নরসিংদীর পলাশে অবৈধ ব্যাটারী কারখানার নির্গত গ্যাস আর পরিত্যক্ত ক্যামিকেলে কয়েক গ্রামের প্রায় তিন শতাধিক বিঘা জমির মাটি নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে পাঁচ বছর ধরে জমিগুলোতে ফসল ফলাতে ব্যর্থ হওয়ায় অনাবাদি অবস্থায় পড়ে আছে। কৃষকদের আবেদনের প্রেক্ষিতে একাদিকবার তদন্ত করা হয়েছে।তদন্তে কৃষকদের জমি ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার প্রমান পাওয়া গেলেও মিলছে না স্থায়ী কোন প্রতিকার।
সরেজমিনে কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, পলাশ উপজেলার কৃষি নির্ভর একটি অঞ্চল চরসিন্দুর ইউনিয়নের ফুলবাড়িয়া, দক্ষিনদেওড়া, মালিতা ও কালাপাইকা। এই গ্রামগুলোর প্রায় তিনশত বিঘা জমিতে দুই মৌসুমে প্রচুর পরিমানে ধান ফলে। বাকি সময় এতে পানি থাকায় প্রচুর পরিমানে মাছও উৎপাদন হয়। কিন্তু দীর্ঘ ৫ বছর ধরে ফুলবাড়িয়া এলাকায় নির্মানাধীন আশরাফ টেক্সটাইল নামে একটি ভবন ভাড়া নিয়ে একটি চক্র অবৈধভাবে শিন উয়ান চায়না ব্যাটারী ফ্যাক্টরী নামে এখানে ব্যাটারী কারখানা তৈরী করছে।
কারখানায় বর্জ্য শোধনাগার প্রকল্প (ইটিপি) থাকলেও এখানে তা ব্যবহার নেই। ফলে কারখানার নির্গত গ্যাস ও পরিত্যক্ত ক্যামিকেল মিশ্রিত বর্জ্য আশপাশের জমিতে ছেড়ে দেয়ার ফলে পানিতে মিশে সমস্ত জমিতে প্রবাহিত হয়। এতে জমির মাটি কালচে ও শক্ত হয়ে ফসল ফলানোর অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এখন জমিগুলোতে কোনো ফসল ফলানো সম্ভব হচ্ছেনা। তাই এই তিনশত বিঘা জমি অনাবাদি অবস্থায় পড়ে রয়েছে। প্রতিকারের আশায় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দেয়ার পাশাপাশি মানববন্ধন ও করেছে।
কৃষকদের অভিযোগ, ফুলবাড়িয়া এলাকায় নির্মানাধীন আশরাফ টেক্সটাইল নামে একটি ভবন ভাড়া নিয়ে স্থানীয় একটি চক্রকে হাত করে ভেতরে ব্যাটারী তৈরী করা হচ্ছে। যে সকল ব্যাটারী ইজি বাইক, মোটরসাইকেল, বাস, ট্রাকসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে। এই কারখানার ভেতরে স্থানীয়দের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকায় কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হয়না। এমনকি গণমাধ্যম কর্মীদেরও ভেতরে যেতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তাদের এই কারখানার নির্গত ক্যামিকেল মিশ্রিত পানি জমিনের পানিতে প্রবাহিত হয়ে ফসলি জমির মাটি কালচে ও শক্ত হয়ে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে তাদের এমন পরিস্থিতিতে কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হলেও কারখানা কর্তৃপক্ষ কোনো কর্ণপাত করেন না। এই জমিগুলো ধানের উর্বর জমি। আর এতে ধান বপন করতে না পেরে কৃষকরা ক্ষতির সম্মুক্ষিন হচ্ছেন।
চরসিন্দুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আবুল হোসেন জানান, এই ব্যাটারী কারখানার কারনে কয়েক গ্রামের প্রায় তিনশত বিঘা জমি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখিন কৃষকরা। আগামী দিনেও জমিগুলোতে ধান বপন করা সম্ভব হবেনা। কারখানাটি যদি বৈধ হয় তাহলে ইটিপি করে চালাবে, নয় তা বন্ধ রাখবে। এমনটাই দাবী প্রশাসনের কাছে।
পলাশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আয়েশা আক্তার জানান, ব্যাটারী কারখানার নির্গত ক্যামিকেল মিশ্রিত বর্জ্যে দক্ষিন দেওড়া ব্লকের নব্বই হেক্টর জমি কৃষি কাজের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। এতে করে ধান উৎপাদনে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটছে। আগামী মৌসুমেও এই গ্রামের ধানের লক্ষমাত্রা অর্জনে বাধা হয়ে দাড়াবে। তাই এবিষয়ে উর্দ্ধতন কৃর্তপক্ষের দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার দাবী জানান তিনি।
পলাশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসফিকা হোসেন জানান, এ বিষয়ে কৃষকরা লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এ ছাড়াও অভিযান চালানো হয়েছে। তাই এখন হাইকোর্টের নির্দেশনার মেয়াদ শেষে দেখা যাক কি হয়। মেয়াদ শেষে কৃষকদের স্বার্থে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আপনার মতামত লিখুন :