ঢাকা শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

লামায় ইউপি চেয়ারম্যান ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়

তারেক আহমেদ বোখারী, লামা

প্রকাশিত: নভেম্বর ২, ২০২৪, ০৫:১৩ পিএম

লামায় ইউপি চেয়ারম্যান ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়

ইউপি চেয়ারম্যান মো. ওমর ফারুক। ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

বান্দরবানের লামায় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ফাইতং ইউপি চেয়ারম্যান মো. ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। দলীয় প্রভাব খাটিয়ে চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকেই বিচার বাণিজ্য, সনদ বাণিজ্য, জায়গা দখল ও সরকারি প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন এই চেয়ারম্যান। তার আমলে টিআর, কাবিখা, জিআর কাবিটা, ভিজিডি-ভিজিএফসহ ইউনিয়ন পরিষদ-জেলা পরিষদ গেইটের ডাক কৌশলে নিজ কজ্বায় রেখে গলাকাটা টেক্স আদায়ের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উদ্যোক্তার যায়গায় তার জামাইকে বসিয়ে নাগরিক সনদ, জন্ম নিবন্ধনে ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে পাঁচ হাজার এমনকি এক জন্ম নিবন্ধনে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত দাবী করেছেন মর্মে অভিযোগ রয়েছে।

ভুক্তভোগী রবিউল হোসেন বলেন,আমার জন্ম নিবন্ধন এর বয়স বাড়াতে গেছিলাম। তখন ৫ হাজার টাকা দাবি করায় কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে না করে ফিরে আসি। কিছুদিন পর অন্যজনকে দিয়ে ফাইল পাঠালে ২০ হাজার টাকা দাবি করে বসে। পরে যে কোন মাধ্যমে ৫ হাজার টাকা দিয়ে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করি।

লাবিব আব্দুল্লাহ নামে আরেক ভুক্তভোগী বলেন, ২ শত টাকা দিয়ে আমার ছেলের জন্ম নিবন্ধনের আবেদন চার মাস গত হলেও এখনো খবর নেই। ওবায়দুল্লাহ আল বারী নামে একজন বলেন, ৩ শত ১০ টাকা জন্ম নিবন্ধন এবং ২ শত ১০ টাকা দিয়ে চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট আবেদনের ২ দিন পর  যোগাযোগ করতে বলা হলেও মাস পার হয়ে যায়।

এতদিনেও কেন করা হয়নি জানতে চাইলে কাগজপত্র আমার সামনে ছুড়ে মারে ডিজিটাল উদ্যোক্তা মো. মিজানুর রহমান রুবেল। এই উদ্যোক্তা চেয়ারম্যানের আত্মীয়তার সুবাদে এবং রাজনৈতিক প্রভাবে কাউকে পাত্তা দেয় না। আমার সামনে অনেক মহিলাকেও খারাপ আচরণ করতে দেখলাম। চেয়ারম্যান পরিষদকে পরিবারতন্ত্র করে ফেলেছে। সাধারণ জনগণের কোন মুল্য নাই তার কাছে। আমরা কেউ কোন কথা বলতে পারিনা।

জায়গায় দখল করিয়ে দেয়ার নামে হতদরিদ্র মো. এনাম থেকে ও সদ্য ক্যান্সার আক্রান্ত সাইফুল এর কাছ থেকে বিচার সালিশের নামে টাকা খেয়ে বসলেও শেষ সমাধান দিতে ব্যর্থ হয় চেয়ারম্যান। পরে টাকাগুলো দাবি করলে বিভিন্ন হয়রানির শিকার হন তারা। সরকারি ঘর দেয়ার নামে প্রতিঘর থেকে হাতিয়ে নিয়েছে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা। ভিজিডি, ভিজিএফ চাল বিতরণে দলীয়করণ ও স্বজন প্রীতিসহ দলীয় লোক দিয়ে সাধারণ জনতার উপর অত্যাচার, নানাভাবে হয়রানি ও চাঁদাবাজির অভিযোগেরও শেষ নেই।

এ ছাড়া ফাইতং এর দিমুখী মালিকানাধীন বিরোধপূর্ণ জায়গা টাকার বিনিময়ে ব্যক্তিগত প্রভাব খাটিয়ে এক পক্ষীয় ভাবে জবরদখল করে দেয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। একই সাথে জায়গা দখল করে দেয়ার নামে সুযোগ বুঝে নিজেও জায়গার ভাগ নিয়ে নিতেন বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা।এলাকার প্রতি ব্রিক ফিল্ড থেকে বিভিন্ন ট্যাক্স ও আইনি বাহানা দিয়ে দেড় লক্ষ টাকা করে চাঁদা নেন বলে জানিয়েছেন ব্রিক ফিল্ড কর্তৃপক্ষ।

স্থানীয় কৃষকরা জানিয়েছেন,নিজেদের কষ্টের ফসল সহ বিবিধপণ্য নিয়ে চকরিয়া আড়তে যেতে রশিদ বিহীন একাধিকবার টোল আদায়ের যাতাঁকলে পিষ্ঠ হতে হয়। একই পণ্য থেকে তিনবার টোল আদায়, এ যেন এক গরুকে তিনবার জবাই করার মতো। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, জনৈক ব্যক্তি গাড়িতে করে ছাগল নিয়ে যাচ্ছিল। তিনি বলেন, আমাদের একটা ছাগল নিয়ে যেতে এক টোলে গুনতে ২ থেকে ৩ শত টাকা। যথাক্রমে ইউপি, জেলা পরিষদ এবং বানিয়ারছড়া টোলে নিয়মবহির্ভূত টোল আদায় করতে হয়।

এদিকে ইউনিয়ন পরিষদে বরাদ্দকৃত প্রকল্পের নামেমাত্র কাজ করে সিংহভাগ টাকা আত্মসাৎ করেছেন সংশিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান। অনেক জায়গায় কাজ না করে মনগড়া প্রকল্প দেখিয়ে টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। যদিও এসব অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করছেন চেয়ারম্যান।

সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সংযুক্ত থাকায় ফোনে অনেককে হামলা এবং উঠাই নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেয়। এমনকি বিদ্যুৎ, টিউবওয়েল তুলে নেওয়ার হুমকি দেয় চেয়ারম্যান। ছাত্রজনতারা বলেন,গত ৫‍‍`আগস্ট সরকার পতনের পরপরই জনতার রোষানল থেকে বাঁচতে অনেক দিন অফিস করে নাই। এ কারণে ইউনিয়নের সেবা থেকে স্থানীয় মানুষরা অনেক দিন বঞ্চিত ছিল। এখনো তার দাপটে এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ ইউপি চেয়ারম্যান ওমর ফারুক অপসারণ দাবি করছি।

আরবি/জেডআর

Link copied!