বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মো. সেলিম রেজা, নকলা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২, ২০২৫, ০৬:১৭ পিএম

শেরপুরে ঘোড়া দিয়ে হালচাষ

মো. সেলিম রেজা, নকলা

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২, ২০২৫, ০৬:১৭ পিএম

শেরপুরে ঘোড়া দিয়ে হালচাষ

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

অতীতে জমিতে হালচাষের জন্য সারাদেশে গাঁয়ের মেঠো পথে-প্রান্তরে দেখা যেত গরু ও মহিষের ব্যবহার। এখন চাষাবাদে আর গরু ও মহিষের ব্যবহার খুব বেশি দেখা যায়না। বর্তমান যুগে
কালেভদ্রে অনেক জায়গায় চাষে পশুর ব্যবহার দেখা গেলেও তা নিত্যান্তই কৃষকরা অসুবিধায় পড়ে ব্যবহার করতে বাধ্য হন। এখন পশু দিয়ে হালচাষের পরিবর্তে এসেছে আধুনিক বিভিন্ন প্রযুক্তি। আধুনিক প্রযুক্তি ছোঁয়ায় বিলুপ্তির পথে চিরচেনা হালচাষের এই পদ্ধতি। প্রযুক্তির যাঁতাকলে পিষ্ট লাঙল-গরুর সেই ঐতিহ্যের হালচাষ। তাই নতুন প্রজন্মের অনেকের কাছেই জমিতে গরু মহিষ দিয়ে লাঙল-মই টানার দৃশ্য অনেকটাই অপরিচিত।

সময় অতিবাহিত হবার সাথে সাথে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের ধারক-বাহক অনেক বাহনেরই আমূল পরিবর্তন হয়েছে, করা হয়েছে আধুনিকায়ন। আবার ঐতিহ্যবাহী অনেক বাহনই হারিয়ে
গেছে। হারিয়ে যাওয়ার পথে চলা এমন একটি বাহন ঘোড়ার গাড়ি। যা আজকাল সচরাচর দেখা যায়না। মান্ধাতার আমলে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ঘোড়ার গাড়ি বহুবিধ কারণে বর্তমানে
হারিয়ে যেতে বসেছে দৃশ্যপট থেকে।

কালের পরিবর্তনে আধুনিকতার ছোঁয়ায় কৃষি ক্ষেতে চাষের ক্ষেত্রেও এসেছে পরিবর্তন। জমি চাষের প্রয়োজন হলেই সময় ও শ্রম বাঁচাতে পাওয়ারট্রিলারসহ আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে চলছে
জমি চাষাবাদ। ফলে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে গরু, মহিষ ব্যবহারে লাঙল ও জোয়াল দিয়ে জমি চাষের চিত্র। বিলুপ্তির পথে সেই চিরচেনা হালচাষের পদ্ধতি। ঠিক এমন সময়ে এসেও প্রচলিত চাষে গরু ও মহিষের পরিবর্তে ঘোড়া দিয়ে জমিতে হালচাষ করছেন শেরপুর সদর উপজেলার বেতমারী গ্রামের আব্দুল আজিজের ছেলে কৃষক আব্দুল মান্নান।

সম্প্রতি বেতমারী উত্তর পাড়া এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কৃষক আব্দুল মান্নান চলতি মৌসুমের জন্য বোরো বীজতলা তৈরিতে মধ্য বয়সি দুইটি ঘোড়া দিয়ে অনায়াসে জমি
চাষ করছেন। আধুনিকতার স্পর্শে ঐতিহ্যবাহী গরু ও মহিষ দিয়ে হাল-চাষ করার চিত্রই যেখানে শুধুই অতীতের স্মৃতি বহন করছে; সেখানে ঘোড়া দিয়ে জমিতে হাল-চাষ করে সব বয়সের ও
পেশাশ্রেণি জনগনের নজর কেড়েছেন।

বেতমারী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আকাশ আহম্মেদ বাদল জানান, বিভিন্ন মৌসুমে জমি হালচাষের সময় হলে প্রায় প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকার লোকজন তাদের সন্তান-সন্ততি নিয়ে
ঘোড়ার হালচাষ দেখতে আব্দুল মান্নানের বাড়িতে বা তার মাঠসহ বেতমারী এলাকায় বেড়াতে যান। তথ্য-প্রযুক্তির অত্যাধুকি প্রযুক্তিরযুগে এসেও ঘোড়া দিয়ে জমিতে হালচাষের দৃশ্য বিরল!
আধুনিকতার চরম উৎকর্ষের এই যুগে বাস্তবেই ঘোড়া দিয়ে হালচাষ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন বেতমারী গ্রামের আব্দুল মান্নান।

ঘোড়া দিয়ে চাষ করা কৃষক আব্দুল মান্নান বলেন, প্রথম অবস্থায় ঘোড়া দিয়ে হাল জোরতে গেলে বেশ সমস্যা হতো। তার কাঁধে জোয়াল দিতেই ছুটাছুটি শুরু করতো। তবে চাষে নেওয়ার
আগে ও হাল শেষে বাড়ি ফিরে ঘোড়াকে ভালো খাবার দিতাম। এতে বেশ কয়েক দিন চেষ্টার পরেই হয়তোবা খাবারের লোভেই সব মেনে নেওয়া শুরু করে। এখন গরু ও মহিষের মতোই স্বাভাবিক ভাবে দুইটি ঘোড়া দিয়েই তার সব জমিতে হালচাষ করছেন। নকলা ও শেরপুর সদর উপজেলার চরাঞ্চলে বেশ কয়েকজন কৃষক ঘোড়া দিয়ে তাদের জমি চাষাবাদ করেন বলেও আব্দুল মান্নান জানান।

নকলা উপজেলার পলাশকান্দি এলাকার সেলিম রেজা বলেন, আগে গরু বা মহিষ দিয়ে জমি হালচাষের চিত্র দেখেছি। কিন্তু ঘোড়া দিয়ে জমি চাষ করতে দেখিনাই। তিনি জানান, এক সময় শুধু রাজা-জমিদারসহ ধনাঢ্য পরিবারের মানুষের বাহন হিসেবে ঘোড়া বা ঘোড়ার গাড়ি ব্যবহার করা হতো। কালক্রমে গ্রামবাংলার বিভিন্ন পেশাশ্রেণি মানুষের উত্তম বাহন হিসেবে ঘোড়ার
ব্যবহার শুরু হয়। তবে এর ব্যবহার বেশি দিন টিকেনি।

বানেশ্বরদী গ্রামের খন্দকার জসিম উদ্দিন মিন্টু বলেন, আধুনিক যান্ত্রিক যানবাহনের যাতাকলে পিষ্ট হয়ে বর্তমানে প্রায় বিলুপ্তির পথে ঘোড়ার গাড়ি! ইঞ্জিনের স্পর্শে আবহমান গ্রাম
বাংলার ঐতিহ্যবাহী অনেক যানবাহনই কালের পরিক্রমায় পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এসময় ঘোড়া দিয়ে জমি হালচাষ করার চিত্র যেন এক চমৎকার দৃশ্য।

আরবি/জেডআর

Link copied!