ঢাকা বুধবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৪

পরিবেশ দুষণে বিপর্যস্ত গাজীপুর, উত্তরণ উপায় শীর্ষক আলোচনা

গাজীপুর প্রতিনিধি

প্রকাশিত: অক্টোবর ২২, ২০২৪, ০৯:১৬ পিএম

পরিবেশ দুষণে বিপর্যস্ত গাজীপুর, উত্তরণ উপায় শীর্ষক আলোচনা

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

রাজধানী লাগোয়া গাজীপুর জেলায় গত দুই যুগে বনভূমি ও জলাশয় কমেছে দুই তৃতীয়াংশ। উল্টো দিকে বেড়েছে অপরিকল্পিত শিল্পায়ন ও নগড়ায়ন। অর্থনৈতিকভাবে দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জেলা গাজীপুরে নিয়ে এক গবেষণায় এমন তথ্য ওঠে এসেছে।

মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) গাজীপুর পিটিআই অডিটোরিয়ামে পরিবেশ দুষণে বিপর্যস্ত গাজীপুর: উত্তরণ উপায় শীর্ষক আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে গবেষণা জরিপের ফলাফলে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়।

গবেষণা জরিপ পরিচালনা করেছে, রিভার অ্যান্ড ডেলটা রিসার্চ সেন্টার (আরডিআরসি)। এতে সহায়তা করেছে, বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশন (বিআরএফ), বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি বেলা) এবং প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন।

২০২৩ সালে গবেষণা জরিপ পরিচালিত হয়। এই গবেষণার প্রধান কেন্দ্রবিন্দু নদী হলেও সঙ্গত কারণেই এতে পরিবেশের অন্যান্য উপাদানগুলোর বর্তমান অবস্থা, ক্রম বিবর্তনের চিত্র উঠে এসেছে।

অনুষ্ঠানে বেলার ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী তাসলিমা ইসলামের সভাপতিত্বে ও বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মো. মনির হোসেনের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক নাফিসা আরেফিন। জরিপ তথ্য উপস্থাপন করেন, রিভার এন্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারে চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ। এতে প্যানেল আলোচক হিসাবে বক্তব্য রাখেন, গাজীপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আরেফিন বাদল, ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের অধ্যাপক অসীম বিভাকর, গাজীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রফিকুল ইসলাম, গাজীপুর পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক নজরুল ইসলাম।

গবেষণা বলছে, একবিংশ শতাব্দীর শুরু অর্থাৎ ২০০০ সাল থেকে গত ২৩ বছরে এক সময়কার সবুজ শ্যমল গাজীপুরের পরিবেশের বিরাট পরিবর্তন ঘটে গেছে। উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে বনাঞ্চল, জলাশয়, উম্মুক্ত জায়গা। উল্টো দিকে, বেড়েছে অপরিকল্পিত শিল্পায়ন ও শহরায়ন। ঘটেছে, বন দখল, জলাশয় ভরাট ও গাছ কর্তন।

জেলায় ২০১১ সালে মোট জনসংখ্যা ছিল সাড়ে ৩০ লাখের কাছাকাছি। ২০২২ সালে তা এসে ঠেকেছে ৫০ লাখের বেশি। দেশের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ৮ হাজার ১২৬ জন বসবাস করছে।

পরিবেশগত সমীক্ষা বলছে, ২০০০ সালে জেলায় মোট জলাভূমির পরিমান ছিলো ১১ হাজার ৪৬২ হেক্টর বা মোট আয়তনের ৬.৭৩ শতাংশ। ২০২৩ সালে এসে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৫৫৬৮ হেক্টর বা মোট আয়তনের ৩.২৭ শতাংশ।

একটি জেলার মোট আয়তন অনুযায়ী অন্তত ৭ থেকে ১৪ শতাংশ জলাভূমি থাকতে হয়। অথচ গাজীপুর আদর্শ মান থেকে অনেক পিছিয়ে আছে। তার ওপর জেলায় তুরাগ, বালু, বংশী, শীতলক্ষ্য, চিলাইসহ নদ-নদীগুলো শিল্পবর্জ্যসহ নানামুখী মারাত্মক দূষণের শিকার। যার প্রভাব পড়ছে জেলার সার্বিক পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য।

