ঢাকা সোমবার, ০৭ অক্টোবর, ২০২৪

আমন উৎপাদনে আবাদ, অতি বর্ষণে চরম দুঃশ্চিন্তায় কৃষকরা

নাজমুল রিপন, বরিশাল

প্রকাশিত: অক্টোবর ৭, ২০২৪, ০৪:৪৪ এএম

আমন উৎপাদনে আবাদ, অতি বর্ষণে চরম দুঃশ্চিন্তায় কৃষকরা

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

প্রায় ২৪ লাখ টন চাল পাবার লক্ষ্য অর্জনে বরিশাল কৃষি অঞ্চলে ৮ লাখ ৮৫ হাজার হেক্টরে আবাদ লক্ষ্য অর্জনের কাছে পৌছলে বর্ষা মৌসুমের অনাবৃষ্টির পরে শেষ শরতের অতিবৃষ্টি কৃষি যোদ্ধাদের চরম দুঃশ্চিন্তায় ফেলছে।

প্রায় ১৪ লাখ টন খাদ্য উদ্বৃত্ত বরিশাল কৃষি অঞ্চলে চলতি খরিফ-২ মৌসুমের শুরুতে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের অভাবে আমন বীজতলা ছিল হুমকির মুখে। এরপরেও লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ১০৪% বীজতলা তৈরী হলেও গত মে মাসের ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’এ ভর করে প্রবল বর্ষনে এ অঞ্চলের বিপুল পরিমাণ জমির বীজতলা বিনষ্ট হয়েছে।

ফলে বীজ সংকটে আমনের রোপন নিয়েও সংশয় ছিল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর-ডিএই’র দায়িত্বশীল মহলে। তবে বীজ বিনিময় সহ নানা উপয়ে মৌসুমের শেষ প্রান্তে এসে রোপা আমনের লক্ষ্য অর্জনের দ্বারপ্রান্তে বরিশালের কৃষি-যোদ্ধা গন। ডিএই’র হিসেব মতে গত বুধবার পর্যন্ত বরিশাল অঞ্চলে রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৯৯ ভাগ অর্জিত হয়েছে।

দায়িত্বশীল মহলের মতে আজকালের মধ্যেই আমন আবাদের শতভাগ অর্জিত হবে। সুতরাং এতদিন বরিশাল অঞ্চলের প্রধান ‘দানাদার খাদ্য ফসল’ অমনের আবাদ নিয়ে যে দুশ্চিন্তা কাজ করছিল তার উত্তরণ ঘটছে। কিন্তু বৃষ্টির খামখেয়ালিপনায় কৃষকদের মাঝে দুশ্চিন্তা কাজ করছে। সাথে গত প্রায় ১৫ দিন ধরে সাগর কিছুটা ফুসে থাকার সাথে উজানের ঢলে বরিশাল অঞ্চলের অনেকগুলো নদ-নদী প্রায় বিপদ সীমার কাছে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে বর্ষণের সাথে নদ-নদীর প্রবাহ নিয়েও কিছুটা দুশ্চিন্তা তাড়া করছে কৃষি-যোদ্ধাদের।

চলতি খরিপ-২ মৌসুমে দেশে ৫৭ লাখ ১৮ হাজার ৩শ হেক্টরে পৌনে ২ কোটি টনেরও বেশী আমন চাল পাবার লক্ষ্য স্থির করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। ডিএই’র মতে, এরমধ্যে বরিশাল অঞ্চলে ৮ লাখ ৮২ হাজার ৩১০ হেক্টরে আবাদের মাধ্যমে ২৩ লাখ ৮০ হাজার ৫৫৮ টন চাল পাবার লক্ষ্য স্থির করেছে মন্ত্রণালয়। গত বছর দেশে আমনের উৎপাদন ছিল প্রায় ১ কোটি ৭৩ লাখ টন।

