ইমাম নিয়ে সংঘর্ষের জের ধরে হবিগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শতাধিক লোক আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় হরষপুর রেলওয়ে ষ্টেশনের কিছু দোকানপাটসহ বেশ কিছু বাড়িঘর ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
শুক্রবার (১৬ আগস্ট) দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত প্রায় চার ঘণ্টাব্যাপী এ সংঘর্ষ হয়। সন্ধ্যায় সেখানে পুলিশ ছুটে যায় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ সংঘর্ষ হরষপুর রেলওয়ে ষ্টেশনে হওয়ার কারণে হবিগঞ্জ জেলার নোয়াপাড়া রেলওয়ে ষ্টেশনে দুটি আন্ত নগর ট্রেন আটকা পড়ে। খোজ নিয়ে জানা যায় সংঘর্ষে আহতরা হবিগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।
জানা গেছে, ঘটনার সূত্রপাত হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলায়। পরে সেটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলাতেও ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে মাধবপুর ও বিজয়নগরের বিভিন্ন গ্রামের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। সংঘর্ষে দেশীয় অস্ত্রেও প্রচুর ব্যবহার দেখা যায়। ব্যবহার করা হয় রেলওয়ের পাথর।
একাধিক সূত্র জানায়, বিজয়নগর উপজেলা সংগলগ্ন মাধবপুর উপজেলার হরষপুর রেলওয়ে ষ্টেশনের পাশে অবস্থিত জামিয়া হরষপুর দারুল উলুম মাদরাসা মসজিদের ইমাম নিয়ে দুই বছর ধরে দু পক্ষের বিরোধ চলছে। ওই মাদ্রাসা মসজিদের ইমাম মুফতি মো. বশিরের জিহ্বায় কথা আটকানোর কারণে শুদ্ধ উচ্চারণ হয় না বলে অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে একটি মামলাও হয়।
জানা যায়, সামাজিকভাবে সিদ্ধান্ত হয় যে মুফতি বশির ইমামতি করতে পারবেন না।
এদিকে দেশের সার্বিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে মুফতি বশিরকে আনতে তার পক্ষটি তোড়জোড় শুরু করে। আজ শুক্রবার জুমার নামাজে বশির ইমামতি করবেন বলেও ঘোষণা দেওয়া হয়। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। দুপুরে জুমার নামাজের পর এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে বেধে যায়। শুরুতে মাদরাসার ছাত্ররা আক্রমণের শিকার হন। পরে উভয় পক্ষ দলবদ্ধ হয়ে সংঘর্ষে জড়ায়। মাধবপুরের পার্শ্ববর্তী উপজেলা বিজয়নগরের কয়েকটি গ্রামের লোকজনও এ সংঘর্ষে জড়ালে পরিস্থিতি ভয়ংকর রূপ ধারণ করে। স্থানীয় একাধিক জনপ্রতিনিধি সংঘর্ষ থামাতে এগিয়ে গিয়ে অবস্থার অবনতি প্রেক্ষিতে সেখান থেকে তারা সরে যান।
ঘটনা স্থলে থাকা একজন জানান, ইমাম নিয়ে দুই বছর ধরে বিরোধ চলছে। এটাকে কেন্দ্র করে আজ জুমার নামাজের পর দুই পক্ষের হাজার হাজার লোক সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় কিছু ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে।
হবিগঞ্জের সহকারী পুলিশ সুপার (মাধবপুর সার্কেল) নির্মল চক্রবর্তী জানান, ইমাম নিয়ে বিরোধে মাধবপুর উপজেলার হরষপুরে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তবে সন্ধ্যার পর থেকে এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে বলে জানান পুলিশের ওই কর্মকর্তা।
এদিকে বিজয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি আসলাম হোসেন জানান, ঘটনার খবর পেয়ে বিজয়নগর থানা পুলিশ সেখানে অবস্থান করে। বিজয়নগর উপজেলার কয়েকটি গ্রাম এ সংঘর্ষে জরায় বলে জানতে পারি এবং হবিগঞ্জ ও বিজয়নগর পুলিশের অবস্থানে সন্ধ্যায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
আপনার মতামত লিখুন :