ঢাকা শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

বিদুৎ সংকটে লোডশেডিং, সুখবর নেই সিলেটে

সিলেট ব্যুরো

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৯, ২০২৪, ০২:৪৫ এএম

বিদুৎ সংকটে লোডশেডিং, সুখবর নেই সিলেটে

ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুতের সংকট। এ কারণে দিতে হচ্ছে লোডশেডিং। এদিকে প্রকৃতিতে এখন চলছে ভাদ্রের তীব্র খরতাপ। তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছুঁই ছুঁই! ফলে গরমে ত্রাহীদশা। গরম আর লোডশেডিংয়ে এখানকার জনজীবন অতিষ্ঠ। পুড়ছে সিলেট।

সিলেট আবহাওয়া অফিস সূত্রে শনিবার সিলেটের তাপমাত্রা ছিল ৩৬ ডিগ্রি। গেলকাল ৩৭ ডিগ্রি। বিকেলে তাপমাত্রা বেড়ে তাপমাত্রা অনুভূত হয় ৪০ ডিগ্রির মতন!

ঠিক এইসময় সিলেট বিভাগে বিদ্যুৎ চাহিদা ২০০ মেগাওয়াটের একটু বেশি। শনিবার সন্ধ্যায় সর্বোচ্চ চাহিদার সময় এটি ছিলো ২০৭.৪০ মেগাওয়াট। রোববার অফিস খোলার প্রথম দিনেই দিনের বেলা চাহিদা ছিল ২০০ মেগাওয়াটের কাছাকাছি। কিন্তু এর বিপরীতে সরবরাহ হয়েছে ১৪৪.০২ মেগাওয়াট। শুধুমাত্র সিলেট জেলায় চাহিদা ছিলো ১৪৬.৩৪ মেগাওয়াট। বিপরীতে সরবরাহ হয়েছে ১০১.৬১ মেগাওয়াট। এখানে ঘাটতি ছিল ৪৪.৭৩ মেগাওয়াট।

এ অবস্থায় সিলেটের জন্য কোনো সুখবর দিতে পারছে না বিদ্যুৎ বিভাগ। বরং শুনিয়েছে হতাশার বাণী। সিলেট বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুল কাদির রূপালী বাংলাদেশকে জানিয়েছেন, সহসা উন্নতির আশা নেই। বাস্তবতা হলো, চাহিদামতো বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলেই কেবল লোডশেডিং কমে আসবে। তবে সেই আশা আপাতত নেই। চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণে বিদ্যুতের লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। এখানে কর্মকর্তাদের কিছু করার নেই।

সিলেট বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) সূত্র মতে, ঘাটতি মোকাবেলায় প্রতি ঘন্টায় ঘন্টায় লোডশেডিং হচ্ছে সিলেটের নগর ও শহরতলী এলাকায়। এতে চরম দুর্ভোগে রয়েছেন সাধারন মানুষ। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাসা-বাড়ি ও বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি অফিসে নষ্ট হচ্ছে কর্মঘণ্টা। এজন্য ক্ষোভ প্রকাশ করছেন ভুক্তভোগীরা।

এদিকে লোডশেডিংয়ের কারণে ব্যবসায়ীদের ফটোস্ট্যাট মেশিন, বাসাবাড়ির ফ্রিজ, টিভি ও কম্পিউটারসহ বিভিন্ন দামি দামি জিনিসপত্র নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বেশী সময় বিদ্যুৎ না থাকলে ইন্টারনেট সেবাও কিছুটা বিঘ্নিত হচ্ছে।

এদিকে বিদ্যুৎ মোকাবিলায় লোডশেডিং ম্যানেজমেন্ট চালু রেখেছে সিলেটে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। সিলেটে সবচেয়ে বেশি লোডশেডিং মোকাবেলা করতে হয় পল্লী বিদ্যুতের এখানকার দুটি সমিতিকে। শহর থেকে তুলনামূলক বেশি ঘাটতি তাদেরই। ফলে শহরের তুলনায় তাদের এলাকাগুলোতে লোডশেডিংও বেশি। তাদের হিসাব মতে, পল্লী বিদ্যুতে দিনের ৮ ঘণ্টাও বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না তাদের গ্রাহকরা। দিনে ও রাতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না।

বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে, সরকারের সিদ্ধান্তে শিল্পাঞ্চলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করায় লোডশেডিং বেড়ছে। তাছাড়া সিলেটের বিবিয়ানার একটি কেন্দ্রসহ চট্টগ্রামের কয়েকটি কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এসব কেন্দ্র চালু না হওয়া পর্যন্ত বিদ্যুতের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে না।

সিলেট বিভাগীয় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. আবু হোসাইন রূপালী বাংলাদেশ-কে বলেন, পরিস্থিতি সহনীয় পর্যায়ে রাখতে বিদ্যুৎ বিভাগ কাজ করছে।

তিনি বলেন, সিলেট বিভাগের বিবিয়ানার একটিসহ চট্টগ্রাম বিভাগের কয়েকটি কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র বন্ধ রয়েছে। উৎপাদন কমে যাওয়ার চাপ এসে জাতীয় গ্রিডে পড়ছে। যদি উৎপাদন বাড়ে তাহলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে জানান তিনি।

সিলেট সিটি করপোরেশনের এক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ না থাকার কারণে একটানা পাম্প চালানো সম্ভব হয় না। এ কারণে বিভিন্ন এলাকায় পানি সংকট দেখা দিয়েছে। এরপরও সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে পানি সরবরাহ স্বাভাবিক করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সিলেট জেলা শাখার মহাসচিব ও সিলেট মহানগর ব্যবসায়ী ঐক্য কল্যাণ পরিষদের সভাপতি মো. আব্দুর রহমান রিপন বলেন, যখন ব্যবসার সময় তখন লোডশেডিং দেয়া হয়। বড় বড় মার্কেটগুলো জেনারেটরের মাধ্যমে ব্যবসা সচল রাখতে পারলেও বেশির ভাগ মার্কেটে জেনারেটর না থাকায় ব্যবসায়ীরা দিনের বেলা অন্ধকারে থাকেন। কেউ কেউ জেনারেটর জ্বালিয়ে ব্যবসা করলেও লাভের চেয়ে লোকসান বেশি হয়। এই অবস্থা থেকে উত্তরনের জন্য তারা বিষয়টি নিয়ে সিলেটের প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানান।

আরবি/জেডআর

Link copied!