কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় স্কুল ভাঙচুর করে জমি দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার উপজেলার চরকাওনা ইউনিয়নের চরকাওনা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার চরকাওনা মৌজায় ২০০২ সাল থেকে ‘চাইল্ড কেয়ার মডেল স্কুল’ নামে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত করে পরিচালনা করে আসছিলেন চরকাওনা গ্রামের মোহাম্মদ মফিজুল ইসলাম। একই গ্রামের মো. আশরাফুল আলমের নেতৃত্বে মো. নূর হোসেন, মো. মোফাজ্জলসহ ২০-৩০ জনের একটি দল গত ১৫ ডিসেম্বর জোরপূর্বক ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠটি ভাঙচুর করে স্কুলের আঙ্গীনায় একটি একচালা টিনের ঘর নির্মাণ করে প্রথমে বাঁশ দিয়ে ও পরবর্তীতে টিনের বেড়া দিয়ে স্কুলটির প্রবেশ পথ সম্পূর্ণ রূপে বন্ধ করে দেয়। এ সময় বাধা দিলে স্কুলটির প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক মোফাজ্জলের পরিবারের লোকজনদের মারধর করে জমি দখলের চেষ্টা করে স্থানীয় সন্ত্রাসীরা।
স্কুলটির প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ মফিজুল ইসলাম জানান, উপজেলার চরকাওনা মৌজায় ২টি দাগে ২৫ শতাংশ ভূমি ইজারা মূলে দখল প্রাপ্ত হয়ে স্কুলটি স্থাপন করেন তিনি। পরবর্তীতে আর.এস ১৩৯০ নং খতিয়ানে ১৪৭৫৭ নং দাগে ৮শতাংশ ভূমি নকশাঙ্কিত করে ৪১৮ নং রেজিষ্ট্রি দলিল মূলে ও ২ শতাংশ ভূমি বায়না দলিল মূলে মোট ১০ শতাংশ ভূমির মালিকানা প্রাপ্ত হয়ে প্রায় ৩৪ বছর যাবৎ ভোগদখলে আছেন তিনি।
তিনি আরও জানান, আমার প্রতিপক্ষ মো. আশরাফুল কিছুদিন পূর্বে হঠাৎ একটি জাল দলিল নিয়ে এসে আমার স্কুলের জায়গাটি নিজের বাবার জায়গা বলে দাবি করে। পরে তার দলিলটি ভালো করে লক্ষ্য করে দেখি দলিলে তার বাবার নাম রইছ উদ্দিন ঠিক আছে কিন্তু রইছ উদ্দিনের পিতা অর্থাৎ আশরাফুলের দাদার নাম ঠিক নেই। যা আমার পাশ্ববর্তী অন্য আরেকজন বলে প্রমাণিত হয় এবং একই খতিয়ানে তার জমি রয়েছে। যার সাথে আশরাফুল আলমের বংশীয় কোনো সম্পর্ক নেই। পরবর্তীতে স্থানীয় সালিশের মাধ্যমে তার বাবা রইছ উদ্দিন আর দলিলের রইছ উদ্দিন ভিন্ন ব্যক্তি প্রমাণিত হলে আশরাফুল ক্ষোভে আমার স্কুলটি নষ্ট করার পায়তারা করে এবং স্কুলটি ভাঙচুর করে। আমার স্কুলটিতে বর্তমানে ৩২৮ জন শিক্ষার্থী ও ১৪ জন শিক্ষক আছেন। যাদের বেতনভাতা নিয়ে আমি অনেক বিপাকে আছি। আমি সরকার ও প্রশাসনের মাধ্যমে এর প্রতিকার চাই।
এ ব্যাপারে প্রতিপক্ষ মো. আশরাফুল আলম স্কুল ভাঙচুরের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ওই শিক্ষক আমাকে আইন নিজের হাতে তুলে নিতে বাধ্য করেছে। সে আমার বাবার অনেক দলিল আত্মসাৎ করেছে। ওই শিক্ষক প্রথমে স্কুলের জায়গাটি মৌখিক ভাবে আমাদের কাছ থেকে ভাড়া নেয়। এখন আমাদের জায়গার প্রয়োজন তাকে জায়গা ছাড়তে বললে তিনি জায়গা ছাড়বেন না। তাই আমাদের জায়গা আমরা দখল করেছি।
এ বিষয় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. ওমর ফারুক ভূঞা বলেন, বিষয়টি নিয়ে জেলা শিক্ষা অফিসার অবগত আছেন। জেলা শিক্ষা অফিসার একাডেমিক সুপারভাইজারকে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন। আমি যতটুকু জানি প্রতিপক্ষ স্কুলটি দখল করে নিয়েছে। স্কুলের ভিতরে বেড়া দিয়ে ফেলছে। আমি একাডেমিক সুপারভাইজারকে বলব বর্তমানে স্কুলের যে ভাঙচুরের ঘটনা ও সীমানা প্রাচীর দিয়ে আবদ্ধ করে রেখেছে এগুলোসহ তদন্ত করতে। আমি চাই একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান টিকে থাকুক। এতে একদিকে যেমন গ্রামে শিক্ষার হার বাড়বে; তেমন শিক্ষকদেরও কর্মসংস্থান হবে।
এ বিষয় পাকুন্দিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ভাঙচুরের বিষয়ে আমি একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তসাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আপনার মতামত লিখুন :