ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

সাবেক মেয়র ও প্রকৌশলী বিরুদ্ধে প্রকল্পের ১৮ কোটি টাকার কাজের অনিয়ম

মো. জসিম উদ্দিন, বেতাগী

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৪, ০৫:৩৫ পিএম

সাবেক মেয়র ও প্রকৌশলী বিরুদ্ধে প্রকল্পের ১৮ কোটি টাকার কাজের অনিয়ম

সাবেক মেয়র এবিএম গোলম কবির ও নির্বাহী প্রকৌশলী জসিম উদ্দিন। ছবি: সংগৃহীত

বরগুনার বেতাগী পৌরসভার সি টি সি আর আই পি প্রকল্পের একটি প্যাকেজে সাত- আটটি রাস্তার ১৮ কোটি টাকার কাজের পৌরসভার সাবেক মেয়র এবিএম গোলম কবির ও নির্বাহী প্রকৌশলী জসিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে যোগসাজোসে অনিয়মের লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বেতাগী পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা, গার্মেন্টস ব্যবসায়ী এবং কুয়াকাটা সবুজ বাংলা রিসোর্টের স্বত্ত্বাধিকারী মো.মারুফ রেজা স্থানীয় সরকার বিভাগের উপদেষ্টা, স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রধান প্রকৗশলী, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব, স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সহকারি সচিব ও স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-সচিব বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেণ।

ইতোমধ্যে এসব দুর্নীতি খতিয়ে দেখতে যথাযথ কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেওয়া আশ্বাস পাওয়া গেছে। অভিযোগকারী মো: মারুফ রেজা বলেন,‘ পৌরসভার সি টি সি আর আই পি প্রকল্পের এসব অনিয়মের বিবরণ উল্লেখ করে গত ২৮/০৭/২০২৪ তারিখ স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের প্রধান প্রকৌশলী, গত ২৪/০৮/২০২৪ তারিখ স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের সিনিয়র সহকারি সচিব বরাবরে, গত ২৫/০৮/২০২৪ তারিখ স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের সচিব এবং ২৫/০৮/২০২৪ তারিখ পৌরসভা-১ এর উপ-সচিব বরাবরে ব্যবস্থার নেওয়া আবেদন করা হয়েছে।

অভিযোগ পত্র থেকে জানা গেছে, বরগুনার বেতাগী পৌরসভার সি টি সি আরআই পি প্রকল্পের একটি প্যাকেজে সাত-আটটি রাস্তার ১৮ কোটি টাকার কাজ চলমান রয়েছে।

এসব কাজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বেতাগী টাউন ব্রিজ থেকে সালিহিয়া সিনিয়র মাদরাসা হয়ে সবুজকানন মাধ্যমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত, বেতাগী হাই স্কুল রোড হয়ে স্টিল ব্রিজ পর্যন্ত রাস্তা, বেতাগী বন্ধুচত্বর থেকে খাদ্য গুদামের রাস্তা বেতাগী পল্লী বিদ্যুতের সম্মুখ থেকে হিজালতলার রাস্তা হয়ে ঢালীকান্দা রাস্তা পর্যন্ত।

এছাড়া আরো বেশ কয়েকটি রাস্তা রয়েছে। এখানে কাজের শুরুতেই অনিয়মের অভিযোগ। এসব রাস্তার উল্লেখিত দরপত্রের প্রাক্কলন অনুযায়ী কোনটাই করেন নাই।

রাস্তার দুই পাশের ইটের গাঁথুনির নিচে তিন ইঞ্চি সিসি ঢালাইয়ের কথা উল্লেখ থাকলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কোন রকম সাদা বালু দিয়ে এক থেকে দেড়ইঞ্চি ঢালাই করেছে।

সিলেটসেন বালুর ব্যবহার করেনি বর্তমানে ১০ ইঞ্চি ব্রিকের গাঁথুনি দিয়ে সিসি ঢালাই ঢেকে ফেলেছে যাহাতে চুরি ধরা না যায়। কাজের দরপত্রের প্রাক্কলন অনুযায়ী জানা গেছে, সালেহিয়া সিনিয়র মাদরাসা রাস্তায় পূর্বের রাস্তা খনন করে রুলিং করে সম্পূর্ণ রাস্তায় এক ইঞ্চি বালুর লেয়ার করে দিতে হবে যাহাতে নতুণ ৪ ইঞ্চি কম্পেক্ট ম্যাগাডাম পরিমাপ করা যায়।