একটি জেলার মোট আয়তন অনুযায়ী ২০ থেকে ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকতে হয়। ২০০০ সালে গাজীপুরে বনভূমির পরিমান ছিলো ৩৯ হাজার ৯৪৩ হেক্টর বা ২৩.৪৪ শতাংশ। ২০২৩ সালে জেলায় বনভূমির পরিমান এসে ঠেকেছে ১৬ হাজার ১৭৪ হেক্টর বা ৯.৪৯ শতাংশে। অথচ এই জেলাতেই অবস্থিত ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের মতো গুরুত্বপূর্ণ বনভূমি।

গাজীপুরে ২০০০ সালে আবাদকৃত মোট কৃষিজমির পরিমান ছিল ১৮ হাজার ২৭০ হেক্টর। ২০২৩ সালে এসে আবাদকৃত কৃষি জমির পরিমান বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ৩০৭ হেক্টরে। জেলায় ২০০০ সালে মানব বসতি ছিলো ৮৫ হাজার ৫৭৩ হেক্টর এলাকায়, যা মোট আয়তনের ৫০.২১ শতাংশ। ২০২৩ সালে এসে বসতিকৃত এলাকা বেড়ে হয়েছে এক লাখ ১২ হাজার ১৭৯ হেক্টর; যা মোট আয়তনের ৬৫.৮৩ শতাংশ।২০০০ সালে শিল্প এলাকা বিস্তৃত ছিল ৯ হাজার ৭৩৬ হেক্টর জমিতে। ২০২৩ সালে তা বেড়ে হয়েছে ১৪ হাজার ৮৭৭ হেক্টরে। ২০০০ সালে জেলায় খোলা জায়গার পরিমান ছিল ৫৪৩৬ হেক্টর। ২০২৩ সালে যা এসে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১৩১৬ হেক্টরে।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্র বিনষ্ট করে অনিয়ন্ত্রিত শিল্পায়ন এবং নগরায়নের বিধ্বংসী প্রভাবের কারণে গাজীপুর এখন দেশের পরিবেশগত বিপর্যয়ের প্রতীক হয়ে উঠেছে। এই জেলার পরিবেশগত অবস্থা বেশ উদ্বেগজনক। এখানে উল্লেখযোগ্য হারে বনভূমি জলাভূমি দখল করা হচ্ছে। বায় ও পানি উভযয়ের দূষণের মাত্রা অতি উচ্চ। যা ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলছে জনস্বাস্থ্য।

এমন পরিস্থিতিতে বেলা, বিআরএফ, আরডিআরসি এবং প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরেন। এরপর আগত বিভিন্ন দপ্তরের ও পেশার মানুষ তাদের মতামত প্রদান করেন। ঐতিহ্য সংরক্ষণ করতে হবে।

গাজীপুর জেলা প্রশাসক নাফিসা আরেফিন বলেন, বন দখলের অভিযোগ প্রতিদিনই আমরা পাচ্ছি। আলোচনা ও শালিসও করতে হচ্ছে। তবে এসব দখলের বিরুদ্ধে আমাদের প্রত্যেকের প্রতিবাদ প্রতিরোধ করতে হবে। এবিষয়ে আমার সরকারি যে।দায়িত্ব রয়েছে তার সর্বোচ্চ ব্যবহার করবো।

বেলার ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী তাসলিমা ইসলাম বলেন, সমস্যা দেখে আমরা আশাহত না হই। আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে। দখল দূষণ চাইলেও সরকার বা বেলা একা সমাধান করতে পারবে না। আমরা নগরায়ন চাই, উন্নয়ন চাই কিন্তু সেই উন্নয়ন চাইনা যে উন্নয়ন আমাদের পরিবেশকে দেখে না।

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, বাপার গাজীপুর জেলা সাধারণ সম্পাদক হাসান খান, ভাষা শহীদ কলেজের অধ্যক্ষ মুকুল কুমার মল্লিক, গাজীপুর বিএম কলেজের অধ্যক্ষ হুমায়ুন কবির, গাজীপুর নদী পরিব্রাজক দলের সাধারণ সম্পাদক এম. আসাদুজ্জামান সাদ, আবু সাঈদ চৌধুরী, অধ্যাপক আসাদুজ্জামান আকাশ প্রমুখ।

আরবি/জেডআর

Link copied!