নওগাঁর বদলগাছীতে ছাত্রদলের এক সদস্যকে নিয়ে ঘটেছে আটক-ছেড়ে দেওয়ার খেলা। অভিযোগ থানার অফিসার ইনচার্জ তাকে আটক করার পর আবারও ছেড়ে দিয়েছেন। সরকারি মোটরসাইকেল গোপনে ব্যবহার করার অপরাধে বদলগাছী উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য আসাদুজ্জামান ভুট্রু (৪২) কে আটক করে পুলিশ। শুক্রবার ২২ নভেম্বর রাত ৭ টার দিকে উপজেলার হাটখোলা বাজারের একটি চায়ের দোকান থেকে তাকে নিয়ে যায় পুলিশ। এরপর ওই দিনই অনেক নাটকীয়তার পর গভীর রাত ২ টার দিকে ছেড়ে দেওয়া হয়। মোটরসাইকেলের ঘটনায় তাকে আরও একবার থানায় নিয়ে এসে ছেড়ে দেওয়া হয়। ফলে শুরু হয় নানা সমালোচনা আলোচনা। পুলিশ ও ভুট্রুর মধ্যে আটক-ছেড়ে দেওয়ার চলছে ভেলকিবাজি এমনটাই বলেছেন কৌতূহলবশত উৎসুক জনতা।
এদিকে আটক করার কারণে মান সন্মানের হানি হয়েছে বলে জানালেন ছাত্রদলের সদস্য ভুট্রু। অপরদিকে বেশি কথা বলার কারণে ভুট্রুকে থানায় আনা হয়েছিল বলে জানালেন ওসি।
শনিবার ২৩ নভেম্বর সকালে জানতে চাইলে বদলগাছী উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক কমিটির এক নং সদস্য দাবি করে আসাদুজ্জামান ভুট্রু মুঠোফোনে বলেন, আমাকে রাত সাত টার সময় পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। এবং ওই দিনই রাত দুই টার দিকে ছেড়ে দেয়। এর আগেও একবার নিয়ে গিয়েছিল। তখন আমি ওই গাড়িটি বুঝিয়ে দিয়েছিলাম। তারপরও আমাকে হেনস্থা করা হলো। আমার মান সন্মাহের হানি করল পুলিশ। আসলে আমার প্রতিপক্ষরা এই ঘটনা ঘটিয়েছে। এছাড়া আমার কাছ থেকে কেউ গাড়ি না চাওয়ায় আমি দিতে পারিনি। কারণ আমার কাছে কেউ চায়নি। সরকারি গাড়ি আপনি ব্যবহার করতে পারেন কিনা এমন প্রশ্নে দায়সারা জবাব দিয়ে তিনি বলেন, আমি একটা মাধ্যমে ব্যবহার করেছি, সে না চাওয়াতে আমি ফেরত দিইনি। তবে তার সাথে কি সম্পর্ক সেটা প্রকাশ না করতে অনুরোধ করেন তিনি।
আর ধরে নিয়ে আসার কথা স্বীকার করে থানার অফিসার ইনচার্জ শাহ্জাহান আলী মুঠোফোনে বলেন, সরকারি মোটরসাইকেলের কারণে আসাদুজ্জামান ভুট্রুকে থানায় নিয়ে আসা হয়েছিল। সে উল্টাপাল্টা কথা বলে, তাই তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা হয়েছিল। লকাপে ঢোকানোর পর ছেড়ে দেওয়া যায় কিনা এমন প্রশ্নে তিনি দায়সারা জবাব দিলেন। এর আগেও তাকে নিয়ে এসেছিলেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, তখন মোটরসাইকেল আমরা নিয়ে আসি, সেই জন্য তিনি মোটরসাইকেলের পিছনে থানায় এসেছিলেন। আর জিডির কারণে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সাথেও আলোচনা করা হয়েছিল বলে জানান তিনি।
জানার জন্য নওগাঁর পুলিশ সুপার কুতুব উদ্দিনের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ না করায় কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
এর আগে গত ২৩ সেপ্টেম্বর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কম্পিউটার অপারেটর শিল্পী আক্তার বাদি হয়ে একটি ডিসকভার মোটরসাইকেল হারিয়ে যায় বলে থানায় জিডি করেন। সেই জিডির প্রেক্ষিতে আরও একবার গত বৃহস্পতিবার ৩১ অক্টোবর উপজেলার বাসস্ট্যান্ড বাজার এলাকায় অন্তর প্রসাধণীর দোকান থেকে ভুট্রুকে নিয়ে যায় পুলিশ। এসময় তার কাছ থেকে সরকারি ওই মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করা হয়। বর্তমানে মোটরসাইকেলটি থানা হেফাজতে আছে।
জানা যায়, বদলগাছী উপজেলা পরিষদের সিএ-কাম কম্পিউটার অপারেটর শিল্পী আক্তার বাদি হয়ে থানায় একটি জিডি (সাধারণ ডায়েরি) করেন। জিডিতে উল্লেখ করা হয় গত ২০২১ সালে ৫ম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে খালেদা আক্তার কল্পনা মহিলা ভাইচ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে সরকারি কাজের সুবিধার্থে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল মোটরসাইকেলটি। কিন্তু গত ২৯ মে দায়িত্বের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও খালেদা আক্তার কল্পনা তার কাছে থাকা মোটরসাইকেল জমা দেননি। এমনকি নোটিশ দেওয়ার পরও কোনো কর্ণপাত করেননি। মোটরসাইকেলটি উপজেলার বালুপড়া এলাকার আসাদুজ্জামান ভুট্রু ব্যবহার করছে বিষয়টি জানতে পেরে ভবিষ্যতের জন্য থানায় জিডি করা হয়।
স্থানীয়রা জানান, খালেদা আক্তার কল্পনা মহিলা ভাইচ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি মোটরসাইকেল দেওয়া হয়। কিন্তু গাড়িটি চালাতেন ছাত্রদলের ওই সদস্য আসাদুজ্জামান ভুট্রু। সেই গাড়িতেই চলাচল করতেন ভাইস চেয়ারম্যান। এরপর বনিবনা না হওয়ায় একসময় তাদের মেলামেশা ও চলফেরা কমে যায়। এর মধ্যে ভাইস চেয়ারম্যান খালেদা আক্তারের কাছে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওই মোটরসাইকেলটি ফেরত চাওয়া হয়। কিন্তু মোটর সাইকেল ভুট্রুর কাছে থাকায় ফেরত দিতে পারেনি সাবেক ওই মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান। বাধ্য হয়ে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য থানায় জিডি করা হয়।
এদিকে আসাদুজ্জামান ভুট্রুকে আটকের বিষয় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে কেউ প্রতিবাদ জানান। আবার কেউ কেউ তীব সমালোচনা করেন।
আপনার মতামত লিখুন :