পশ্চিম বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার ধাপ সুলতানগঞ্জ হাটে বৈরী আবহাওয়া ও কনকনে শীতের মধ্যে মৃৎশিল্পের ব্যবসায়ী জিতেন পাল মৃৎশিল্পেরতৈজষপত্র বিক্রি না হওয়ার কারণে মাথায় হাত। আমাদের উপজেলায় এই শিল্পের ব্যবহার সেই আদিকাল থেকে। উত্তরবঙ্গের জেলাগুলো মৃৎশিল্পের জন্য বিখ্যাত। দুপচাঁচিয়ায় প্রতিটি পালদের ঘরে মাটির তৈরি হাঁড়ি-পাতিল, কলস, মাটির ব্যাংক, থালা, ফুলের টপ, কড়াই, শিশুদের খেলনার বিভিন্ন ধরনের শিল্পকর্মের দ্বারায় তৈরি করেছে। এখানকার পথে প্রান্তরে,পর্যটন কেন্দ্রে ও পার্ক গুলোতে নানা শিল্পকর্ম কিনতে পাওয়া যায়।
উপজেলা সদরে চ্যাঙ্গা পালপাড়া ও কুমাড় পালপাড়া পালবাড়ি এলাকা ঘুরে মৃৎশিল্প কারিগর খগেন পাল জানান, মৃৎশিল্পের তৈরিতে মাটি ও খড় কিনতে হয়। আমরা এগুলো কেনার জন্য বিভিন্ন এনজিওর কাছ থেকে ঋণ উত্তোলন করে এসব তৈজষপত্র তৈরি করি। কয়েক বছর আগে মহামারী করোনা রোগের পাদুর্ভাব ঘটায় মৃৎশিল্প একেবারে বন্ধ ছিল।বর্তমানে আমাদের এই ব্যবসায় আবহাওয়া প্রতিকূল না থাকায় ধীরে ধীরে সংসার চালানো খুবই কষ্টকর হয়েছে। পালপাড়ার এলাকার আরো একজন বয়জেষ্ঠ্য মৃৎশিল্পের কারিগর তরুণ পালের বাড়িতে ঘুরে দেখা যায় তীব্র কনকনে শীতের মধ্যে তাদের পরিবারের ছেলে-মেয়ে স্বামী স্ত্রী সহ সকলেই কেউ মাটির কলস, ঢাকন, দইয়ের সরা, মাটির পাতিল, রিং-পাট তৈরি করে সূর্যের আলোর তাপমাত্রা না থাকায় সেগুলো বাড়ির উঠানে শুকিয়ে তুন্দ্রায় খড় দিয়ে আগুনে পুড়ে সেইসব তৈজসপত্র বিভিন্ন হাটবাজারে বিক্রি করার জন্য নিয়ে যায়। কিন্তু তীব্র কনকনে শীতে আবহাওয়ায় হাটবাজারে কোন ক্রেতা না থাকায় এইসব মাটির তৈজসপত্র কেনার জন্য দেখা যায় না। এতে করে মৃৎশিল্প ব্যবসায়ীরা মাথায় হাত দিয়ে চুপচাপ বসে থাকে।
এরপর এই উপজেলা সদরে পালপাড়া এলাকা ঘুরে শিল্পকর্মের কারিগর বিকাশ পাল সে মাটি দিয়ে কুয়ার পাট, মাটির কলস, হাঁড়ি পাতিল ও কিছু চাড়ি তৈরি করে এই এলাকার বিভিন্ন হাটে বাজারে নিয়ে বিক্রি করার জন্য গেলে অর্ধেকের বেশি তৈজসপত্র বিক্রি না হওয়ায় পুনরায় বাড়িতে নিয়ে আসে।এতে করে দেখা যায় একজন মৃৎশিল্পে কারিগর এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে সে আর সময় মত ঋণ পরিশোধ করতে পারে না কারণ আবহাওয়া প্রতিকূল না থাকায় তারা ভাগ্যবিধাতার উপর বিশ্বাস করে কোনরকমে তাদের সংসার চালায়।
দুপচাঁচিয়া চৌধুরী পাড়ার অরুণ মৈত্রের সঙ্গে কথা বলে তিনি জানায়, আধুনিক যুগে প্লাস্টিকের পণ্য আশায় তাদের প্রাচীনতম ও ঐতিহ্যবাহী মাটির মৃৎশিল্প বিক্রি যেমন কমেছে তেমনি শিল্পের কারিগররা এ ব্যবসা দিয়ে তাদের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা করাতে খুব কষ্টে জীবন যাপন করছে। এ যুগে নতুন মানুষেরা চায় প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার করতে, যার কারণে পালদের কদর কমে গিয়েছে বিধায় মাটির মৃৎশিল্পের পণ্য বিক্রি কম। প্রাচীনতম যুগে সনাতনী পদ্ধতিতে মাটির মৃৎশিল্পের যেমন, মাটির তৈরি থালা, হাড়ি পাতিল ও কলস ব্যবহার করলে মানুষের রোগব্যাধির হাত থেকে
রেহাই পাতো কিন্তু আধুনিক যুগে প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার করাই মানুষের মধ্যে রোগ ব্যাধি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর কারণে মাটির মৃৎশিল্পে পণ্য অনেকটাই ঝিমে গেছে। সরকার একটু উদ্যোগ নিয়ে মৃৎশিল্পের কারিগরদেরকে ব্যাংক থেকে অল্প সুদে অর্থ বরাদ্দ দিয়ে ব্যবসায়ীদেরকে উৎসাহ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন এলাকার অনেক বয়োজ্যেষ্ঠ ও বিশিষ্টজনেরা। মৃৎশিল্পের পণ্যের ছবিটি দুপচাঁচিয়া সদরে ধাপ সুলতানগঞ্জ হাটের চিত্র।
আপনার মতামত লিখুন :