ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসীর গর্ব তিতাস নদী এখন প্রতিনিয়তই মরা খালে পরিণত হচ্ছে। এর মূল কারণ হচ্ছে নদী ভরাট। রাতের আঁধারে তিতাস নদীর বুক ছিড়ে যাওয়া শেখ হাসিনা সড়ক দিয়ে কিছুদুর গেলেই দেখা মিলে রাস্তার উপর দিয়ে নদী ভরাটের বালু ভর্তি ট্রলারের সাথে সংযুক্ত পাইপ। নদীর তীর থেকে শুরু করে নদীর সাথে সংযুক্ত জমিগুলোসহ চার পাশে আইল বেধে ভরাট করছে। জেলা শহরের শিমরাইল কান্দির ব্রীজ পেরিয়ে সদর-বিজয়নগর সিমান্ত থেকে শুরু হয় নদী ভরাট। বিজয়নগর উপজেলার চম্পকনগর-রামপুর পর্যন্ত গেলে দেখে মেলে প্রতিদিনই নানান ধরনের গায়েবি চড়।
তিতাসের বুকজুড়ে শুধু চর আর চর। তিতাসের পাড়ঘেঁষে বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে অনেক অবৈধ স্থাপনা। বিভিন্ন স্থানে ময়লা-আবর্জনা ফেলে তিতাস পাড়ের পরিবেশ বিনষ্ট করা হচ্ছে। এছাড়া দখল আর দূষণের কবলে পড়ে বিভিন্ন স্থানে তিতাসের গতিপথ সংকীর্ণ হয়ে গেছে। তিতাসের বুকজুড়ে বিভিন্ন স্থানে বাঁধ দেওয়ায় নদীর গতিপথ আরও সংকুচিত হয়ে পড়েছে। কালজয়ী ঔপন্যাসিক অদ্বৈত মল্লবর্মণ তার ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ উপন্যাস লিখে যে তিতাসকে বিশ্ববাসীর কাছে পরিচয় করে দিয়েছিলেন সে তিতাস আজ অস্তিত্ব হারিয়ে বিলীন হতে চলেছে! দিনের সূর্যের আলোতে তিতাস এখন আর তেতিয়ে ওঠে না, রাতের চাঁদ ও তারার সঙ্গে তিতাস এখন আর কথা বলে না। তিতাস না বাঁচলে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিশাল অংশজুড়ে।
এ নদী ভরাটের প্রতিযোগিতার উৎপত্তি হয়েছিল সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর হাত ধরে ইউনিভার্সিটি অব ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নিজস্ব সম্পত্তির নামে বালি দিয়ে নদী ভরাট।বর্ষার মৌসুমে এসব জমি পানিতে টুইটুম্বর তিতাস নদীর প্রাণকেন্দ্র শহর ঘেষে যাওয়া খালের পাশেই বিশাল জায়গাজুরে বালি দিয়ে নদী ভরাট করে উপশহর গড়ে তুলার পরিকল্পনাও ছিল মোকতাদিরের। মুলত এখান থেকেই নদী ভরাটের আস্কারা পেয়ে আওয়ামীলীগ ক্ষমতাসীন অনেকেই ভরাট করেছেন তিতাস নদীর তীর ও জমিগুলো। ক্ষমতার ড্রাফট আর মন্ত্রীর ভয়ে তিতাস প্রেমিদের মুখ খোলা ছিল আতংকের।ৎ
গত ৫ আগষ্ট আওয়ামী সরকার শেখ হাসিনা পতনের পর নদী ভরাটের প্রতিযোগিতা পুরো দমে চলছে রাতের আধারে।হঠাৎ ভেসে উঠছে তিতাসের বুকে গায়েবি চড়। দিনের বেলায় মাঝে মাঝে দেখা গেলেও রাতের বেলা নদী ভরাটের হিরিক থাকে তিতাসের পাড়ে। কেউ ভরাট করছে ভবিষ্যৎ উপশহর গড়ে তুলার লক্ষে, বাড়ি নির্মাণ করবে,আবার কেউ ভাবছে সদর-বিজয়নগর সড়ক হওয়াতে জমি ভরাট করে বিক্রি করে দাম একটু বেশি পাওয়ার আশায়।
তিতাস নদী ভরাট বন্ধ না করলে অচিরেই দেখা মিলবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহর বন্যার পানিতে ভাসছে।ফেনি,কুমিল্লা, সিলেট,সহ আরো অনেক জেলায় এ বছর বন্যার ভয়াবহতা হয়ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বুকেও আঘাত করবে তিতাস নদী ভরাটের ফলে। শহর ঘেষে বয়ে যাওয়া তিতাস যেন জৌলুস হারিয়ে মরা খালে পরিণত হচ্ছে।
এ বিষয়ে নদীভিত্তিক সামাজিক সংগঠন ‘তরী বাংলাদেশ’র আহ্বায়ক শামীম আহমেদ বলেন, তিতাস নদী ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসির জন্য গর্বের। এ নদী বন্যা থেকে রক্ষা করছে শহরবাসিকে। এ বছর দেশের বিভিন্ন উচু জেলা গুলোতেও বন্যার প্রভাব দেখা দিয়েছে এর মূলকারণ হচ্ছে নদী ভরাট। তিতাস নদী সহ আশেপাশে নদীর তীর ও বর্ষার মৌসুমে পানিতে তলিয়ে থাকা জমি গুলো রাতের আধারে ভরাটের ফলে ভবিষ্যতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর বন্যার পানিতে ভাসতে হবে। সময় থাকতে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে নদী রক্ষার্থে। নদী ভরাট ও নদীর সাথে সংযুক্ত জমিগুলো রাতের আধারে ভরাট বন্ধ করার জন্য প্রশাসনের নজর দেওয়া উচিত।
তিনি আরো বলেন, বিল ভরাট বা শ্রেণি পরিবর্তন করা দণ্ডনীয় অপরাধ। এবারের বন্যা থেকেও ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরকে রক্ষা করেছে তিতাস নদী। নদীমাতৃক বাংলাদেশে নদ-নদী, খাল-বিল, হাওড়- পুকুর-জলাশয় সর্বোপরি পরিবেশ সুরক্ষায় অগ্রাধিকার দিতে হবে। দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে আইনের সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
নদী ভরাট ও দখল প্রসঙ্গে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দিদারুল আলম রুপালী বাংলাদেশকে জানান,নদী ভরাট নিয়ে এখনো কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি তদন্ত সাপেক্ষে এমন কোনো তথ্য পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আপনার মতামত লিখুন :