ঢাকা শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

চট্টগ্রাম বন্দরে গতি বাড়ছে পরিধি বাড়ানো জরুরি

জালালউদ্দিন সাগর, চট্টগ্রাম

প্রকাশিত: নভেম্বর ২০, ২০২৪, ০১:৫৮ এএম

চট্টগ্রাম বন্দরে গতি বাড়ছে পরিধি বাড়ানো জরুরি

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

চট্টগ্রাম বন্দরে ২৩টি প্রতিষ্ঠানের শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটরের লাইসেন্স বাতিল করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ করা হয়েছে, কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই এ প্রতিষ্ঠানগুলোকে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল। গত বছরের এপ্রিলে এ প্রতিষ্ঠানগুলোকে লাইসেন্স দেওয়া হয়। গত সপ্তাহে বন্দরের বোর্ড সভায় শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটর প্রতিষ্ঠানগুলোর লাইসেন্স বাতিল করা হয় বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বন্দর  কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান। তিনি বলেন, প্রতি মুহূর্তে চট্টগ্রাম বন্দরের কাজের গতি বাড়ছে।

আগামী ৫ বছরের মধ্যে কর্মপরিধি আরও বাড়বে। এজন্য বন্দর সম্প্রসারণ জরুরি। গতকাল মঙ্গলবার সকালে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের এক সংবাদ সম্মেলনে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান বন্দর চেয়ারম্যান। চট্টগ্রাম বন্দরের শহীদ মুন্সী ফজলুর রহমান অডিটরিয়ামে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটরের লাইসেন্স বাতিল হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে শালুটিকার অ্যাসোসিয়েটস, বিসমিল্লাহ মেরিন সার্ভিসেস, এনএমটি-এমএসএন লিমিটেড, জিডি হারবার সার্ভিসেস, লামিসা এন্টারপ্রাইজ, পোর্টহারবার ইন্টারন্যাশনাল, আহমেদ মেরিটাইম লজিস্টিকস, শাহী শিপিং অ্যান্ড ট্রেডিং, মা ট্রেডিং, এস ট্রেডিং, মেসার্স তাইফুল এন্টারপ্রাইজ, কিউএনএস গ্লোবাল লজিস্টিকস লিমিটেড, এমএস ওশান কন্ট্রাক্টিং অ্যান্ড সাপ্লাইয়িং ফার্ম, গফুর ব্রাদার্স অ্যান্ড কোং, এসএস কনসাল্টিং লিমিটেড, এবি করপোরেশন, আরিয়ান ট্রেডার্স লিমিটেড, ব্রিজেক্স ইনফ্রাক্সার লিমিটেড, গুড অ্যালায়েন্স সার্ভিসেস লিমিটেড, আর কে করপোরেশন, কেয়ার শিপিং অ্যান্ড ফ্রেইট লিমিটেড, কেএএস ট্রেডি,  খুলনা ইউনিয়ন এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড।

সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম মনিরুজ্জামান বলেন,  গত তিন মাসে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ৮,৩০,৫৮২ টিইইউ। যা বিগত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৭৬,৯৮৬ টিইইউ বেশি। চট্টগ্রাম বন্দর ২০২৪-২৫ অর্থবছরের গত ৪ মাসে ১৬৪৩.৮৫ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে যা গত অর্থবছরের একই সময়কালের রাজস্ব আয়ের তুলনায় ২১.৮৫ শতাংশ বেশি।

তিনি আরও বলেন, সব ক্ষেত্রে দুর্নীতি, অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরে সব ধরনের সিন্ডিকেট, মনোপলি ভেঙে ব্যবসার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার কার্যক্রম জোরদার করা হচ্ছে। 

সিন্ডিকেট প্রথা বিলুপ্ত করতে সফল হওয়ায় বন্দরের ২৫ শতাংশ পরিবহন খরচ হ্রাস পেয়েছে। যার সুফল ইতিমধ্যে বন্দর ব্যবহারকারীরা পেতে শুরু করেছেন।

বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, আগে পাকিস্তানের সাথে সিঙ্গাপুর এবং কলম্বো বন্দরের মাধ্যমে বাংলাদেশের পণ্য আমদানি-রপ্তানি হতো। গত ১১ নভেম্বর আমদানি পণ্য নিয়ে দুবাইয়ের জেবল আলী বন্দর থেকে পাকিস্তানের করাচি বন্দর হয়ে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছে একটি কন্টেইনারবাহী জাহাজ। নতুন এই রুট চালু হওয়ার কারণে বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হলো। এতে ব্যয় এবং সময় উভয়ই কমে আসবে। দুই দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য আরও গতিশীল হবে।