যার মধ্যে বরিশাল অঞ্চলের অবদান ছিল প্রায় ২৩ লাখ টনের কাছে। এবার মূলত বৈরী আবহাওয়াই আইশের পরে আমনের আবাদকে অনেকটা অনিশ্চিত করে তুলেছিল। সদ্য-সমাপ্ত খরিফ-১ মৌমুসে দেশের প্রায় এক তৃতীয়াংশ আউশ উৎপাদন এলাকা বরিশালে আবাদ লক্ষ্যমাত্রার ৫০ ভাগও অর্জিত হয়নি বৃষ্টির অভাবের সাথে গত ২২মে’র ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’এর কারনে।

আবহাওয়া বিভাগের মতে, চলতি বছরের শুরু থেকে লাগাতর অনাবৃষ্টির পরে ঘূর্ণিঝড় রিমাল’এ ভর করে বরিশালে স্বাভাবিকের প্রায় ৫০ ভাগ বেশী বৃষ্টি হলেও জুন ও জুলাই মাসেও ব্যাপক ঘাটতি লক্ষ্য করা গেছে।

অপরদিকে ভাদ্রের পূর্ণিমায় ভর করে লাগাতার প্রবল বর্ষণে আগস্ট মাসে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল স্বাভাবিকে ৬২% বেশী। এমনকি সদ্য-সমাপ্ত সেপ্টেম্বরে আবহাওয়া বিভাগ থেকে ২৮৫ থেকে সাড়ে ৩শ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেয়া হলেও মাসের প্রথম ২০ দিনেই প্রায় ৪৪০ মিলিমিটার বৃষ্টি হবার পরে মাস শেষের যোগফলে বরিশালে স্বাভাবিকের প্রায় ৫৩% বেশী বৃষ্টি হয়েছে বলে আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে। এমনকি চলতি অক্টোবরে ১৭০-২০০ মিলি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেয়া হলেও মাসের প্রথম ৪ দিনেই প্রায় দেড়শ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ।

দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুম বায়ু উত্তর বঙ্গোপসাগরে পবর অবস্থায় রয়েছে। অপরদিকে বৃষ্টিপাতের স্বাভাবিক স্তর অতিক্রম করলেও ইতোমধ্যে তাপমাত্রার পারদও স্বাভাবিকের ৩-৫ ডিগ্রী পর্যন্ত ওপরে। এমনকি শনিবারের মধ্যেই বরিশাল অঞ্চল সংলগ্ন উত্তর বঙ্গোপসাগরে আরো একটি লঘুচাপ সৃষ্টির কথা জানিয়ে রোববারের পরবর্তী ৫ দিনও বরিশাল অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা অব্যাহত থাকার কথা জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। কৃষিবিদদের মতে বর্তমান শরতের শেষ সময়ে স্বাভাবিক বর্ষণ রোপা ও বোনা আমনের জন্য কোন বিরূপ পরিস্থিতি তৈরী করার কথা নয়। কিন্তু বর্তমানে অতি বৃষ্টি সংকট তৈরী করতে পারে।

দীর্ঘ অনাবৃষ্টির পরে গত দুটি মাসই অতি বর্ষন আউশের মত আমনের ভাগ্যে কোন বিপর্যয় তৈরী করে তা নিয়ে দুশ্চিন্তা তাড়া করছে কৃষি যোদ্ধাদের। এ ধরনের যেকোনো বিপর্যয়ই কৃষি নির্ভর বরিশাল অঞ্চলের কৃষি অর্থনীতিতে চরম সংকট তৈরী করতে পারে বলে শঙ্কিত মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদগনও। গত শনিবার সকাল ৬টা পূর্ববর্তী ২৪ ঘন্টায় ৯২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। ঘনকালো মেঘে ঢাকা ছিল বরিশালসহ পুরো উপকূলীয় অঞ্চলে। ব্যাপক গর্জনের সাথে বৃষ্টিপাতে জনজীবন ছিল বিপর্যস্ত।

আরবি/জেডআর

Link copied!