ঢাকা বুধবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২৪

ভারতের কাছ থেকে শেখ হাসিনাকে ফেরত চাইলেন জামায়াত আমির

নীলফামারী প্রতিনিধি

প্রকাশিত: নভেম্বর ৮, ২০২৪, ০৬:৪২ পিএম

ভারতের কাছ থেকে শেখ হাসিনাকে ফেরত চাইলেন জামায়াত আমির

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ভারতের কাছ থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। শুক্রবার (৮ নভেম্বর) নীলফামারী পৌরসভা মাঠে জেলা জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি বলেছেন, আমরা আমাদের প্রতিবেশীর প্রতি অনুরোধ করব শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে। দেড় শর অধিক মামলা। তার বিরুদ্ধে খুনের মামলা আছে, গুমের মামলা আছে। আমাদের বিচারালয় যখন চাইবে, মেহেরবানি করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আপনারা তাকে তুলে দেবেন। অপরাধী যদি অপরাধ করে শাস্তি না পায় তাহলে অন্য অপরাধীরা উৎসাহ পাবে।

আওয়ামী লীগের শাসনামলের কথা উল্লেখ করে জামায়াত আমির বলেন, গত সাড়ে ১৫ বছর ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সরকার মানুষকে শান্তি দেয়নি। দেশবাসীর শান্তি কেড়ে নিয়েছিল তারা। সকল ধর্মের, সকল বর্ণের মানুষ তাদের কাছে নিগৃহীত, নির্যাতিত ছিল। বিশেষ করে আমাদের দল তাদের হাতে অনেক নির্যাতনের শিকার হয়েছে।

২৪-এর শহীদদের লাশ এখন আমাদের জাতির ঘাড়ে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের আচরণে প্রমাণ করতে হবে, রাজনীতিতে প্রমাণ করতে হবে, দেশ পরিচালনায় প্রমাণ করতে হবে আমরা এই শহীদের শ্রদ্ধা করি। প্রমাণ করতে হলে এমন একজন মানুষ লাগবে যারা মুখে যা বলবে কাজেও তাই করবে।

শেখ হাসিনার দুঃশাসনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, একজন শাসক সাড়ে ১৫ বছর দেশ শাসন করেছেন। তিনি যখন কথা বলতেন মানুষ বলত, ও হাসিনা আমরা আর হাসি না। তিনি মানুষকে উত্তেজিত করতেন, হাসানোর চেষ্টা করতেন। যেমন ছিলেন প্রধানমন্ত্রী, তেমন ছিলেন তার উজির-নাজির সবাই। কে কার চেয়ে বেশি মিথ্যা কথা বলবেন এই ছিল প্রতিযোগিতা। তারা জাতিকে ধোকা দিয়েছে, তারা জাতির ওপর জুলুম করেছে, মানুষ খুন করেছে, গণহত্যা চালিয়েছে, গুম করে আয়ানাঘর তৈরি করেছে।

আওয়ামী লীগ ফ্যাসিস্ট হতে পারে, নির্দয় হতে পারে, পাষাণ হতে পারে, খুনি হতে পারে কিন্তু বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ মনে করে আমরা দায়িত্বশীল এবং দেশপ্রেমিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাবেক সরকারের সড়কমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বক্তব্যে দাম্ভিকতা প্রকাশ করতেন, অহংকার করে কথা বলতেন। তিনি বলেছিলেন আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হলে দুই দিনের মাথায় পাঁচ লাখ মানুষ খুন হবে। কিন্তু ৫ ও ৬ আগস্ট একজন মানুষও খুন হয়নি।

শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার কথায় তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন কোথাও পালাবেন না। তিনিও পালালেন, তিনিও চলে গেলেন। তিনি তার প্রিয় দেশে আশ্রয় নিলেন। প্রতিবেশীকে আমরা সম্মান করি। আমরা বিশ্বাস করি প্রতিবেশী ভালো থাকলে আমরা ভালো থাকব। আমার প্রতিবেশীকে কষ্ট দিলে অনুরূপ কষ্টের জন্য আমাকে প্রস্তুত থাকতে হবে। সুতরাং কোনও প্রতিবেশীকে ডিস্টার্ব করা আমরা পছন্দ করি না। অনুরূপ প্রতিবেশীর কাছ থেকে আমরাও সুপ্রতিবেশীর আচরণ পেতে চাই।

জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে তিনি বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে বাংলাদেশে ফিরেছিলেন শেখ মুজিবুর সাহেব। তিনি ফিরে এসে এদেশের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তার শাসনামলে ১৯৭১ সালে যারা বিভিন্ন অপরাধ করেছিল তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। যে সমস্ত নেতৃবৃন্দকে যদ্ধাপরাধের অথবা মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত করা হয়েছিল তাদের কারো বিরুদ্ধে তখন একটি মামলাও হয়নি। যুদ্ধাপরাধী বাছাই করতে গিয়ে দফায় দফায় সতর্কতার সাথে শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার কাজ করে ১৯৫ জনকে তালিকাভুক্ত করেছিল। যার মধ্যে বর্তমান বাংলাদেশের এই সীমানার ভেতরে কোনও নাগরিক ছিলেন না। যদি সত্যি জামায়েতে ইসলামী এই অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকত তাহলে অবশ্যই বাংলাদেশের কোনও না কোনও থানায় একটা হলেও মামলা হতো। কিন্তু একটা থানায়ও কোনও মামলা ছিল না। তাহলে কেন এই ১১ জন নেতার বিরুদ্ধে মামলা করা হলো?

এদিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সম্মেলনস্থলে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সমবেত হন প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক নেতাকর্মী। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নীলফামারী জেলা সেক্রেটারি অধ্যাপক আন্তাজুল ইসলামের সঞ্চালনায় কর্মী সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তৃতা দেন জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির ড. খায়রুল আনাম, সহকারী সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট আল ফারুক আব্দুল লতিফ, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের জেলা সভাপতি অধ্যাপক মনিরুজ্জামান জুয়েল, রংপুর মহানগর জামায়াতের সাবেক সেক্রটারি মাওলানা ওবায়দুল্লাহ সালাফী, বাংলাদেশ ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি রাজিবুর রহমান পলাশ, জেলা ছাত্র শিবিরের সভাপতি তাজমুল হাসান প্রমুখ।

আরবি/জেডআর

Link copied!