বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) পদের কর্মকর্তা হয়েও অবৈধ পন্থায় সম্পদের পাহাড় গড়েছেন মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান। সম্প্রতি ডিজিএম হলেও আগে ছিলেন ব্যবস্থাপক (কারিগরি) এবং একটি প্রকল্পের পরিচালক।
সূত্র বলছে, এসব পদের সুযোগ নিয়ে অঢেল অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন মনিরুজ্জামান। বিআরটিসির বাস কেজি দরে বিক্রি করার সিন্ডিকেটের সঙ্গে আতাত এবং প্রকল্প এলাকার অবকাঠামো নির্মাণে ঠিকাদারের থেকে মাসোয়ারা নেওয়ার মতো গুরুতর অভিযোগ রয়েছে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। বছরের পর বছর রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটি লোকসানে থাকলেও ঢাকায় বাড়ি গাড়ি করে এলাহী অবস্থা মনিরুজ্জামানের।
জানা যায়, ২০২৩ সালে বিআরটিসির বাস কেজি দরে বিক্রি করেন কল্যাণপুর ডিপোর তৎকালীন ইউনিট প্রধান নুর ই আলম। এই ঘটনার তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন তৎকালীন ব্যবস্থাপক (কারিগরি) মনিরুজ্জামান। অভিযোগ আছে, গাড়ি বিক্রি সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত ছিলেন মনির। মোটা অঙ্কের বিনিময়ে তদন্ত থেকে অপরাধের সঙ্গে জড়িত একাধিক ব্যক্তিকে বাদ দিয়েছেন তিনি। তদন্তের দায়িত্ব পেয়ে তদন্ত প্রতিবেদন সপক্ষে দেওয়ার কথা বলে তাদের থেকে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ আছে খোদ মনিরুজ্জামানের।
এ ছাড়াও নির্মাণ বিভাগের অধীন একটি প্রকল্পের পরিচালক থাকাকালে জোয়ার সাহারা বিআরটিসি কার্যালয়ে একতলা গার্ডরুম নির্মাণকাজেও অনিয়মে জড়ানোর অভিযোগ রয়েছে মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে। বিভিন্ন কাজে একাধিক ঠিকাদারের থেকে কমিশন নেওয়ার পাশাপাশি উৎকোচের নামে দামি উপহার নেন এই কর্মকর্তা।
রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বিআরটিসি যতই লোকসানে থাকুক না কেন নিজে রাজার হালে আছেন সম্প্রতি ব্যবস্থাপক থেকে ডিজিএম হওয়া মনিরুজ্জামান। রাজধানীর আফতাব নগরের এফ-ব্লকের ৪ নম্বর রোডে একটি বহুতল ভবনে কোটি টাকার ফ্ল্যাট রয়েছে তার। ফ্ল্যাটের দাম প্রায় এক কোটি টাকা হলেও এর সাজসজ্জায় ব্যয় হয়েছে আরও অন্তত দুই কোটি টাকা। তার ওই ফ্ল্যাটে যাতায়াত আছে এমন একটি সূত্র রূপালী বাংলাদেশকে জানায়, বিদেশ থেকে প্রায় দুই কোটি টাকা মূল্যের বিলাসবহুল টাইলস আনিয়েছেন মনিরুজ্জামান। ফার্নিচার এবং ইন্টেরিয়র ডেকোরেশনে আরও প্রায় ৫০ লাখ টাকা ব্যয় করেছেন মনির। ভবনটির নিচতলার পার্কিং লটে প্রায়ই দামি আসবাবপত্র রাখেন তিনি।
সূত্র আরও জানায়, নিজে কেনার পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গা থেকে ‘উপহার’ হিসেবে দামি জিনিসপত্র পান মনির। প্রথমে পার্কিং লটে এবং পরবর্তীতে ফ্ল্যাটে সেগুলোর স্থান হয়। তিনি নিজে ও তার পরিবারের সদস্যরা আশপাশের ভবন ও ফ্ল্যাটের মালিকদের জানান, তাদের ফ্ল্যাট দুই কোটি টাকা খরচ করে সাজানো। তাদের টাকার অভাব নেই, কেনাকাটা করেন বিদেশ থেকে।
মনিরুজ্জামানের এক প্রতিবেশী জানান, আফতাব নগর ছাড়াও রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় আরও একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট রয়েছে মনিরুজ্জামানের। তবে সেটি নিজের না বরং পরিবারের এক সদস্যের নামে নিবন্ধন করিয়েছেন তিনি।
মনিরুজ্জামানের টয়োটা ব্র্যান্ডের একটি গাড়ি রয়েছে। তবে ছেলের জন্য রয়েছে ভিন্ন আরেকটি গাড়ি। এ ছাড়াও বিভিন্ন ঠিকাদারের থেকে একেক সময় একেক গাড়ি নিয়ে ব্যবহার করেন মনিরুজ্জামান। বগুড়া, রংপুর মেট্রো নম্বর প্লেটযুক্ত একাধিক গাড়িতে তিনি যাতায়াত করতে দেখেছেন তার প্রতিবেশী এবং স্থানীয়রা। পাশাপাশি সরকারি পুলের গাড়িও ব্যবহার করেন তিনি।
এসব বিষয়ে মনিরুজ্জামানের বক্তব্য জানতে যোগাযোগ করা হলে গণমাধ্যমে বক্তব্য দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেন না বলে জানান তিনি।
রূপালী বাংলাদেশকে মনিরুজ্জামান বলেন, এসব বিষয়ে বক্তব্য দেওয়ার কোনো দরকার আছে বলে মনে করি না। যদি অভিযোগ থাকে, তাহলে রিপোর্ট করে দেন।
আপনার মতামত লিখুন :