তারপরে কার্পেটিং করতে হবে মিনিমাম দুই ধারের এজিং এর হাইট থাকতে হবে ৬ ইঞ্চি। অথচ ঠিকাদারি প্রতষ্ঠিনগুলো তারা এজিং করেছে দুই থেকে তিন ইঞ্চি।

অভিযোগকারী মো. মারুফ রেজা বলেন, ‘এসব অনিয়মের বিষয় নিয়ে আমি প্রতিবাদ করি। চুরি ডাকার জন্য তারা বালু ফিলিং না করে সবুজ কানন স্কুলের মাথায় এক থেকে দেড় ইঞ্চি খোয়া দিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে অথচ ধরা আছে কম্পিল্ট ৪ ইঞ্চি ম্যগাডাম।

মারুফ রেজা আরো বলেন, বেতাগী পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম গোলম কবির ও পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী জসিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে যোগসাজোসে গত ১০ বছরে ১ শ কোটি টাকা অনিয়ম রয়েছে। জানা গেছে, বেতাগী পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের তত্ত্ববধানে বাসন্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তিন তলাবিশষ্ট কাম সাইক্লোন শেল্টারের কাজ চলমান থাকায় ওই বিদ্যালয়ের কাজ দুনীর্তির অভিযোগে বর্তমানে গত দুই সপ্তাহ ধরে কাজ স্থগিত রয়েছে।

অভিযোগপত্রে আরো জানা গেছে, পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী জসিম উদ্দিন কৌশল করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খান এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী খলিলুর রহমানকে ঠিকাদারী কাজের দায়িত্ব দেওয়া হতো। আর খলিলুর রহমান এবং সাবেক পৌরসভার মেয়র এবিএম গোলাম কবিরের সাথে ব্যবসায়ীক অংশীদার।

এসব কাজের অন্য যেসব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দায়িত্ব দেওয়া হতো তাদের কাছ থেকে সাবেক পৌর মেয়র কবির ১৪ শতাংশ অগ্রিম কেটে নিতো এবং বিল করানোর সময় ঠিকাদারদের কাছ থেকে পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী জসিম উদ্দিন বিভিন্ন অজুহাতে ১৪ শতাংশ কেটে নিতো।

পৌরসভার একাধিক কর্মচারি কলেন,‘ নির্বাহী প্রকেীশলী জসিম উদ্দিন এই পৌরসভায় গত ১২ বছর যাবত আওয়ামী লীগের পৌষ্যপুত্র হিসেবে কাজ করছেন। ঠিকাদার এবং নির্বাহী প্রকৌশলীর অপকর্ম সবসময় সর্মথন দিতেন সাবেক পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম গোলাম কবির।

এভাবে লুটপাটের আকঁড়ায় পরিনত হয়েছে বেতাগী পৌরসভা। মেয়র কবিরের ঢাকায় দুটি বাড়ি এবং কেরানিগঞ্জে একশ শতকের বেশি জমি রয়েছে।

এছাড়া বিভিন্ন ব্যাংক একাউন্টে শত কোটি টাকার বেশি নগদ অর্থ রয়েছে। গত ৫ আগস্টে সরকার পতনের পর তিনি পলাতক রয়েছেন।

একইভাবে পলাতক রয়েছে বেতাগীর সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান , হোসনাবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগে সভাপতি এবং খান এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারি খলিলুর রহমান খান।

বর্তমানে মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় একাধিবার চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি সাবেক পৌর মেয়র এবিএম গোলাম কবির এবং সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান খলিলুর খানের সাথে।

এ বিষয় বেতাগী পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী জসিম উদ্দিন বলেন, আমার কোন দোষ না পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম গোলাম যেভাবে নির্দেশ দিতেন সেভাবে দায়িত্ব পালন করা হতো। এছাড়া আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সত্য নয়।

আরবি/জেডআর

Link copied!