ঢাকা মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

ভেদরগঞ্জে মাধ্যমিক শিক্ষা সংস্কার ও বিভিন্ন দাবিতে মানববন্ধন

মো. বিল্লাল হোসেন সরদার, ভেদরগঞ্জ

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২৪, ০৫:৫৬ পিএম

ভেদরগঞ্জে মাধ্যমিক শিক্ষা সংস্কার ও বিভিন্ন দাবিতে মানববন্ধন

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

দেশব্যাপি কর্মসূচীর অংশ হিসেবে শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলায় মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারী ও বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সমাবেশ, মানববন্ধন ও স্মারক লিপি প্রদান করেছেন।

মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ের সামনে সমবেত হয়ে স্কুল-মাদ্রাসার শিক্ষক ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীরা এ মানববন্ধন করে্ন। 

বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে, বৈষম্য দুরীকরণের মাধ্যমিক স্তরে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয় করণ, এর পূর্ব পর্যন্ত শিক্ষা প্রশাসনের বিভিন্ন পদে সরকারি স্কুলের শিক্ষকদের পদায়ন বন্ধ ও শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠনের দাবী জানানো হয়। এর পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে শিক্ষা উপদেষ্টা ও শিক্ষা সচিব বরাবরে স্মারক লিপি প্রদান করা হয়। 

মানববন্ধনে দাবীসমূহ উপস্থাপন করেন, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এস এম গিয়াস উদ্দীন আহম্মেদ। বক্তব্য রাখেন একাডেমীক সুপার ভাইজার মোহাম্মদ মস্তফা কামাল, স্কুল পর্যায়ে প্রধান শিক্ষক মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান, মো. শাহ আলম বিপ্লব, সুলতানা মুক্তা। মাদ্রাসা পর্যায়ে কেএম মকবুল হোসাইন, সহকারি অধ্যাপক আলহাজ্ব মাওলানা আবুজাফর সালেহ, আলী হোসাইন মুজাহিদ।

এ সময় উপজেলার ১১টি মাদ্রাসা ও ৪৭টি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রায় তিন শতাধিক শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারী উক্ত মানববন্ধনে অংশ গ্রহণ করেন। 

বক্তারা বলেন, একটি উন্নত আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে সুষম সুস্থ্য-পরিচ্ছন্ন মানবিক সমাজ গড়ে তোলার জন্য চাই সার্বজনীন শিক্ষার গভীর ও ব্যাপক আয়োজন। প্রাথমিক শিক্ষা হলো মৌলিক শিক্ষা। এই শিক্ষা সবাইকে গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা মানব সম্পদ সৃষ্টি করে না। অন্যদিকে উচ্চ শিক্ষা পেশাদারী শিক্ষা প্রদান করে এবং উচ্চতর জীবিকা সম্ভাবনাময় পেশাদাররা দেশের বাইরে চলে যায়। শুধুমাত্র মাধ্যমিক শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে যথার্থ জনসম্পদ সৃষ্টি হয়।

কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় পতিত ফ্যাসিষ্ট সরকার পরিকল্পিতভাবে মাধ্যমিক শিক্ষাকে ধংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছিল। জুলাই-আগষ্ট বিপ্লবের মধ্যদিয়ে ছাত্র-জনতার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে দেশ গড়ার যে স্বপ্ন আমাদের দেখিয়েছে তাতে আমরাও নতুন করে স্বপ্ন দেখছি। আমরা বিশ্বস করি বর্তমান সরকারের গতিশীল নেতৃত্বে মাধ্যমিক শিক্ষা আবার জেগে উঠবে। আমরা সরকারের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, আপনাদের এ স্বপ্নযাত্রায় আমরাও আপনার সহযাত্রী হতে চাই। 

তাই আমরা দাবি করছি, (১) মাধ্যমিক স্বরের প্রতিষ্ঠানের ৯৭% বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠান গুলি জাতীয়করণ করা অত্যন্ত জরুরী একই শিক্ষাগত যোগ্যতা, একই বই পড়ানো, একই বোর্ডের আওতায় পরীক্ষা, অথচ সরকারি ও বেসরকারি নাম দিয়ে আর্থিক ও সামাজিক মর্যাদার মধ্যে বিরাট বৈষম্য তৈরী করে রাখা হয়েছে যা শিক্ষার গুনগত মান উন্নয়নে প্রধান অন্তরায়। শিক্ষার সকল স্টেকহোল্ডারদের প্রাণের দাবি মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণ।

(২) শিক্ষা বিভাগের দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো একাডেমিক ও প্রশাসনিক। শিক্ষকগণ একাডেমীক কাজে দক্ষ। তাদের সকল প্রশিক্ষণ পেডাগোজি কেন্দ্রিক। ক্লাশ রুমের পঠন-পাঠনে তারা দক্ষ। অন্যদিকে শিক্ষা প্রশাসনে দীর্ঘ ৩১ বছরে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারদের সকল প্রশিক্ষণ প্রশাসনিক। শিক্ষকতা ও প্রশাসন ভিন্ন চরিত্রের, ভিন্ন বৈশিষ্ট্যের, কাজের ধরণ ভিন্ন, চর্চা বা অনুশীলন ভিন্ন শিক্ষকরা প্রশাসনে অনভিজ্ঞ, জেলা শিক্ষা অফিসার ও উপ-পরিচালক পদে তাঁদের পদায়ন করা হলে সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক শূন্যতা যেমন সৃষ্টি হয়, তেমনি শ্রেণি পাঠদানে অভিজ্ঞ একজন শিক্ষককে উল্লেখিত পদ সমূহে পদায়ন করা হলে বিভিন্ন বিধি বিধান সম্পর্কে পূর্ব জ্ঞান না থাকার কারণে অফিসের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন নিম্নপদের জনবলের পরামর্শ দ্বারাই প্রশাসন পরিচালিত হতে হয়। প্রশাসনিক দৃঢ় সিদ্ধান্ত তাঁরা গ্রহণ করতে পারেন না। এছাড়াও, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার পদে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষকগণকে পদায়ন করা হলে প্রশাসনিক অনভিজ্ঞ সিনিয়র শিক্ষকের অধীনে বেসরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসার প্রধানগণকে কাজ করতে হবে। এতে শিক্ষাঙ্গনে চরম অসন্তোষ সৃষ্টি হতে পারে। সে কারণে, উপজেলা, জেলা, অঞ্চল এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরেয় মাধ্যমিক শাখায় ৩১ বছর শিক্ষা প্রশাসনে কাজের দক্ষতা সম্পন্ন ৬ষ্ঠ গ্রেড প্রাপ্ত উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ও ৭ম গ্রেড প্রাপ্ত সহকারি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারদের পদোন্নতি ও পদায়নের জোর দাবী করছি।

(৩) শিক্ষার মাঠ প্রশাসনে কাজ করা ১০-২২ বছরের দক্ষ, অভিজ্ঞ ও প্রশিক্ষিত এসইএসআইপি এর ১১৮৭টি পদ জনবলসহ রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের অসমাপ্ত কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে হবে।

(৪) নানা মাত্রিক সমস্যায় মাধ্যমিক শিক্ষা জর্জরিত। স্কুল, মাদরাসা, সরকারি, বেসরকারি এভাবে নানারকম প্রতিষ্ঠান হওয়ায় এদের মধ্যে বৈষম্য প্রকট। দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থাকে যুগোপযোগী করতে একটি শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন করার জোর দাবি জানাচ্ছি।

আরবি/জেডআর

Link copied!