নওগাঁর বদলগাছী মহিলা ডিগ্রী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম না মানার অভিযোগ উঠেছে। কলেজের জ্যেষ্ঠতার তালিকা অনুযায়ী পাঁচ শিক্ষককে ডিঙিয়ে ইউএনও’র যোগসাজশে এ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সমাজকর্ম বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মমতাজ জাহানকে। যা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি পরিপন্থি।
জানা যায়, গত ২৭-০৮-২৪ ইং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে উক্ত কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী নুসরাত জাহান রিয়াসহ কিছু শিক্ষার্থী তৎকালীন অধ্যক্ষ মাহবুব আলমের বিরুদ্ধে অনিয়ম এবং দূর্নীতির অভিযোগ তুলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুব হাসানের কাছে স্মারক লিপি জমা দেন। ৯২৯নং স্বারকে অধ্যক্ষ মাহবুব আলমকে সাময়িক বরখাস্ত করে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সন্তোষজনক জবাব দাখিল করতে বলা হলে তিনি ৯-৯-২৪ইং তারিখে লিখিত জবাব দাখিল করেন।
পরবর্তীতে ১৭-০৯-২৪ তারিখে ১০৩৩নং স্বারকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজ/শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি সংশোধিত বিধি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক প্রেরণ করে। এবং ২৭-১০-২৪ তারিখে ৪২৮৪নং স্বারকে ইউএনও’র যোগসাজশে এডহক কমিটি গঠন করে অধ্যক্ষ মাহবুব আলমকে সাময়িক বরখাস্ত করেন। অধ্যক্ষ পদশূন্য হলে পরে ইউএনও এবং এডহক কমিটির সভাপতি লুৎফর রহমান মমতাজ জাহান সহকারী অধ্যাপক (সমাজকর্ম) কে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসাবে নিয়োগ দেন। বিষয়টি নিয়ে কলেজের শিক্ষকদের একাংশের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
এরপর সাময়িক বরখাস্ত অধ্যক্ষ মাহবুব আলম জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দিলে ২২-১২-২৪ তারিখে ৪৯৮৭নং স্বারকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এডহক কমিটিকে চিঠি দেয়। যা হুবহু তুলে ধরা হলো।
উপর্যুক্ত বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে জানানো যাচ্ছে যে, অত্র কলেজে স্নাতক পর্যায়ে সমাজকর্ম বিষয়ের অধিভুক্তি না থাকায় সমাজকর্ম বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জনাব মমতাজ জাহান-এর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালনের বিষয়টি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভূক্ত বেসরকারি কলেজ শিক্ষকদের চাকুরীর শর্তাবলী রেগুলেশন (সংশোধিত) ২০১৯ এর ধারা ৪(ক) এর উপধারা ২(৫) ও (ii) এর বিধি পরিপন্থী। বিধায় বিধি মোতাবেক জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃক স্নাতক পর্যায়ে স্বীকৃত কোন বিষয়ের জ্যেষ্ঠতম ০১ (এক) জন শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদান করে অধ্যক্ষ নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য আপনাকে অনুরোধ করা হলো। কিন্তু এই চিঠি প্রাপ্তির ১৫ দিন পার হলেও এডহক কমিটি কোন ব্যবস্থা নেয় নি।
কলেজের জ্যেষ্ঠতম পাঁচ শিক্ষককের তালিকায় রয়েছেন যথাক্রমে অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন, সমাজবিজ্ঞানের সারমিনা, বাংলা বিভাগের উম্মে হাবিবা, দর্শন বিভাগের উজ্জল কুমার প্রামানিক ও ইসলামের ইতিহাস বিভাগের আব্দুল হাসিব চৌধুরী।
সহকারী অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বলেন, মাহবুব আলমকে বহিষ্কার করা হলে ইউএনও অফিসে আমাকে ডাকা হয়েছিলো। এডহক কমিটির সভাপতি এবং তার গ্রুপ আমাকে বাদ দিয়ে মমতাজ জাহান কে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়। বোর্ডের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হয়েছে।
সমাজ বিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক সারমিনা বলেন, অর্থনীতি বিভাগের আনোয়ার হোসেন কে ইউএনও অফিসে ডাকা হয়েছিলো। মমতাজ জাহানের বাহিনী আনোয়ার হোসেন কে সরাসরি এবং ফোনে ভয়ভীতি দেখালে সে দায়িত্ব নিতে রাজি হয় নি। সেখানে অন্যদের কাউকেই জানানো হয় নি। মমতাজ জাহান জোড় করে চেয়ার দখল করে আছে।
বর্তমান বদলগাছী মহিলা ডিগ্রী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মমতাজ জাহান বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চিঠি সম্পর্কে আমি জানি। সত্য কি না জানি না। আমাকে সভাপতি এবং ইউএনও নিয়োগ দিয়েছে। আমি জোড় করে এই চেয়ারে বসিনি।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক আব্দুল হাই সিদ্দিক সরকারের সাথে মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।
কলেজের এডহক কমিটির সভাপতি লুৎফর রহমান বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চিঠি পেয়েছি। আগামীকাল আমরা কয়েকজন কলেজ পরিদর্শকের কাছে যাবো। তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ছাত্র-ছাত্রীর চাওয়াতে মমতাজ জাহান কে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ করেছি। নতুন কমিটি হয়েছে। তারা সিদ্ধান্ত নিবে এখন কাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ করা হবে।
আপনার মতামত লিখুন :