বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


আবু বকর সিদ্দিক বাবু, উল্লাপাড়া

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৭, ২০২৪, ০৩:৫৪ পিএম

উল্লাপাড়ার ঐতিহ্যবাহি সলপের ঘোল

আবু বকর সিদ্দিক বাবু, উল্লাপাড়া

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৭, ২০২৪, ০৩:৫৪ পিএম

উল্লাপাড়ার ঐতিহ্যবাহি সলপের ঘোল

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

শতবছরের ঐতিহ্যবাহি সলপের ঘোল স্বাদ-মানে অনন্য। বহুল পরিচিত এই ঘোল এখন শুধু দেশে নয় সীমানা পেরিয়ে বিদেশেও যাচ্ছে। বর্তমানে জিআই পণ্য হিসেবে এই ঘোলের স্বীকৃতির জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন জানানো হয়েছে। সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলা সদর থেকে ৬ কিলোমিটার পূর্বে সলপ রেলওয়ে ষ্টেশনের পাশে বাংলা ১৩২৯ সালের (ইংরেজি ১৯২২) ৭ বৈশাখ এই বিশেষ ঘোল তৈরির সূচনা করেন রাঘববাড়ীয়া গ্রামের সাদেক আলী খান। সলপের তদানীন্তন প্রভাবশালী জমিদাররা এই ঘোল তৈরিতে পৃষ্ঠপোষকতা করেন। সাদেক আলী খানের নাতি আব্দুল মালেক তার ছোট ভাই আব্দুল খালেককে সঙ্গে নিয়ে পূর্বসুরিদের হাত ধরে নেমেছেন ঘোলের ব্যবসায়। ধরে রেখেছেন এর প্রাচীন ঐতিহ্য। কারখানায় এখন প্রতিদিন তাদের ১৪০ থেকে ১৫০ মণ ঘোল ও মাঠা তৈরি হয়ে থাকে। অন্তত ৩০ জন কর্মচারী কারখানায় ঘোল, মাঠা, তৈরির কাজ করেন। রমজান মাসে এই ঘোলের চাহিদা প্রতি বছর বেড়ে যায় দ্বিগুণ। 

যেভাবে তৈরি হয় সলপের ঘোল আব্দুল মালেক বিশেষ এই ঘোল তৈরির ব্যাপারে বলেন, দুধ কিনে সসপেনে করে ৭-৮ ঘণ্টা ধরে ভালোভাবে জ্বাল দিতে হয়। এরপর ছোট ছোট বিভিন্ন পাত্রে ঘন দুধ ঢেলে ঠান্ডা হবার জন্য রাতভর রেখে দিতে হয়। পরদিন ভোর থেকে এসব পাত্রে কিছু পরিমান পানি মিশিয়ে বাঁশের তৈরি চড়কি রশির সাহায্যে বিশেষ কৌশলে টেনে ঘোরানো হয়। কখনো একা আবার কখনো ৩৯ জন মিলেও ঘোরানো হয়। কয়েক দফা ঘোরানোর পর তৈরি হয় এই ঘোল। এখন ঘোল তৈরিতে বৈদ্যুতিক যন্ত্রও তারা ব্যবহার করেন। স্থানীয় বাজারগুলো ছাড়াও শাহজাদপুর ও মোহনপুরের বিভিন্ন গরুর খামার থেকে প্রতিদিন দুধ সংগ্রহ করা হয়।

প্রতিদিন ১৪০ থেকে ১৫০ মণ দুধ প্রয়োজন হয় তাদের। রমজানে ঘোলের চাহিদা বাড়ায় ২শ মণ পর্যন্ত দুধ কিনতে হয়। ঘোল বিক্রি করা হয় ৬০ টাকা থেকে ৬৫ টাকা লিটার দরে। একই সঙ্গে মাঠা (সাদা রঙ্গের ননীযুক্ত উন্নত ঘোল) বিক্রি হয় ৭০ টাকা থেকে ৮০ টাকা লিটার। মালেক ও খালেক ছাড়াও সলপ এলাকায় আরও কয়েকজন এই ঘোল বিক্রির কাজে নেমেছেন। সলপে ঘোলের দোকানে গিয়ে দেখা যায় প্লাস্টিকের বোতল ও বড় ক্যান নিয়ে পাশের বেলকুচি, শাহজাদপুর, কামারখন্দ উপজেলা এবং সিরাজগঞ্জ, নাটোর ও পাবনার কাশিনাথপুর থেকে অনেক মানুষ ঘোল কিনতে এসেছেন। কথা হয় বেলকুচির ঘোল ক্রেতা আশরাফুলের সঙ্গে। 

