ঢাকা শুক্রবার, ০১ নভেম্বর, ২০২৪

জেলেপাড়ায় পুলিশের ভয়ে পুরুষশূন্য গ্রাম

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

প্রকাশিত: নভেম্বর ১, ২০২৪, ০৭:১২ পিএম

জেলেপাড়ায় পুলিশের ভয়ে পুরুষশূন্য গ্রাম

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

পুলিশের ভয়ে পলাতক রয়েছেন কয়া ইউনিয়নের বেড় কালোয়া এলাকার জেলেপাড়ার পুরুষরা। জানা গেছে, পদ্মা নদীপাড়ে অবস্থিত জেলেপাড়ায় সুনসান নিরোবতা। কোনো পুরুষ লোক নেই। আতঙ্কিত নারীরা নদীপাড়ে জড়ো হয়ে আছেন। 

এ সময় জেলে রাজুর স্ত্রী লাবনী খাতুন বলেন, মেম্বার গ্রুপের সঙ্গে জেলেপাড়ার নেতা ইয়ারুলের দীর্ঘদিন দরে বিরোধ চলছে। সম্প্রতি পুলিশের মামলায় জেলেপাড়ার সকল পুরুষ পালিয়েছে। অনেকেই গ্রেপ্তার হয়েছেন। সেই সুযোগে খালেক মেম্বার, তার ছেলে রিপন ও শিপনসহ ২০-৩০ জন লোকজন বারবার জেলেপাড়ায় এসে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন। মেয়েদের মারধর করছে। জাল, নৌকা টিউবওয়েল লুট করে নিয়ে গেছে।

সকল অভিযোগ অস্বীকার করে মেম্বারের ছেলে রিপন বলেন, আমি বুধবার জামিনে জেল থেকে ছাড়া পেয়েছি। পূর্বশত্রুতার জেরে মিথ্যা অভিযোগ করছেন প্রতিপক্ষরা। কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত তরুণ শেখ অভিযোগ করে বলেন, আমাদের পাড়ায় জেলেপাড়ার লোকজন আশ্রয় নিয়েছে। এমন অভিযোগে কয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক মেম্বর আব্দুল খালেকের ছেলে রিপন, শিপন ও স্থানীয় দুষ্কৃতকারী লিটনসহ ছয়-সাতজন আমার বাড়িতে রাত আড়াইটার দিকে ঢুকে। এসময় বাগবিতন্ডার এক পর্যায়ে আমার পায়ে ও হাতে কয়েক রাউন্ড গুলি করে দ্রুত চলে যায়।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামী লীগ নেতার ছেলে রিপন ও শিপন বলেন, একটি মামলায় দীর্ঘদিন ধরে আমাদের কেউ জেলে ছিল, কেউ পালিয়ে ছিল। আদালত থেকে জামিন নিয়ে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরেছি। রাতে দুই রাউন্ড গুলির শব্দ শুনেছি। তবে আমরা কেউ এ ঘটনায় জড়িত নয়।

আর পুলিশের দাবি, রাতে আসামি ধরতে গেলে স্থানীয় লোকজন পুলিশের কাজে বাঁধা দেন এবং আক্রমণ করে। এসময় আত্মরক্ষার্থে পুলিশ দুই রাউন্ড ফাঁকা রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) তাপস কুমার সরকার বলেন, তরুণ শেখ নামের এক ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার বাম হাতের কব্জির ওপরে এবং বাম পায়ের হাটুর নিচে গুলি লেগেছে। অস্ত্রপচার করে দুইটি গুলি বের করা হয়েছে। এখন তিনি শঙ্কা মুক্ত রয়েছেন।

এদিকে, গত সোমবার পদ্মা নদীতে কর্তব্যরত অবস্থায় পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে হত্যার অভিযোগে কুমারখালী থানায় একটি মামলা হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাত পৌনে নয়টায় থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলায় আটজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ২০-২৫ জনকে। মামলায় কয়েকজন জেলেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আর ভয়ে পলাতক রয়েছেন কয়া ইউনিয়নের বেড় কালোয়া এলাকার জেলেপাড়ার পুরুষরা। সেই সুযোগে তাদের বাড়িতে থাকা জাল, টিউবওয়েল, মাছ ধরার অন্যান্য সামগ্রী ও নৌকা লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে কয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক মেম্বার আব্দুল খালেক, তার ছেলে রিপন ও  শিপনসহ তাদের সমর্থকদের বিরুদ্ধে।

পদ্মায় পুলিশ হত্যা মামলার তদন্ত করছেন নৌ পুলিশ বলে জানান কুষ্টিয়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম, অপারেশন ও মিডিয়া) পলাশ কান্তি নাথ। তিনি বলেন, রাতে আসামি ধরতে গেলে স্থানীয় লোকজন পুলিশের কাজে বাঁধা দেন এবং আক্রমণ করে। এসময় আত্মরক্ষার্থে পুলিশ দুই রাউন্ড ফাঁকা রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে আসামি নিয়ে চলে আসে। 

আরবি/জেডআর

Link copied!