ঢাকা শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

খাজানগরে মিল মালিকদের জিম্মি করে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৪, ০৭:৩৩ পিএম

খাজানগরে মিল মালিকদের জিম্মি করে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

দেশের অন্যতম বৃহত্তম চালের মোকাম কুষ্টিয়ার খাজানগর। এখানে মিল মালিকদের জিম্মি করে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। 

জানা গেছে, কুষ্টিয়া মডেল থানায় ৬ সেপ্টেম্বর রাতে দুটি মামলা রেকর্ড হয়েছে। একটি মামলার বাদী কুষ্টিয়া সদর উপজেলার দহকুলা ইউনিয়নের নওয়াপাড়া গ্রামের মৃত আকবর আলীর ছেলে আশরাফুল ইসলাম। এ মামলায় ২৫জন নামীয়সহ অজ্ঞাত আরো ৮ থেকে ১০ জনকে আসামী করা হয়েছে। তিনি নিজেই আহত হয়েছিলেন। অপর মামলাটি করেছেন কুষ্টিয়া শহরের চর থানাপাড়া এলাকার কোরবান আলীর স্ত্রী রুনা খাতুন। ৫৪ জনকে নামীয়সহ অজ্ঞাত ১০/১৫ জনকে আসামী করা হয়েছে। রুনা খাতুন ছেলেকে খুঁজতে এসে ৫ আগস্টের আন্দোলনে ছররা গুলি লেগে আহত হয়েছেন। তার ছেলে পানির মিস্ত্রি রুহুল আমিনও এদিন আহত হয়।

দুটি মামলার প্রথম সারিতে আসামী করা হয়েছে আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুবউল আলম হানিফসহ দলীয় নেতাদের। তবে এ দুটি মামলায় শুধুমাত্র বটতৈল ইউনিয়নের খাজানগর গ্রামের ১৪জনকে আসামী করা হয়েছে। যাদের বেশির ভাগ চাল মিল মালিক ও চাল ব্যবসায়ী। এর মধ্যে দেশ এগ্রো লিমিটেডের আব্দুল খালেক, দাদা রাইস মিলের মালিক হাজি আরশাদ আলী, মেসার্স সুবর্ণা এগ্রো ফুডের মালিক জিন্নাহ আলম, ফ্রেস এগ্রো লিমিটেডের মালিক ওমর ফারুকসহ আরও কয়েকজনের নাম।

এছাড়া অন্য একটি মামলায় গুরুর দান রাইস মিলের মালিক সুজনকে আসামী করা হয়েছে। দেশের শীর্ষ এসব মিল মালিক আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর হানিফ ও আতার সাথে সম্পর্ক রেখে চলতেন। এর মধ্যে ওমর ফারুক সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ পদে আছেন। বাকিরা আওয়ামী লীগ সমর্থিত চালকল মালিক সমিতির নেতা হলেও দলের কোন পদে নেই।

মামলার নথি ঘেঁটে দেখা গেছে, বটতৈল ইউনিয়নের শুধুমাত্র খাজানগর গ্রামের ব্যবসায়ীদের আসাামী করা হয়েছে। বাকি অন্য কোন গ্রামের একজনও আসামী নেই। একইভাবে রুনা খাতুনের দায়ের করা মামলায় সদর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের ১০জনকে ও কুমারখালী উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের ১১জনকে আসামী করা হয়েছে। 

চালকল মালিকদের অভিযোগ, ৫ আগস্টের পর বেশ কয়েকজন চালকল মালিকের বাড়ি ও প্রতিষ্ঠানে হামলা হয়েছে। তাদের একাধিক মামলায় আসামী করা হয়েছে। এছাড়া নতুন করে আরো দুটি মামলায় আসামী করা হয়েছে শীর্ষ কয়েকজন মিল মালিককে। স্থানীয় চালকল মালিক সমিতি ও সামাজিক এবং রাজনৈতিক বিরোধ থেকে তাদের আসামী করা হয়েছে। একই সাথে গণহারে চাঁদা নেওয়া হচ্ছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে মামলার ভয় দেখিয়ে চাঁদা নেওয়া হচ্ছে। চালকল মালিকদের অভিযোগ, টার্গেট করে খাজানগর গ্রামের ব্যবসায়ীদের আসামী করা হয়েছে। ব্যবসায়ীদের সবার কাছেই কম বেশি নগদ টাকা থাকে। তাই মামলার আসামী হওয়ার ভয়ে টাকা দিয়ে দিচ্ছেন তারা।

তাদের অভিযোগ, বিএনপির দুটি গ্রুপ আছে এলাকায়। সবাইকে চাঁদা দিতে হচ্ছে। নিরবে কোটি কোটি টাকার চাঁদা উঠছে। কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছে না।’ 

চাঁদাবাজি ও ঢালাও আসামী করার বিষয়ে, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারন সম্পাদক অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন বলেন,‘ দলের নাম ভাঙ্গিয়ে কোন অপকর্ম করার সুযোগ নেই। নিরীহ কোন মানুষকে আসামী করার বিপক্ষে আমাদের দল। তবে দোষীদের নামে মামলা হলে সেটা আলাদা কথা। 

দাদা রাইস মিলের মালিক হাজি আরশাদ আলী বলেন, ‘শুধুমাত্র হয়রানী করার জন্য আমাকে আসামী করা হয়েছে। আমরা ব্যবসা করি। যারা সরকার ও ক্ষমতায় থাকে তাদের সাথে সম্পর্ক রাখা লাগে। এ কারনে কেউ যদি মিথ্যা মামলা করে তার জন্য কি করার আছে। তবে এটা বন্ধ হওয়ার প্রয়োজন। ব্যবসায়ীরা ব্যবসা না করতে পারলে দেশের ক্ষতি হবে।’ 

বাংলাদেশ অটো চালকল ওনার্স এসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটির আহবায়ক ও দেশ এগ্রো ফুডের মালিক একাধিক মামলার আসামী এমএ খালেক বলেন, ‘সরাসরি দলের কোন পদে না থেকেও আমাদের নামে মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে। চালকল মালিকর এটা নিয়ে শঙ্কিত।

কুষ্টিয়া মডেল থানার ওসি মাহফুজুল হক চৌধুরী বলেন, থানায় মামলা হয়েছে বেশ কয়েকটি। পুলিশ মামলার পর তদন্ত করছে। আর খাজানগরে চালকল মালিকদের পক্ষ থেকে চাঁদাবাজি বা অন্য কোন ঘটনায় কেউ কোন অভিযোগ দেয়নি। দিলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরবি/জেডআর

Link copied!