কুষ্টিয়ার ঐতিহ্যবাহী তিলের খাজার সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে দেশ থেকে দেশান্তর। কুষ্টিয়ার নামের সঙ্গে যেন মিশে আছে এই মুখরোচক খাবারটি। নানা রকম হাঁকডাকে রেল স্টেশন, বাস স্টেশন ও লঞ্চঘাটসহ বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি হয় বিখ্যাত তিলের খাজা। কুষ্টিয়ার এই তিলের খাজা এখন পরিণত হয়েছে ক্ষুদ্র শিল্পে। সারা বছরই তৈরি করা হয় তিলের খাজা। তবে শীত মৌসুমে এর আলাদা কদর রয়েছে। কুষ্টিয়া সদর ও কুমারখালী উপজেলাতে এ পেশার সঙ্গে জড়িত রয়েছে কয়েকশ’ পরিবার। হাতে তৈরি খেতে সুস্বাদু এ তিলের খাজার রয়েছে ঐতিহ্য। এক সময় শুধু স্থানীয় চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে তিলের খাজা তৈরি করা হতো। কালের আবর্তে এর কদর বেড়েছে দেশজুড়ে। প্রায় দুইশ’ বছরের সময়কাল ধরে ঐতিহ্য ধরে রেখেছে কুষ্টিয়ার বিখ্যাত তিলের খাজা। সম্প্রতি জিআই পণ্যের স্বীকৃতি মিলেছে এ ক্ষুদ্রশিল্পের। জনপ্রিয়তার দিক দিয়েও দারুণভাবে এগিয়ে স্বল্পমূল্যের এ খাবারটি।
জানা গেছে, অবিভক্ত ভারতের পূর্ববঙ্গের কুষ্টিয়া শহরে বেকারি পণ্যের জন্য পরিচিত দেশওয়ালীপাড়ায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পাল সম্প্রদায়ের মানুষ এক সময় এ খাবার তৈরি করতেন। ১৯০০ সালের কাছাকাছি সময়ে ‘তেলি’ সম্প্রদায়ের লোকদের মাধ্যমে এ খাবারটি প্রথম কুষ্টিয়ায় তৈরি হয়। কুষ্টিয়ার এক খামারে কাজ করাতে বৃটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ‘তেলি’ সম্প্রদায়ের কয়েকজনকে ভারতের অন্য অঞ্চল থেকে এখানে আনে। ৭০-এর দশকে কুষ্টিয়া শহরের চর মিলপাড়ায় কয়েকটি খাজা তৈরির কারখানা গড়ে ওঠে। এরপর থেকেই কুষ্টিয়ায় ধীরে ধীরে তিলের খাজার প্রসার ঘটতে থাকে। ক্রমেই কুষ্টিয়ার তিলের খাজার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও।
তিন ধরনের তিলের খাজা তৈরি হয় তিলভেদে। খাজা তৈরির প্রধান উপকরণ তিল ও চিনি। চুলায় চাপানো বড় লোহার কড়াইয়ের মধ্যে চিনি দিয়ে আগুনে জাল দিয়ে তৈরি করা হয় ‘সিরা’। নির্দিষ্ট সময় পর নামানো হয় চুলা থেকে। হালকা ঠান্ডা হলে চিনির সিরা জমাট বেঁধে যায়। তখন শিংয়ের মতো দো-ডালা গাছের সঙ্গে হাতে টানা হয় জমাট বাধা সিরা। একপর্যায়ে বাদামি থেকে সাদা রঙে পরিণত হলে বিশেষ কায়দায় হাতের ভাঁজে ভাঁজে টানতে হয়। তখন এর ভেতরে ফাঁপা আকৃতির সৃষ্টি হয়। সিরা টানা শেষ হলে রাখা হয় পরিষ্কার স্থানে। নির্দিষ্ট মাপে কেটে তাতে মেশানো হয় খোসা ছাড়ানো তিল। এভাবেই তৈরি হয়ে তিলের খাজা। পরে এগুলো প্যাকেটজাত করে পাঠিয়ে দেওয়া হয় দেশের বিভিন্ন স্থানে।
আরো এক ধরনের তিলের খাজা আছে, তাতে দুধ মেশানো হয়। কারখানায় প্রতিদিন ‘তিলের খাজা’ তৈরি হয়। সাধারণ তিলের খাজা ১৮০ ও স্পেশাল তিলের খাজা ৩৫০ টাকা কেজি এবং এক প্যাকেট ১৫-২০ টাকায় বিক্রি হয়। কুষ্টিয়ার স্টেশন রোডে১৫-১৬ বছর আগে গড়ে ওঠে এ কারখানাটি। ভাই ভাই তিলের খাজা নামে এ কারখানায় আছেন ১০/১২ জন শ্রমিক। এ কারখানা মালিক মুকুল হোসেন ও এরশাদ আলী।
মুকুল হোসেন জানান, জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতির বিষয়টি আমরা জেনেছি। এটা গৌরবের বিষয়। ক্ষুদ্র এ শিল্পটাকে এগিয়ে নিতে স্বাস্থ্যগত মান ঠিক রাখতে কারিগরি প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা বলেছে।
আপনার মতামত লিখুন :