ঢাকা মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৪

সরু খালে ভারি লুটপাট

বাউফল (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: অক্টোবর ২২, ২০২৪, ০৭:২৮ পিএম

সরু খালে ভারি লুটপাট

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

পটুয়াখালীর বাউফল পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের মৃত প্রায় একটি খালের ভাঙন রোধ, ড্রেনেজ সিস্টেম, ওয়াকওয়ে নির্মাণসহ সৌন্দর্য বর্ধনের একাধিক প্রকল্পের নামে বিপুল পরিমান সরকারি অর্থ লোপাটের বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাউফল পৌরসভার অপসারিত মেয়র জিয়াউল হক জুয়েল এবং প্রকৌশলী মু. আতিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে। 

রুপালী বাংলাদেশের অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৪ সালের ২, নভেম্বর ১ কোটি ২৭ লাখ ৮৪ হাজার টাকা ব্যায়ে মৃত প্রায় আলোকি খালের ভাঙন রোধে গাইডওয়াল নির্মাণ প্রকল্প গ্রহন করে বাউফল পৌরসভা। মেয়র জিয়াউল হক জুয়েলের ফুফাত ভাই মো. কামাল হোসেনের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সিয়াম এন্টারপ্রাইজ এই প্রকল্পের নির্মাণ কাজ করে। নিম্নমানের নির্মাণ কাজের জন্য নির্মাণ কাজ শেষ না হতেই সম্পূর্ণ গাইডওয়াল ধ্বসে পড়ে খালের মধ্যে। গাইডওয়াল ধ্বসে পড়লেও বরাদ্দের পুরো অর্থ পরিশোধ করা হয় ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে।

আবদুল জলিল নামে এই প্রকল্পের একজন নির্মাণ শ্রমিক গাইডওয়াল নির্মাণের অনিয়ম প্রসঙ্গে বলেন, বেইজ ঠিক ছিলোনা, পাইলগুলো যতটা গভীরে স্থাপন করা উচিত ছিলো তার অর্ধেক গভীরতাতেও স্থাপন করা হয়নি। রড, পাথর, সিমেন্ট কোনো কিছুর অনুপাতই সঠিক ছিলোনা যার কারনে সবকিছু ধ্বসে পড়েছে। তাদের কাছে ক্ষমতা ছিলো, কেউ ভয়ে কিছু বলতে সাহসও পায়নি।

এই প্রকল্পের প্রধান তদারককারী কর্মকর্তা ছিলেন বাউফল পৌরসভার প্রকৌশলী আতিকুল ইসলাম।

এরপর ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্পের (এডিপি) আওতায় হেলেপড়া গাইডওয়ালের পাশে নেয়া হয় ড্রেনেজ সিস্টেম, ৬৬০মিটার দীর্ঘ ওয়াক ওয়ে, ঘাটলা নির্মাণসহ আরো একাধিক প্রকল্প। এই সকল প্রকল্পের ভাগ্যেও ঘটে একই পরিনতি। নির্মাণ কাজ শেষ না হতেই খালের জোয়ার ভাটার পানিতে বালি সরে গিয়ে ড্রেনসহ পুরো ওয়াক ওয়ে দেবে যায়। খালের পাশে বালি ভরাট করে এই সকল প্রকল্প নির্মাণ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়লে বিষয়টি তদন্তে আসে দূর্নীতি দমন কমিশন। তবে সেই তদন্ত প্রতিবেদন কিংবা এই সকল প্রকল্পে কতোটাকা ব্যায় করা হয়েছে এই সকল তথ্য কখনোই প্রকাশ করা হয়নি। কাগজে কলমে সরু খালকে নদী বানিয়ে প্রাকৃতিক দূর্যাগের কারন দেখিয়ে হালাল করা হয় পুরো বিষয়টি। 

নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, কাগজে কলমে এই সকল প্রকল্পগুলোর ঠিকাদার হিসেবে ভিন্ন ভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নাম থাকলেও সকল কাজের প্রকৃত ঠিকাদার ছিলেন মেয়র জিয়াউল হক জুয়েল নিজেই। ওই একই স্থানে আইইউআইডিপি ও বিএমডিএফের ফান্ডিং থেকেও একাধিক প্রকল্পের নামে বরাদ্দ দিয়ে লুটপাট করা হয়েছে সরকারি অর্থ। 

হাফেজ মো. আনিচুর রহমানে নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, হেলেপড়া গাইডওয়ালের পাশে বালু ভরাট করে কেনো কার স্বার্থে ড্রেনেজ সিস্টেম করা হয়েছিলো সেই বিষয়টি আদৌ বোধগম্য নয়। এই ওয়াক ওয়ে দিয়ে কোনো মানুষ এক দিনও হাটতে পারেনি। তার আগেই সব শেষ। 

এ বিষয়ে প্রকৌশলী মু. আতিকুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেক পুরনো প্রকল্প, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারনে এমন হয়েছে, আর আমরা যখন বিল পরিশোধ করেছি তখন সব ঠিকঠাক ছিলো। 

এ বিষয়ে বাউফল পৌরসভার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা মো. বশির গাজীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন বিষয়টি জানা নেই, জেনে জানাবো।

আরবি/জেডআর

Link copied!