ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪

দেবরের সাথে পরকীয়ায় বিঘ্ন ঘটায় স্বামীকে হত্যা

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: নভেম্বর ৭, ২০২৪, ০৬:৪৭ পিএম

দেবরের সাথে পরকীয়ায় বিঘ্ন ঘটায় স্বামীকে হত্যা

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

দেবরের সাথে পরকীয়া প্রেমে বিঘ্ন ঘটলে প্রবাসী স্বামী বাড়িতে আসার  ৯ দিন পর ঘুমের ঔষধ খাইয়ে, গলায় গামছা পেচিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করে অতঃপর নদীতে ড্রামের সাথে  লাইলনের রশি দিয়ে বেঁধে ডুবিয়ে দেয় স্ত্রী কাঞ্চন ওরফে মনিরা ও তার পরকীয়া প্রেমিক নিহতের ছোট ভাই ঝন্টু ও তার বন্ধু মাসুদ।

ঘটনাটি ঘটে মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর উপজেলার তালেবপুর ইউনিয়নের উত্তর কাংশা গ্রামে। হত্যার ১৮ দিন পর উপজেলার তালেবপুর ইউনিয়নের কাংশা ব্রীজের পশ্চিম পাশে ও ধলেশ্বরী নদীর দক্ষিণ পাশে মোহাম্মদ আলীর আবাদি জমি সংলগ্নট নদীতে পানিশূন্য কচুরিপানার মধ্যে মাটিভর্তি প্লাস্টিকের ড্রামের সাথে লাইলনের রশি দিয়ে বাঁধা অবস্থায় গলিত লাশ উদ্ধার করে সিংগাইর থানা পুলিশ।এঘটনায় নিহত উজ্জ্বললের বাবা মোঃ রোকন মোল্লা থানায়    হত্যা মামলা করলে পুলিশের   তদন্তে বেড়িয়ে আসে হত্যার মূল রহস্য।

বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) দুপুর ১ ঘটিকায় মানিকগঞ্জ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে সংবাদ সম্মেলনে  এসব তথ্য জানিয়েছেন পুলিশ সুপার মো. বশির আহম্মেদ  (অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নাতিপ্রাপ্ত)।

প্রেস ব্রিফিংয় সূত্রে জানা যায়, হত্যা মামলা রুজু হওয়ার পর মানিকগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার ও (অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মো. বশির আহমেদের দিক নির্দেশনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. আব্দুল ওয়ারেস তত্ত্বাবধানে ও সিংগাইর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ জাহিদুল ইসলাম এর নেতৃত্বে একটি টিম ৬ নভেম্বর উত্তর কাংশা গ্রামে অভিযান পরিচালনা করে এই ক্লুলেস হত্যা মামলার হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত ডিসিস্ট উজ্জল মিয়ার আপন ছোট ভাই আসামী মো. ঝন্টু(২৪), ডিসিস্ট এর স্ত্রী আসামী মোসা. কাঞ্চন ওরফে মনিরা (২৩) ও মাসুদ (২২)কে গ্রেপ্তার করে। এসময় হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত একটি হালকা গোলাপী রংয়ের ওড়না , একটি হালকা বেগুনী রংয়ের প্রিন্টের সুতি ওড়না, একগোছা লাইলনের চিকন রশি, একটি চায়ের কাপ, নগদ বাংলাদেশী ৮ হাজার ৫ শত-টাকা, একটি হাসুয়া, একটি গামছা উদ্ধার করে তা জব্দ করেন।

উল্লেখিত, আসামিদের গ্রেফতারের পরে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা ঘটনার বিষয় স্বীকার করেছে, আসামী মো. ঝন্টু ও কাঞ্চন ওরফে মনিরা সম্পর্কে দেবর-ভাবী। আসামী ঝন্টু ও তার আপন বড় ভাই ডিসিস্ট উজ্জল মিয়া উভয়েই সিংগাপুর প্রবাসে থাকাকালে আসামী ঝন্টু মোবাইল ফোনে তার ভাবী আসামী কাঞ্চন ওরফে মনিরার সাথে কথা বার্তা বলার একপর্যায়ে পরকিয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়ে। পরকিয়া সম্পর্কের জের ধরে ঝন্টু তার ভাইকে সিংগাপুরে রেখে বাড়ীতে চলে এসে তার ভাবী কাঞ্চন ওরফে মনিরার সাথে অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত থাকে। ঘটনার ০৯ দিন পূর্বে আসামী ঝন্টুর ভাই সিংগাপুর থেকে বাড়ীতে আসলে ঝন্টু ও কাঞ্চন ওরফে মনিরার অবৈধ পরকিয়ায় বিঘ্ন ঘটতে থাকে। যার প্রেক্ষিতে উল্লেখিত, আসামীরা পরষ্পর যোগসাজশে  উজ্জল মিয়াকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পূর্ব-পরিকল্পনা মাফিক ১২ অক্টোবর রাত সাড়ে ১১ টার দিকে আসামী কাঞ্চন ওরফে মনিরা কফির সাথে তার স্বামীকে ঘুমের ঔষধ সেবন করিয়ে অচেতন করে।

আসামি ঝন্টু তার বন্ধু আসামি মাসুদকে ইমুতে কল করে বাড়ীতে ডাকে। মাসুদ আসার পর তিনজনে মিলে ডিসিস্ট উজ্জল মিয়াকে অচেতন অবস্থায় গলায় গামছা প্যাচাইয়া শ্বাসরোধ করে হত্যা নিশ্চিত করে। তৎপরবর্তীতে আসামীরা লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে উজ্জল মিয়ার মৃতদেহ বাঁশের সাথে বেঁধে ঘটনাস্থল ধলেশ্বরী নদীর পাড়ে নিয়ে যায়। অতঃপর, আসামী মাসুদ তার বাড়ী থেকে নীল রংয়ের প্লাস্টিকের ড্রাম ও ধারালো হাসুয়া নিয়ে নদীর পাড়ে এসে ড্রামে কাদা মাটি ভরে ড্রামের সাথে রশি দিয়ে উজ্জল মিয়ার মৃতদেহ বেঁধে লাশ নৌকায় উঠিয়ে দিয়ে নদীর দক্ষিণ পাশে নিয়ে হাসুয়া দিয়ে লাশের বুক চিড়ে লাশ নদীর পানিতে ডুবিয়ে গুম করে।গ্রেফতারকৃত ৩ জনকে আদালতে পাঠানো হয়।

আরবি/জেডআর

Link copied!