ঢাকা শনিবার, ৩০ নভেম্বর, ২০২৪

বাগেরহাটে নারীদের নামে ঐতিহাসিক বিবি বেগনি মসজিদ

বাগেরহাট প্রতিনিধি

প্রকাশিত: নভেম্বর ৩০, ২০২৪, ০৪:১১ পিএম

বাগেরহাটে নারীদের নামে ঐতিহাসিক বিবি বেগনি মসজিদ

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

বাংলাদেশে নারীদের নামে প্রতিষ্ঠিত মসজিদগুলোর অন্যতম বিবি বেগনি মসজিদ। বাগেরহাটের ঐতিহাসিক ষাট গম্বুজ মসজিদের অদূরে এই মসজিদের অবস্থান। উভয় মসজিদের দূরত্ব ৮০০ মিটার। বিবি বেগনি মসজিদ বারাকপুর গ্রামের ঘোড়া দিঘির পশ্চিম পারে অবস্থিত।

ধারণা করা হয়, বিবি বেগনি নামের একজন মুসলিম নারী এই মসজিদ নির্মাণ করেন। তবে তিনি কে ছিলেন তা স্পষ্ট নয়। বিবি বেগনি তাঁর জীবদ্দশায় ঐতিহাসিক এই মসজিদ নির্মাণ করে যান। তাঁর পরিচয় সম্পর্কে তিনটি বক্তব্য পাওয়া যায়-ক. তিনি খান জাহান আলী (রহ.)-এর ভক্ত ও অনুসারী ছিলেন, খ. তাঁর স্ত্রী ছিলেন, গ. তাঁর উপপত্নী (দাসী) ছিলেন।

এটি বাংলাদেশের বৃহদাকার একটি এক গম্বুজ মসজিদ। বিবি বেগনি মসজিদ ইটের তৈরি। মসজিদের চার কোণে চারটি মিনার আছে। মিনারসহ চার দিকের দেয়ালের দৈর্ঘ্য ১৬.১৫ মিটার এবং দেয়ালের পুরুত্ব তিন মিটারের চেয়েও বেশি।

পূর্ব দেয়ালে তিনটি এবং উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালে একটি করে খিলানাকার প্রবেশপথ আছে। পূর্ব দিকের মাঝের প্রবেশপথটি অন্যগুলোর তুলনায় কিছুটা বড়। মসজিদের উত্তর ও দক্ষিণ প্রাচীরে দুটি করে মোট চারটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কুলঙ্গি আছে। প্রধান মিহরাবে একটি করে অত্যন্ত ক্ষুদ্র দুটি কুলঙ্গি আছে। ভেতরের প্রাচীরে বিভিন্ন স্থানে চুরে আস্তর দেখা যায়।

মসজিদের পশ্চিম দিকের দেয়ালে অর্ধবৃত্তাকার খিলানযুক্ত তিনটি মিহরাব আছে। মাঝখানেরটি অন্য দুটির চেয়ে আকারে বড় এবং দেয়ালের বহির্ভাগে আয়তাকারে বর্ধিত। কেন্দ্রীয় মিনারে তুলনামূলক বেশি পোড়ামাটির অলংকরণ রয়েছে। মসজিদের প্রধান প্রার্থনা কক্ষটি বৃহৎ গোলার্ধ আকৃতির ইটের গম্বুজ দ্বারা আচ্ছাদিত, যা অর্ধগম্বুজাকৃতি স্কুইঞ্চের ওপর বসানো। বর্তমানে মিহরাব, খিলানপথ ও চার কোণের মিনারে টেরাকোটা অলংকরণের অতি সামান্যই অবশিষ্ট আছে। এর মধ্যে লজেন্স ও শিকল নকশা, গোলাপ, পাপড়িযুক্ত পুষ্প এবং অলংকৃত খাঁজকাটা খিলান পরিলক্ষিত হয়।

ঐতিহাসিক স্থাপনাটি মসজিদ নামে পরিচিত ও ব্যবহৃত হলেও এ ব্যাপারে ভিন্নমতও আছে। কারো কারো মতে, এটি মূলত একটি সমাধিসৌধ। খান জাহান আলী (রহ.) তাঁর প্রিয়তমা স্ত্রীর কবরের ওপর এটি নির্মাণ করেছিলেন। তবে খননকাজের মাধ্যমে অনুসন্ধান না হওয়ায় সমাধিসৌধের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। অবশ্য খান জাহান আলী (রহ.)-এর সময়ে নির্মিত অন্যান্য মসজিদের সঙ্গে তুলনা করলে এটিকে মসজিদ বলেই প্রবল ধারণা হয়।

যেমন-পশ্চিম দেয়ালের তিনটি মিহরাব, পূর্ব দেয়ালের তিনটি দরজা এবং উত্তর-দক্ষিণের দরজা দুটি ইত্যাদি। অবশ্য যারা এটাকে সমাধি দাবি করেন, তাঁরা বলেন-উপমহাদেশে এমন বহু সমাধিসৌধ আছে, যাতে মিহরাব যুক্ত করা হয়েছে। দিল্লিতে অবস্থিত ইলতুিমশ, গিয়াসউদ্দিন তুগলক ও ফিরোজ শাহ তুগলক প্রমুখের সমাধি।

বিবি বেগনি মসজিদের বৈশিষ্ট্য থেকে স্পষ্টত প্রমাণ হয় এটা খান জাহান আলী (রহ.)-এর যুগে তথা খ্রিস্টীয় ১৫ শতকের মধ্যভাগে নির্মিত। তবে বর্তমানে মসজিদের যে অবয়বটি দেখা যাচ্ছে তাতে ব্যাপক সংস্কার করা হয়েছে। বাংলাদেশের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর মসজিদের মূল কাঠামো ঠিক রেখে এর সংস্কারকাজ করেছে। ১৯৫৯ সালে সরকার এটিকে সংরক্ষিত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ঘোষণা করে।

আরবি/জেডআর

Link copied!