হোটেল ‘খিঁচুড়ি বাড়ি’। যেখানে অসহায়, হতদরিদ্র ও ভিক্ষুকদের বিনামুল্যে খেতে দেওয়া হয়। মানবতার এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, যশোরের শার্শা উপজেলার বাগআঁচড়া বাজারের ‘খিঁচুড়ি বাড়ি’ নামের একটি হোটেল মালিক। হোটেলের মালিক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, এখানে প্রতিদিন অসহায় মানুষদের খাবার খেতে দেওয়া হয়।
জানা যায়, প্রায় প্রতিদিন বিশেষ করে বাগআঁচড়া বাজারের হাটবার সোম ও বৃহস্পতিবার এসব হতদরিদ্র ভিক্ষুকের ঢল নামে এ হোটেলে। গরুর মাংস, হাঁসের মাংস, ডিম, ডাল, সবজি দিয়ে তারা পেট পুড়ে এক বেলা খাবার পান এ হোটেলটিতে। দীর্ঘ তিন মাস যাবত দুপুরে গরিব ও অসহায় মানুষদের এ হোটেলে বিনা পয়সায় খাওয়ানো হচ্ছে। চেষ্টা শ্রম এবং সাধনার মাধ্যমে জয় করা যায় সেটাই প্রমান করেছেন হোটেল মালিক। গরীব, অসহায়, ভিক্ষুক, এতিম ও ভবঘুরে মানুষদের একবেলা পেটভরে খাওয়ানোর চেষ্টা করছেন, বিনিময়ে কোন টাকা নেন না তিনি।
যে কোন সময় টাকা না থাকলেও ক্ষুধার্ত অসহায় মানুষকে এ হোটেল থেকে কখনো খালি পেটে ফিরতে হয় না বলে জানান এই হোটেলে দুপুরে খেতে আসা চাকুরীজীবি আজাদ রহমান।
হোটেলের অন্যান্য কর্মচারীরা যত্ম সহকারে সেবার মানসিকতা নিয়ে খাবার তুলে দেন এ সব অসহায় মানুষদের সামনে।
দুপুরে খেতে আসা বৃদ্ধ ভিক্ষুক আছিয়া বেগম জানান, আমি নাভারণ, বেনাপোল, বাগআঁচড়া বাজারে ভিক্ষা করি প্রায় ১০ বছর। দুপুরে বিভিন্ন হোটেলে খাবার চাই। কেউ খেতে দিতে চাই না। দুই একটা টাকা দিয়ে চলে যেতে বলে। তবে এই হোটেলটি হওয়ার পর থেকে তারা গোশ দিয়ে খেতে দেন। এখানে খেতে কোন টাকা লাগে না।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বিনা পয়সায় খাবার পেয়ে খুশি গরিব অসহায় ক্ষুধার্ত মানুষজন। হোটেলটির এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন স্থানীয়রা। প্রতিদিনই গরিব, অসহায়, ক্ষুধার্ত মানুষরা হোটেলটিতে বসে বিনা পয়সায় খাবার খান।
‘খিচুড়ি বাড়ি’ হোটেলের মালিক মোস্তাফিজুর জানান, হোটেলটি চালু করার পরে বেচাকেনা কম হতো, তাই ভিক্ষুক এসে খাবার চাইলে তাদের দু‘পাঁচটা টাকা দিয়ে বিদায় দিতাম। রাতে হোটেল বন্ধ করে বাড়ি আমি যখন একা থাকতাম, তখন এ সব ভিক্ষুককে খেতে দিতে পারতাম না বলে মনে মনে কষ্ট পেতাম। তাই পরে সিদ্ধান্ত নেই বেচাকেনা হোক বা না হোক ভিক্ষুক ও অসহায় কেউ এসে খেতে চাইলে আর ফেরাবো না। এখন এ সব অসহায় গরিব ভিক্ষুকের মুখে খাবার দিতে পেরে আমি অনেক শান্তি অনুভব করি। আমার বেচেকেনাও বেড়ে গেছে অনেক গুনে।
আপনার মতামত লিখুন :