ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪

হারিয়ে যাচ্ছে খেজুর গাছ ও সুস্বাদু রস 

জাহিদুল ইসলাম, দুমকি

প্রকাশিত: নভেম্বর ১০, ২০২৪, ০৮:০৮ পিএম

হারিয়ে যাচ্ছে খেজুর গাছ ও সুস্বাদু রস 

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

একসময় শীতের শুরুতেই গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের ধুম পড়ে যেতো। খেজুর রস ছোট বড় সকলের কাছেই ছিল একটি রুচিকর সুস্বাদু খাবার। খেজুরের গুড়, পিঠা,পুলি, পায়েস উৎসব চলতো ঘরে ঘরে। কালের বিবর্তনে আধুনিকতার ছোঁয়ায়, রক্ষণাবেক্ষণ, পরিচর্যা, নতুন করে রোপন আর দক্ষ গাছিয়াদের অভাবে ক্রমশই হারিয়ে যাচ্ছে এক
সময়ের জনপ্রিয় খেজুর গাছ ও সুস্বাদু রস।ভরা হেমন্তে শীতের আগমনে গ্রামীণ সংস্কৃতিতে নতুন মাত্রা যোগ হয় খেজুর গাছের রস সংগ্রহ। এসময় গাছিদের কর্মতৎপরতা বৃদ্ধি পায়। 

আগেকার দিনে শীতের শুরুতে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করতে ধুম পড়ে যেতো গ্রামীণ জনপদের ঘরে ঘরে। শহরায়নের আগ্রাসনে প্রকৃতির ঐতিহ্য খেজুর গাছ হারিয়ে যাচ্ছে। দিন যত যাচ্ছে খেজুর গাছও তত কমছে। সরে জমিনে ঘুরে দেখা যায়, দুমকি উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের প্রত্যন্ত এলাকায় কিছু কিছু খেজুর গাছ দেখা যায়। যেসব স্থানে এক সময় রাস্তার দুই পাশে সারি সারি অসংখ্য খেজুর গাছ ছিল। সেসব স্থানে এখন খেজুর আর গাছ নেই। গ্রামের রাস্তার পাশে কিছু গাছ থাকলেও তাতে তেমন রস হয় না বলে স্থানীয়রা জানান। জানা গেছে শীতের শুরুতেই রস সংগ্রহের জন্য  খেজুর গাছ কাটা হয়। গাছের অগ্রভাগের একপাশে বেশ খানিকটা কেটে পরিষ্কার করা হয়। পরে বাঁশের কঞ্চি কেটে খিল  চুঙ্গি তৈরি করে গেঁথে দেওয়া হয়। তার ঠিক নিচেই ঝুলানো হয় মাটির হাঁড়ি অথবা বোতল। গাছের কাঁটা অংশ বেয়ে রস কাঠির মাধ্যমে ফোঁটায় ফোঁটায় হাঁড়ি বা বোতলে  জমা হয়। প্রত্যুষে গাছিরা কলস নিয়ে প্রতিটি গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে বড় টিনের কোসায় অথবা বড় বড় পাতিলে জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করা হতো। আবার কিছু কিছু গাছিয়ারা বাজারেও বিক্রি করত। ঠান্ডা আবহাওয়া, মেঘলা আকাশ আর কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে পর্যাপ্ত রসের জন্য উপযোগী। এ সময়ে প্রাপ্ত রসের সাধ ও ঘ্রাণ ভালো থাকে। কাক ঢাকা ভোরে খেজুর রসের মন মাতানো ঘ্রাণ গ্রামীন জনপদে মুখরিত করে তুলত।

শীতের সকালে খেজুরের রসে মিষ্টি রোদ, কৃষান কৃষাণীর হাসি দারুন প্রাণশক্তি। বিলুপ্তির পথে গ্রামীন এই ঐতিহ্যবাহী খেজুর গাছ । তার সাথে দেখা দিয়েছে অত্যন্ত লোভনীয় খেজুর রসের সংকট। এক সময় গ্রামীণ জনপদে খেজুর রস নিয়ে  পিঠা, পায়েস  উৎসব, গভীর রাতে হাড়ি থেকে  রস চুরি করে খাওয়া অনেকের শৈশবের স্মৃতি আজও অম্লান  হয়ে আছে। গ্রামীন মেঠো পথ, খেজুর গাছের সারি, গাছে রসের হাড়ি আর এখনকার দিনে তেমন একটা চোখে পড়ে না। দেখা মিলে না পাখি আর কীটপতঙ্গের গাছে গাছে রস খাওয়ার দৃশ্য।

খেজুর গাছ বিলুপ্তির কারণ হিসেবে জানা গেছে, বিভিন্ন কারণে খেজুর গাছ কর্তন, মরে যাওয়া, তদারকির অভাব এবং নতুন চারা রোপন না করা। গাছ কমলেও কমেনি খেজুর রসের চাহিদা ও কদর। ঐতিহ্যবাহী কিছু গাছের মধ্যে খেজুর গাছ ছিল অন্যতম। খেজুরের রস ও খেজুরের গুড়ের গন্ধে গ্রামীণ জনপদ মৌ মৌ করত। শীত আসলেই গাছিরা এই সময় অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হতেন। বিভিন্ন পিঠা পুলি ও পায়েস সহ নানা প্রকার খাবার তৈরির জন্য খেজুরের রস ছিল অন্যতম সেরা উপাদান। এজন্য গাছিদের চাহিদার কথা বলে রাখতে হতো। ফলে যাদের খেজুর গাছ ছিল না তারাও রস খাওয়া থেকে বঞ্চিত হতেন না। তখন শীতে আনন্দময় পরিবেশ বিরাজ করতো। বিশেষ করে শীতের মৌসুম এলে গাছিদের আনন্দের সীমা থাকত না। খেজুরের রস সংগ্রহের জন্য মহাব্যস্ত হয়ে পড়তেন তারা। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য এই খেজুর গাছ আজ অস্তিত্ব সংকটে। যে হারে খেজুর গাছ নিধন হচ্ছে সে তুলনায় রোপন করা হয় না। শীত
মৌসুমে সকালে খেজুরের তাজা রস যে কতটা তৃপ্তিকর তা বলে শেষ করা যাবে না। কৃষি বিভাগ ও কখনো খেজুরের গাছ আবাদ নিয়ে কথা বলতে বা কৃষি মেলায় খেজুরের গাছ রোপনের উদ্বুদ্ধ করার পরামর্শ দিতে দেখা যায় না।

মুরাদিয়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের আ. খালেক মাঝি, শ্রীরামপুর ইউনিয়নের আ. মান্নান জানান, একসময় বেশ কিছু খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে নিজের চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রি করতাম। কিন্তু বয়সের ভারে এবং গাছ কমে যাওয়ায় পেশা ছেড়ে দিয়েছি।

এ বিষয়ে উপজেলা দুমকি কৃষি কর্মকর্তা মো. ইমরান হোসেন বলেন, নানাবিধ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ও যে হারে খেজুর গাছ কাটা হচ্ছে সে তুলনায় রোপন করা হয় না। আমাদের বিভাগের পক্ষ থেকে খেজুর গাছ রোপণের জন্য জনসাধারণকে উৎসাহ প্রদান করি।
 

আরবি/জেডআর

Link copied!