উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল করে বগুড়ার দুই কলেজ ও মাদ্রাসার চার পদে চাকরি করার অভিযোগ উঠেছে শিক্ষক দম্পতির বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় তদন্তে শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। শিক্ষক একজন হলেও দুই পদে থাকার কথা স্বীকার করে অভিযুক্ত ব্যক্তি বলেছেন, চাকরি এমপিওভুক্ত হলেই যেকোনো একটি কলেজে থাকার সিদ্ধান্ত নেবেন।
বগুড়ার দুপচাঁচিয়া কারিগরি কলেজে অধ্যক্ষ ও কাহালু মহিলা ডিগ্রি কলেজে প্রভাষক পদে কর্মরত আছেন ছাইফুল ইসলাম। নিয়মনীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে স্ত্রী ফরিদা ইয়াসমিনকে দুই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করাচ্ছেন। ফরিদা তালোড়া শাহ এয়তেবারিয়া ফাজিল মাদ্রাসার এমপিওভুক্ত শিক্ষক। স্বামী অধ্যক্ষ থাকায় দুপচাঁচিয়া কলেজে পেয়েছেন প্রভাষকের চাকরি।
শিক্ষক দম্পতির বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার পর তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বগুড়া জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা। তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটিতে আছেন জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার।
বুধবার বগুড়া জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. হযরত আলী জানান, মঙ্গলবার থেকে তদন্ত শুরু হয়েছে। শিক্ষক ছাইফুল দম্পতির বিরুদ্ধে দুই কলেজে চাকরিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের পর যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন জেলা প্রশাসন।
প্রাপ্ততথ্যে জানা গেছে, বেসরকারি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী একজন শিক্ষক একইসঙ্গে একাধিক পদে বা লাভজনক কোনো পদে থাকতে পারবেন না। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে কাহালু মহিলা ডিগ্রি কলেজে প্রভাষক ও দুপচাঁচিয়া কারিগরি কলেজে অধ্যক্ষ পদে একসঙ্গে চাকরি করছেন ছাইফুল ইসলাম। তার স্ত্রী ফরিদা ইয়াসমিন তালোড়া শাহ এয়তেবারিয়া ফাজিল মাদ্রাসার শিক্ষক। তাকে দুপচাঁচিয়া কলেজের প্রভাষক পদে নিয়োগ দিয়েছেন অধ্যক্ষ ছাইফুল।
অভিযোগ রয়েছে, অবৈধভাবে দুপচাঁচিয়া কারিগরি কলেজের মালিকানা হাতিয়ে নেওয়া, পরিচালনা পর্ষদ ছাড়াই কলেজ পরিচালনা এবং ২০১৯ সালে এমপিওভুক্ত হওয়ার পর শিক্ষক-কর্মচারীদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন দুই কলেজে চাকরি করা ছাইফুল।
সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, দুপচাঁচিয়া কারিগরি কলেজের কম্পিউটার প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন ছাইফুল ইসলাম। তিনি অধ্যক্ষ হওয়ার জন্য অফিস কক্ষের ড্রয়ারের তালা ভেঙে সার্টিফিকেট ও কলেজের দলিলসহ কাগজপত্র গায়েব করেন। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ হয়েছিল। সেসময় কলেজে অধ্যক্ষ পদসহ অন্য কোনো পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া ছিল না। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল করে নিজে অধ্যক্ষ এবং স্ত্রীকে প্রভাষক পদে চাকরি দিয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়।
২০১৯ সালে কলেজ এমপিওভুক্ত হলেও কেউই বেতন পাচ্ছেন না। শিক্ষার্থীদের কাছে থেকে নিয়মিত বেতন নেওয়া হয়। শিক্ষক-কর্মচারীরা বেতনের ব্যবস্থা করার জন্য বললে কয়েকজনের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়েছেন অধ্যক্ষ ছাইফুল। এসব ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন অভিভাবক, এলাকাবাসী ও কলেজ সংশ্লিষ্টরা।
দুপচাঁচিয়া কারিগরি কলেজ থেকে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে না জানিয়ে অধ্যক্ষ ছাইফুল ইসলাম বলেন, চাকরি এমপিওভুক্ত হলে রিজাইন দিয়ে যেকোনো একটি কলেজে থাকার সিদ্ধান্ত নেব। তিনি বলেন, আমাকে হেনস্তা করতে একাধিক মামলা করে সুবিধা না পেয়ে বিভিন্ন দপ্তরে মিথ্যা অভিযোগ করেছে।
আপনার মতামত লিখুন :