বরগুনা: কৃষি জমি অকৃষি বানিয়ে একটি বেসরকারি বিদ্যুৎ কোম্পানিকে বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। বরগুনার তালতলীতে বিভিন্ন সময় অসহায় ও ভূমিহীনদের ১৫৭.২৯ একর কৃষি খাস জমি বন্দোবস্ত দেয়া হয়। কোন প্রকার নোটিশ ছাড়াই ওই বন্দোবস্ত গুলো বাতিল করেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। পরবর্তীতে ঐ কৃষি জমিকে অকৃষি দেখিয়ে বরিশাল ইলেকট্রিক পাওয়ার কোম্পানিকে স্থায়ী বন্দোবস্ত দেন ভূমি মন্ত্রণালয়। এতে সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে শতাধিক পরিবার। সহায় স্বমল হারিয়ে এসকল পরিবার এখন দিশেহারা।
তালতলী সহকারী ভূমি কমিশনারের দাবি বন্দোবস্তের শর্ত ভঙ্গ করায় পূর্বের বন্দোবস্তু গুলো বাতিল করা হয়েছে। জেলা প্রসাশক বলছেন বিষটি ক্ষতিয়ে দেখে ক্ষতিগ্রস্থদের পুনার্বাসনের ব্যাবস্থা করবেন তারা। ভুক্তভোগী ও ক্ষতিগ্রস্তরা বলছেন বিভিন্ন সময় তারা জেলার রাজনৈতিক ব্যক্তি ও জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে প্রশাসনের কাছে গিয়েও অদৃশ্য কোন কারনে সমাধান পাচ্ছেন না। তাই তারা দ্রুত এই সমস্যার সমাধান চান।
১৯৬০ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময় তালতলী উপজেলার ৪১ নং ছোট নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের খোট্টার চর এলাকায় ৮২টি ভুমিহিন পরিবারকে ১৫৭ একর কৃষি খাস জমি বন্দোবস্ত দেয়া হয়। এসকল বন্দোবস্ত দেয়া জমি গত বছর ২০ জুলাই বাতিল করে দেন জেলা কৃষি খাসজমি ব্যাবস্থাপনা ও বন্দোবস্ত কমিটি। ঐ একই বছরের ৩১ আগস্ট ৩০৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য বরিশাল ইলেকট্রিক পাওয়ার কোম্পানিকে দীর্ঘ মেয়াদি বন্দোবস্ত দেয়া হয়। চলতি বছরের ৭ জুলাই জেলা প্রশাসনের পক্ষে সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী মেজিস্ট্রেট রিন্টু চাকমা এবং সহকারী কমিশনার ভূমি অমিত দত্ত সরেজমিনে গিয়ে কোম্পানিকে বুঝিয়ে সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেন। এমনকি উক্ত জমিতে কেহ পুনঃ দখল করতে না পারে সেজন্য জমি মেপে সীমানা পিলারও বসিয়ে দেন।
খাস জমি বন্দোবস্ত বাতিল হওয়ার বিষয় জানতে চাইলে অসহায় ভূমিহীন সবুজ হাওলাদার ও খাদিজা বেগম বলেন, গত ২০০১ সালে ১ একর কৃষি খাসজমি বন্দোবস্ত দেয়া হয়। তারা ওই জমিতে গত ২৩ বছর ধরে কৃষি কাজ করে ও পায়রা নদীতে মাছ ধরে জীবন যাপন করছিল। হঠাৎ কোন প্রকার নোটিশ ছাড়াই গত ৫ জুলাই ওই জমি বরিশাল ইলেকট্রিক পাওয়ার কোম্পানিকে দখল বুঝিয়ে দেন তালতলী ভূমি কর্মকর্তা অমিত দত্ত । এতে দুই সন্তান নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে তাদের জীবন জীবিকা।
এছাড়াও বসবাসরত ভুক্তভোগীরা বলেন, তারা এই জমিতে দীর্ঘদিন ধরে চাষাবাদ করে জীবনযাপন করছেন তারা। কোন প্রকার নোটিশ ছাড়া তাদের নামে বরাদ্ধের জমি বেসরকারি বিদ্যুৎ কোম্পানিকে দিতে পারে না সরকার। এই জমি চলে গেলে শতাধিক পরিবারকে নিঃস্ব হয়ে যাবে এমনকি মাথা গুজার স্থান টুকু থাকবে না তাদের। তাই তারা ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছে সরকারের কাছে।
এ বিষয়ে তালতলী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অমিত দত্তের দাবি, বন্দোবস্তু নেয়া জমির মালিকরা সরকারি শর্ত ভঙ্গ করেছেন। তাই তাদের বন্দোবস্ত বাতিল করা হয়েছে। পরে ওই জমি ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে স্থায়ী বন্দোবস্ত নিয়েছে বরিশাল ইলেকট্রিক পাওয়ার কোম্পানি।
এ ব্যাপারে বরগুনার জেলা প্রশাসক মোহা. রফিকুল ইসলাম বলেন বিষয়টি খতিয়ে দেখে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার বিষয় সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠাবেন তারা।
আপনার মতামত লিখুন :