ঢাকা শনিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২৪
শেখ পরিবারের আশীর্বাদে অনিয়ম

৩ বছরেই খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়ক চলাচলের অনুপযোগী

আব্দুল মোমিন, পাটকেলঘাটা

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৬, ২০২৪, ০৫:০৬ পিএম

৩ বছরেই খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়ক চলাচলের অনুপযোগী

ছবি : রূপালী বাংলাদেশ

১০৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৩০ কিলোমিটার খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কটির তিন বছর যেতে না যেতেই দু’পাশের পিচ, পাথর ও খোয়া উঠে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। কোথাও কোথাও সড়কর দু’পাশ দেবে গিয়ে বড় বড় খাদের সৃষ্টি হয়েছে। এতে সড়কে চলতে গিয়ে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন যাত্রী ও চালকেরা। ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। নষ্ট হচ্ছে গাড়ির বিভিন্ন যন্ত্রাংশ।

জানা যায়, সাতক্ষীরা ভোমরা স্থল বন্দর পূর্ণাঙ্গ বন্দরে রূপান্তরিত ও পদ্মা সেতু হওয়ার কারণে খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কে যানবাহনের চলাচল বহুগুণ বেড়ে যায়। যার কারণে ২০১৯ সালে ১০৯ কোটি টাকা ব্যয়ে বাগেরহাটের ‘মেসার্স মোজাহার এন্টারপ্রাইজ’ নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সড়কটি সংস্কারের কাজ শুরু করে করে। যা শেষে হয় ২০২১ সালের মার্চে।

তবে সংস্করের তিন বছর যেতে না যেতেই মহাসড়কটির পিচ, পাথর, ও খোয়া উঠে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

এদিকে, স্বল্প সময়ে ব্যস্ততম মহাসড়কটির এই দুর্দশার কারণে স্থানীয় জনগণ সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে দুষছেন। তাদের দাবি, নির্মাণ কাজে অধিক লাভের আশায় নিম্ন মানের সামগ্রী ব্যবহার করায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

সরজমিনে দেখা যায়, খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের সাতক্ষীরা থেকে চুকনগর পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটারের ভিতরে সড়কটির পাথর, খোয়া ও পিচ উঠে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। আবার অনেক জায়গায় সড়ক দেবে কোথাও কোথাও উচু-নিচু হয়ে সড়কটি দিয়ে চলাচলের জন্য মোটরসাইকেল, মহেন্দ্র, প্রাইভেট কার, ট্রাক, বাসসহ বিভিন্ন যান চলাচলের সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।

জানা যায়, বিগত সরকারের আমলে খুলনা বিভাগসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল  নিয়ন্ত্রণ করতো শেখ পরিবারের কয়েকজন সদস্য। অভিযোগ রয়েছে, শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই শেখ হেলালের একক আধিপত্য ছিল খুলনা বিভাগের বিভাগসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সর্বত্রই। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মোজাহার এন্টারপ্রাইজ শেখ হেলালের আশীর্বাদপুষ্ট হাওয়াই দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ঠেকাদারি কাজগুলো শতকরা ২০% কমিশনের বিনিময়ে বাগিয়ে নিত। শুধু তাই নয়, শেখ হেলালের আশীর্বাদ থাকায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলার সাহস পেতনা। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ১০৯ কোটি টাকার খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কটির কাজ মোজাহার এন্টারপ্রাইজ বাগিয়ে নেয় এবং নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করার কারণে মেয়াদকাল শেষ হওয়ার তিন বছর যেতে না যেতেই সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

বাসচালক প্রদীপ দাস রুপালি বাংলাদেশকে বলেন, সড়কটি কিছুদিন হলো সংস্কার করলো কিন্তু কয়েকবছর যেতে না যেতেই প্রায় জায়গায় বড় বড় গর্ত ও সড়কটি উচু নিচু হয়ে কোথাও কোথাও নদীর ঢেউ মতো  সৃষ্টি হওয়ায় গাড়ি চালাতে সমস্যা হচ্ছে।

পাটকেলঘাটার ট্রাকচালক সাহেব আলী বলেন, ব্যস্ততম সড়কটি সংস্কারের কিছুদিন যেতে না যেতেই সড়কটির পাথর ও পিস উঠে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে বিভিন্ন জায়গা দেবে গেছে। যার কারনে সড়কটি দিয়ে ভোমরা পোর্ট থেকে ভারী মালামাল নিয়ে খুলনায় আসতে খবই সমস্যা হচ্ছে।

মোটরসাইকেলচালক শেখ মারুফ বলেন, ব্যস্ততম সড়ক দিয়ে পাটকেলঘাটা থেকে সাতক্ষীরা ও পাটকেলঘাটা থেকে খুলনায় যাওয়ার পথে চুকনগর পর্যন্ত সড়কটির বিভিন্ন জায়গায় ছোট-বড় খাদের সৃষ্টি হওয়াই সড়কটি দিয়ে গাড়ি চালানো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।

এ বিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির যুগ্ন সদস্য সচিব আলিনুর খান বাবুল রুপালি বাংলাদেশকে বলেন, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মোজাহার এন্টারপ্রাইজ শেখ পরিবারের সদস্য দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একক আধিপত্য বিস্তারকারী শেখ হেলালের আশীর্বাদপুষ্ট। এ কারণে খুলনা-সাতক্ষীরা  মহাসড়কটিতে সব থেকে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে তৈরি করায় ছয় মাসের মাথায় নষ্ট হওয়া শুরু করে। শেখ হেলালের আশীর্বাদের কারণে আমরা কেউ সড়কটির ব্যাপারে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে  কোন কথা বলতে পারি নাই। তাদের বিরুদেধ আমরা যারা প্রতিবাদ করতে গিয়েছি তাদেরকে বিভিন্ন হয়রানির শিকার হতে হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি শেখ হেলালকে শতকরা ২০% এর বেশি কমিশন দিয়ে মন জয় করে খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কসহ বিভিন্ন জায়গায় দুর্নীতি করেছে। এজন্য তার বিচার হওয়া উচিত। এসময় তিনি সাতক্ষীরা নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে মোজাহার এন্টারপ্রাইজ ও শেখ হেলালের বিচার দাবি করেন।

নির্মাণ কাজের অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মোজাহার এন্টারপ্রাইজের কাউকে পাওয়া যায়নি।

সাতক্ষীরা সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ার পারভেজ বলেন, আমি এ ব্যাপারে কিছুই বলতে পারব না কারন আমি এখানে নতুন এসেছি। তবে মনে হয় না কোন দুর্নীতি হয়েছে। এবছর বৃষ্টিপাত বেশি হওয়ার কারণে সড়কর দু’ধারে পানি জমে দ্রুত সড়কটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ও ভোমরা বন্দর এবং পদ্মা সেতু হওয়ার কারণে মহাসড়ক দিয়ে ভারি যানবাহনের চাপের কারণে সড়কটির সমস্যা দেখা দিয়েছে। তবে আমরা পিচ ও খোয়া দিয়ে যেখানে সমস্যা সেখানেই দ্রুত সংস্কার করছি।

আরবি/ এইচএম

Link copied!