সাভারের জুয়েল (১৬) নামের এক দোকানের কর্মচারীকে কাজ করা অবস্থায় মিথ্যা চুরির অপবাদ দিয়ে মোটা কারেন্টের তাড় দিয়ে এলোপাথারী ভাবে পিটিয়ে জখম করেছে বলে ওই দোকানের মালিক মো.কাশেম সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বৃহস্পতিবার (২১শে নভেম্বর) দুপুরে গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে এসব বিষয়ে তথ্য দেন ভুক্তভোগী ও তার বাবা। এরআগে গত বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) রাতে আশুলিয়ার নরসিংহপুর কাজল ইলেকট্রনিক্স`র দোকানে এই ঘটনা ঘটে। পরে কোনো উপায় না পেয়ে ভুক্তভোগীর বাবা থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
জুয়েল আশুলিয়া থানার ইয়ারপুর ইউনিয়ন বুড়িপাড়া কুরজুত আলীর ছেলে। কাশেম সরকার একই এলাকার মোহাম্মদ আলী সরকারের ছেলে। আশুলিয়ার নরসিংহপুর এলাকায় তার ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে জুয়েল ৪ মাস ধরে কাজ করে আসছিলো।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, কিশোর জুয়েলের উপর যে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়েছে এটা সমাজে ন্যাক্কারজনক ঘটনা।আমরা এনিয়ে সালিসির মাধ্যমে সমাধান করে দেই। ভুক্তভোগীর পরিবার মেনে নেয়, তবে অভিযুক্ত কাশেম মেনে নেয়নি। এতে আমরা অপমানিত হলাম। সালিশি না মানলে এখন আমাদের কি আর করার আছে।
পাশের দোকানদাররা বলেন, কাশেম সরকার জুয়েল নামের ছেলেটাকে কারেন্টের তাড় দিয়ে ব্যাপক মারধর করেছে এটা আমরা দেখেছি, যা খুবই দুঃখ জনক ঘটনা। এভাবে ছেলেটাকে মারধর করা ঠিক হয়নি।
ভুক্তভোগীর বাবা কুরজুত অভিযোগ করে বলেন, আমার ছেলে জুয়েল, কাজল ইলেকট্রনিক্স নামে একটি দোকানে ৪ মাস ধরে কাজ করতো। গত ৭ই নভেম্বর রাত অনুমান ৭টার দিকে আমার ছেলে দোকানে কাজ করা অবস্থায় তাকে ১ হাজার টাকা মিথ্যা চুরির অপবাদ দিয়ে মোটা কারেন্টের তার দিয়ে আমার ছেলেকে এলোপাথারী ভাবে পিটিয়ে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে নীলা-ফুলা করে এবং পিঠে রক্তজমাট জখম করে দোকানের মালিক কাশেম সরকার। পরে আমার ছেলের ডাক-চিৎকারে আশ-পাশের দোকানদাররা ছুঁটে এসে তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসা জন্য ক্লিনিকে পাঠায়। শেষে কোনো উপায় না পেয়ে আশুলিয়া থানায় একটি অভিযোগ করি। অভিযোগের প্রেক্ষিতে এখনো পর্যন্ত কোনো বিচার পাইনি। এর কয়েক দিন পরে এলাকার গণ্যমান্য ব্যাক্তিরা সমাধান করলে আমি মেনে নেই। তবে অভিযুক্ত কাশেম উক্ত সমাধান মেনে নেয়নি। আমার ছেলের উপর যেভাবে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়েছে আমি এর সুষ্ঠ বিচারের জন্য প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
ভুক্তভোগী জুয়েল বলেন, আমি ৪ মাস ধরে ঐ দোকানে কাজ করি। মালামাল বিক্রি করে ক্যাশে রেখে দেই। ৭ই নভেম্বর একটি মালামাল ১ হাজার টাকায় বিক্রি করি। ওই টাকা ক্যাশে রেখেছিলাম বা অন্য কোথাও রেখেছি তা মনে ছিলো না। পরে ওই টাকার গড়মিল হওয়ায় দোকানের মালিক বলে আমি নাকি চুরি করেছি। পরে আমি বললাম আমার মনে পড়ছে না টাকাটা কোথায় রেখেছি। যেহুতু মনে পড়ছে না সেহুতু টাকাটা আমি বাসা থেকে এনে দেই। এই কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে সে আমার গলা চেপে ধরে রাস্তায় ফেলে দেয়। এবং কারেন্টের তাড় দিয়ে পিটিয়ে আমার সারা শরীর রক্তাক্ত জখম করে। আমার চিৎকারে পাশের দোকানদাররা ছুটে এসে আমাকে উদ্ধার করে। এসময়ে দোকানদাররা এর প্রতিবাদ করলে তাদেরকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এরপরে আমার বাবাকে জানানো হলে তিনি থানায় অভিযোগ করেন।
অভিযুক্ত কাশেম সরকার বলেন, জুয়েল আমার বাড়ির মানুষ বিধায় তাকে আমার দোকানে বিশ্বাস করে কাজে দেই। সে মাঝে মধ্যে এমন করতো। ৭ই নভেম্বর দোকানের একটি মালামাল ১ হাজার টাকায় বিক্রি করে। সেই টাকা সে দিচ্ছেলো না। পরে তাকে চর থাপ্পড় দেই। আমিতো তাকে মারি নাই, শাসন করেছি। তাকে এভাবে মারাটা কি ঠিক হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, না এটা আমার ঠিক হয়নি।
এ বিষয়ে আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রাসেল বলেন, আমি থানায় ৮ তারিখে যোগদান করেছি, কিশোর জুয়েল নির্যাতনের বিষয়ে অভিযোগ হলেও আমি অবগত নই। এই অভিযোগের কপি হাতে পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আপনার মতামত লিখুন :