আবহমান বাংলার গ্রামগঞ্জে ধূমপায়ীরা হুক্কার মাধ্যমে তামাক পানে অভ্যস্ত ছিলেন। মজুর থেকে শুরু করে জমিদার বাড়ি পর্যন্ত হুক্কার প্রচলন ছিল সর্বত্র। বহুযুগ আগে থেকেই জনপ্রিয় ধূমপানের একমাত্র মাধ্যম ছিল হুক্কা। প্রবীণ মানুষেরা এ হুক্কার মধ্যে খুঁজে পান ইতিহাস, ঐতিহ্য আর মাটির গন্ধ।
কিন্তু কালের আবর্তে প্রায় হারিয়ে গেছে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী হুক্কা। প্রায় একযুগ আগেও চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রায় ঘরে হুক্কার প্রচলন ছিল। সে সময়কার মতো এখন আর তা চোখে পড়ে না। গ্রামের বৈঠকখানা গুলোতে পালাক্রমে হুক্কা টানতো বিভিন্ন বয়সের পুরুষেরা। বিত্তবানদের বাড়িতে ছিল নলের হুক্কা।
চেয়ারে গা হেলিয়ে আয়েশী ভঙ্গিতে গৃহকর্তা নলের পাইপ মুখে দিয়ে যখন জমিদারী ভঙ্গিমায় হুক্কায় টান দিতেন তখন এ দৃশ্য পানে অপলক চোখে চেয়ে থাকতেন বৈঠকখানায় আগত মেহমানরা। তামাক পাতা টুকরো টুকরো করে কেটে চিটাগুড় মিশ্রন করে তৈরি করা হয় হুক্কার প্রধান উপাদান তামুক। মাটির তৈরি কল্কির ওপর তামুক রেখে টিক্কায় আগুন ধরিয়ে দিয়ে নি:সরিত ধোঁয়া হুক্কার তলনির পানিতে ডুবিয়ে কুড়ুত কুড়ুত শব্দ বের হয়ে আসতো। তা থেকে একপ্রকার সুগন্ধি বের হতো। প্রতিবন্ধকতার কারণে এ দৃশ্য দেখা সম্ভব না হলেও হুক্কার শব্দে দুর থেকে বুঝা যেত আশেপাশে কেউ হুক্কা টানছে। এখন আর সেই চিরাচরিত পরিচিত দৃশ্যটি খুব একটা দেখা যায় না বললেই চলে। কালের আবর্তে হারিয়ে গেছে সেই ঐতিহ্যের অনেকটাই।
বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই হুক্কা খাবে দুরে থাকুক দেখেইনি। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে হুক্কার স্থান দখল করে নিয়েছে বিড়ি, সিগারেট, গাঁজাসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য। যার মধ্যে ক্ষতিকর নিকোটিন রয়েছে শতকরা। তারপরেও এগুলোর নেশায় নতুন করে আসক্ত হয়ে পড়ছে লাখ লাখ উঠতি বয়সের যুবকরা। যাদের নিয়ে সিংহভাগ অভিভাবক সব সময় উদ্বিগ্ন থাকেন।
আপনার মতামত লিখুন :