তিনি বলেন, সলপের ঘোল খুবই উন্নত। প্রতি মাসে অন্ততঃ একবার তিনি সলপ থেকে ঘোল কেনেন। বিশেষ করে রমজান মাসে তার পরিবারের জন্য প্রায় দেড় মণ ঘোল তিনি ৩-৪ দফায় কিনে নিয়ে যান। ফ্রিজে রেখে তারা এই ঘোল খেয়ে থাকেন। তিনি বললেন, স্বাদে মানে সলপের ঘোলের এখনও তুলনা নেই। 

পঞ্চক্রোশী আলী আহম্মেদ উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক সলপ ষ্টেশনের পাশের বাসিন্দা হাবিবুজ্জামান জানান, শত বছরে পা দিয়েছে সলপের ঘোল। এখনও সুখ্যাতি রয়েছে এই ঘোলের। প্রতি বছর বৈশাখ মাসের প্রথম সপ্তাহে সলপ রেলওয়ে ষ্টেশন চত্বরে ঘোল উৎসবের আয়োজন করা হয়। সিরাজগঞ্জের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন প্রভাতী সংঘ এই উৎসব আয়োজনে সহযোগিতা দিয়ে থাকে। উৎসবের দিন আব্দুল মালেক ও আব্দুল খালেক দেড় শতাধিক অতিথিকে ঘোল, চিড়া, মুড়ি-মুড়কি দিয়ে আপ্যায়ন করে থাকেন।

সলপ ষ্টেশনে ঘোলের দোকানে গেলে প্রয়াত সাদেক আলী খানের নাতি আব্দুল মালেক তার দাদার উদ্ধৃতি দিয়ে এই ঘোলের জন্মলগ্নের কাহিনী শোনান।

আব্দুল মালেক জানান, সলপের জমিদারদের অনুপ্রেরণা ও সহায়তায় তার দাদা বাংলা ১৩২৯ সালে সলপ ষ্টেশনের পাশে গড়ে তোলেন ঘোল তৈরির কারখানা। ওই সময়ে প্রথমে সাদেক আলী রাজশাহীতে একটি মিষ্টির দোকানের এক কারিগরের কাছে ঘোল তৈরির প্রশিক্ষণ নেন। পরে সলপে ফিরে এসে ৭ বৈশাখ শুরু করেন ঘোল তৈরি। শুরুতে ৮ থেকে ১০ মণ করে ঘোল উৎপাদন করা হতো। প্রতিষ্ঠালগ্নে তাদের উৎপাদিত ঘোলের বেশিরভাগ অংশ কিনে নিতেন সলপ জমিদার পরিবারের লোকজন। জমিদাররা সে সময় এই ঘোল ট্রেনযোগে কলকাতায় তাদের স্বজনদের কাছে নিয়মিত পাঠাতেন।

আব্দুল মালেক আরো জানান, সাদেক আলী খানের মৃত্যুর পর তার চার ছেলে আনছার আলী, আব্দুস সোবহান, আব্দুল মান্নান ও তহেজ উদ্দিন ঘোলের ব্যবসায় আসেন। তাদের মৃত্যুর পর আব্দুল মান্নানের ছেলে হিসেবে মালেক ও তার ভাই খালেক ব্যবসার হাল ধরেন। বস্তুত মালেকরাই এখন এই ঘোলের খ্যাতি দেশে ও দেশের বাইরে ছড়িয়ে দিয়েছেন।

আব্দুল মালেক আরও জানান, সলপের ঘোল এখন এই নামেই দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হচ্ছে। ময়মনসিংহের ভালুকায় মো. লালন, ঢাকার সাভারে বেলাল হোসেন, কমলাপুরে জায়েদ হোসেন ও আমির হোসেন, গুলশানে আব্দুল লতিফ মিয়া, ঢাকা বিমান বন্দরে আব্দুর রাজ্জাকসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলেও বেশ কয়েকজন ঘোল ব্যবসায়ী সলপ থেকে পাঠানো ঘোল সলপের ঘোল নামেই বিক্রি করছেন। প্লাস্টিকের বড় পাত্রে করে এসব ঘোল ট্রেনযোগে প্রতিদিন উল্লিখিত স্থানগুলোতে পাঠানো হয়। পাত্রে ওঠানোর পর ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত ঘোল ভালো থাকে। শীতলীকরণের (ফ্রিজিং) মাধ্যমে সলপের ঘোল এলাকার লোকজন ভারত, সৌদি আরব ও মালয়েশিয়াতে তাদের স্বজনদের কাছে পাঠান।

তিনি জানান, ইতোমধ্যে তার ঘোল জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতির জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছেন। যেকোনো মূল্যে তারা সলপের ঘোলের খ্যাতি ও
ঐতিহ্য অক্ষুন্ন রাখার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন এই ঘোল ব্যবসায়ী।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!