ফারুক সাভাস। ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর হত্যাসহ নানা অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে গা ঢাকা দিয়েছেন ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের ২৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ওমর ফারুক সাভাস। তার স্থলে এলাকায় নানা অপকর্মে নেতৃত্বে দিচ্ছেন ছোট ভাই সুভাস। রবিবার (২২ সেপ্টম্বর) সকালে সুভাসের নেতৃত্বে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা নগরীর দিঘারকান্দা এলাকায় এক অসহায় পরিবারের ঘর ভাঙচুর ও জমি দখলের চেষ্টা করে। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতে তারা ছটকে পড়েন।

২০১৮ সালে মিল্লাত তাড়াশী হত্যা মামলার অন্যতম আসামী ময়মনসিংহ মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ও ২৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ওমর ফারুক সাভাসের বিরুদ্ধে জমি দখল, কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণসহ নানা অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। ২০১৯ সালে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সাভাসের পক্ষে কাজ না করায় দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সাভাসবাহিনী হামলা করেন ২৫ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন দুলু ওপর। এনিয়ে মামলা করা হলেও দফায় দফায় দুলুর পরিবারে হামলা চলে সাভাসের নেতৃত্বে। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশত্যাগ করলে সাভাসও আত্মগোপনে চলে যান। অভিযোগ উঠেছে, সাভাস গা ঢাকা দিলেও তাঁর ছোট ভাই সুভাসের নেতৃত্বে কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ ও চাঁদাবাজীর পাশাপাশি মানুষের জমি দখল অব্যাহত রয়েছে।

রবিবার সকালে দিঘারকান্দা এলাকায় সন্তানদের জন্য রেখে যাওয়া আশ্রাব আলীর সাত শতাংশ জমি দখল করতে সুভাসের নেতৃত্বে ২৫-৩০ জন হামলা, ভাঙচুর করে। এসময় জমিতে থাকা একটি ঘর গুড়িয়ে দেয়া হয়। কাটা হয় বেশ কয়েকটি গাছ। পরে ভুক্তভোগিরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিষয়টি অবহিত করলে তারা যাওয়ার সাথে সাথে স্থান ত্যাগ করেন সুভাস বাহিনী।

আশ্রব আলীর ছেলে ওয়াসিম হোসেন বলেন, বাবার রেখে যাওয়া সাত শতাংশ জমি আমরা তিন ভাই ও এক বোন পেয়েছি। এই জমিটি ১৯৭৪ সালে আমাদের পূর্বপুরুষদের নামে দলিল হয়। গত কয়েক বছর ধরে পুলিশের বহিষ্কৃত সদস্য আমিনুল ইসলাম নান্টু একটি ভূয়া দলিলে সাত শতাংশ জমির মধ্যে তিন শতাংশ তার বলে দাবি করেন। এনিয়ে স্থানীয় ভাবে শালিস হলে আমাদের পক্ষে রায় আসে। তারপরেও নান্টুর অত্যাচারে আমরা আদালতে যাই। বিষয়টি নিয়ে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। ভূয়া দলিলে নান্টু জমি পাবে না নিশ্চিত হয়ে সাভাস বাহিনী দিয়ে তা দখলের চেষ্টা করছেন।

আশ্রব আলীর স্ত্রী মমতাজ বেগম বলেন, আমার স্বামীর রেখে যাওয়া জমিতে সাভাস বাহিনীর নজর পড়েছে অনেক দিন ধরে। এর আগে তারা জমিটি দখলের জন্য হামলা করেছিল। এখন সাভাস পলাতক থাকলেও তার ভাই সুভাস আজকে দলবল নিয়ে জমি দখল করতে আসে। তারা জমিতে থাকা একটি ঘর ও বেশকিছু গাছ কেটে ফেলে। পরে পুলিশ সেনাবাহিনী আসলে তারা চলে যায়। আমরা এই অত্যাচার থেকে বাঁচতে চাই।

স্থানীয় বাসিন্দা তারা মিয়া বলেন, ভূয়া দলিলে জমি দাবি করে আমিনুল পুলিশ তা দখলে নিতে না পেরে সাভাসবাহিনীর সাথে দখলের চুক্তিতে গেছে। যার কারণে প্রায় সময় সাভাস বাহিনী সেখানে হামলা করে। কিন্তু জমিটির প্রকৃত মালিক যারা, তারা অনেকটা অসহায় হওয়ার কারণে সাভাসবাহিনীর সাথে পারছে না। এটির একটি সুরাহা হওয়া প্রয়োজন।

স্থানীয় সোহরাব উদ্দিন বলেন, সাভাস এবং তার ভাই সুভাস এলাকায় এমন কোন অপকর্ম নেই যে তারা করেনি। জমি দখল, হত্যা এবং চাঁদাবাজিসহ সবকিছুতেই তাদের নাম। এই সন্ত্রাস বাহিনীকে রুখতে বর্তমান সরকারের কাছে দাবি জানাই।

এ বিষয়ে ওয়ার্ড কাউন্সিলর ওমর ফারুক সাভাস বলেন, কারও জমি দখলে আমার ভাই নেতৃত্ব দেয়নি। সে হয়তো রাস্তার মধ্যে ছিল তাই তার বিরুদ্ধে কথা হচ্ছে। আর আমাদের বিরুদ্ধে একটি পক্ষ সবসময় অপপ্রচার করছে।

২০১২ সালে সোয়া তিন শতাংশ জমি হযরত আলীর কাছ থেকে ক্রয় করেছেন জানিয়ে আমিনুল ইসলাম বলেন, জমি দখলে বাঁধা দেওয়ায় কাউন্সিলর সাভাস ও তার ভাই সুভাসের সহযোগিতা নিচ্ছেন।

কোতোয়ালী মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) জহিরুল ইসলাম বলেন, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য আমিনুল তার কেনা জমিতে বাউন্ডারী করতে গেলে অপরপক্ষ জমিটি তাদের দাবি করে প্রশাসনকে অবহিত করেন। প্রথমে সেনাবাহিনী, পরে ডিবি তারপর সেনাবাহিনীর কলে আমরা কোতোয়ালী থানা পুলিশের পক্ষ থেকে ঘটনাস্থলে যাই। যেহেতু জমি নিয়ে আদালতে মামলা চলমান আছে তাই মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত উভয় পক্ষকে জমিতে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। পুলিশ সদস্যের পক্ষ নিয়ে জমিতে স্থানীয় কাউন্সিলর সাভাসের ভাই সুভাসসহ অন্যরা গিয়েছিল বলে শুনেছি।

আরবি/জেডআর

Link copied!