গত ১৬ জুলাই চট্টগ্রাম বন্দরে ৪৫ হাজার ৫০০ কন্টেইনারের স্থিতি ছিল। গত তিন মাসে পদ্ধতিগত উদ্ভাবনের মাধ্যমে তা ৩৪ হাজারে নামিয়ে আনা হয়েছে। জাহাজের গড় ওয়েটিং সময় ছয়-আট দিন থেকে একদিনে নেমে এসেছে। চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ আসার পরই অন অ্যারাইভাল বার্থিং পাচ্ছে।

এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, ২০০৪ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে পড়ে থাকা পুরোনো নয় হাজার কনটেইনার ধ্বংস/নিষ্পত্তির কাজ শুরু করা হয়েছে। আমদানিকৃত সব এফসিএল কনটেইনার বন্দর অভ্যন্তরে খুলে পণ্য খালাসের পরিবর্তে অফডকে আমদানিকারকের চত্বরে নিয়ে খালাসের অনুমতি দেওয়ার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ঢাকা আইসিডি পরিচালনা, ব্যবস্থাপনা ও আয়ের বণ্টনের বিষয়ে সমঝোতা স্মারক চূড়ান্ত করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর অতিদাহ্য সোডিয়াম নাইট্রোক্লোরাইড ভর্তি ০৪টি ট্যাংক কনটেইনার নিলামের মাধ্যমে ডেলিভারি দেওয়া হয়েছে। বিপজ্জনক পণ্য পরিবাহিত ৯টি কনটেইনার রয়েছে যা শ্রীলংকার কলম্বো বন্দরের মাধ্যমে ধ্বংস করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সরকারি পত্র ও নথি আদান প্রদান সহজে ও দ্রুত সম্পাদনের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের শতকরা ৮০ ভাগ কাজ ই-নথি পদ্ধতিতে সম্পাদনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল অপারেশন ও ব্যবস্থাপনায় সৌদি আরব ভিত্তিক বেসরকারি গ্লোবাল টার্মিনাল অপারেটর আরএসজিটিআই-কে সম্পৃক্ত করেছে বন্দর। এপিএম টার্মিনালের সাথে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। আগামী ছয় মাসের মধ্যে কনসেশন চুক্তি স্বাক্ষর করা সম্ভব হবে। 

বে-টার্মিনালের কনটেইনার টামিনাল-১ এবং কনটেইনার টার্মিনাল-২ নির্মাণের জন্য পলিসি অংশীদার পিএসএ সিঙ্গাপুর এবং ডিপি ওয়ার্ল্ডের সাথে চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম চলমান।

তিনি বলেন, এনসিটিতে আগামী জানুয়ারি থেকে নতুন অপারেটর নিয়োগ হওয়ার আগ পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য ওপেন টেন্ডারের ভিত্তিতে অপারেটর নিয়োগ দেওয়া হবে। জাইকার সহযোগিতায় মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পটি ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্প হিসাবে ২য় সংশোধিত ডিপিপি গত ৭ অক্টোবর একনেক সভায় অনুমোদিত হয়। প্রকল্পের অধীনে বিভিন্ন প্যাকেজের আওতায় সিভিল, ড্রেজিং, কার্গো হ্যান্ডলিং যন্ত্রপাতি এবং জাহাজসমূহ ক্রয় কার্যক্রম প্রক্রিয়া চলমান।

দেশে জ্বালানি সমস্যা দ্রুততম সময়ে সমাধানের লক্ষ্যে ল্যান্ড বেইসড এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের জন্য মাতারবাড়ি বন্দরের ১ম ধাপের ২য় পর্যায়ে প্রথম ধাপের সাথে সংযুক্ত করা হয়েছে। ২য় পর্যায়ের ৬১৯ একর জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাবনা কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কাছে দেওয়া হয়েছে।  বে-টার্মিনাল এলাকার সন্নিকটে বন্দরের নিজস্ব জমিতে ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বে টার্মিনাল, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দর এবং লালদিয়া টার্মিনালে ৬ জেনারেশন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। এই বন্দরগুলো গ্রিন পোর্ট হিসেবে গড়ে তোলা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য হাবিবুর রহমান (অতিরিক্ত সচিব), কমডোর ফজলার রহমান, মোহাম্মদ শহিদুল আলম (অতিরিক্ত সচিব), কমডোর কাওছার রশিদ, বন্দর সচিব ওমর ফারুক এবং বন্দরের বিভিন্ন বিভাগের প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।

আরবি/জেডআর

Link copied!