বাংলাদেশের অস্থায়ী রাজধানী খ্যাত চুয়াডাঙ্গার রেলস্টেশনটি আধুনিক হচ্ছে। চুয়াডাঙ্গা রেলস্টেশনের মাধ্যমে ১৮৫৯ সালে চুয়াডাঙ্গা হতে কুষ্টিয়ার জগতি পর্যন্ত সর্বপ্রথম রেল যোগাযোগের কাজ শুরু হয়।
১৬৫ বছরের দীর্ঘ সময় পাড়ি দেয়া চুয়াডাঙ্গার পুরাতন রেলওয়ে স্টেশনটি কালের সাক্ষী হিসেবে এতদিন ঐতিহ্যবাহী নিদর্শন হিসেবে দাঁড়িয়েছিল। জরাজীর্ণ হয়ে পড়লেও এতদিন পুরাতন ভবনেই স্টেশনের সমস্ত কার্যক্রম পরিচালিত হতো। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর পুরাতন ভবনের আদলে নির্মিত হচ্ছে দ্বিতল বিশিষ্ট আধুনিক রেলওয়ে স্টেশন।
চুয়াডাঙ্গা রেলওয়েস্টেশনটির নির্মাণ কাজের ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ কোটি ১৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা। দ্বিতলভবন বিশিষ্ট রেলওয়ে স্টেশনটির নির্মাণ কাজ মাঝে কিছু দিন বন্ধ থাকলেও এখন সেটি চলমান আছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সুত্রে জানা যায় চুয়াডাঙ্গা রেলওয়েস্টেশনটির কাজের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ সম্পন্ন হয়েছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা একাজ সার্বক্ষণিক তদারকি করছেন বলে জানিয়েছেন রেল কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশ রেলওয়ে চুয়াডাঙ্গার সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী চাঁদ আহমেদ বলেন, চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশনটি আজ অবধি চুয়াডাঙ্গা শহর ও পার্শ্ববর্তী মেহেরপুর এবং ঝিনাইদহ এলাকার লোকজনকে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে সেবা দিয়ে আসছে।
কিন্তু পুরনো রেলওয়ে স্টেশনটি জরাজীর্ণ হওয়ায় বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ভবনটি ভেঙে একটি আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসংবলিত দ্বিতল বিশিষ্ট স্টেশন ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেছে। তিনি আরো বলেন, এখানে দ্বিতল আধুনিক স্টেশন ভবন, প্ল্যাটফর্ম ও শেড পুনর্নির্মাণের প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষের দিকে। রেলওয়ে কর্মকর্তা জানান, ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আরটিসি -এস এইচজে জয়েন্ট ভেঞ্চার নতুন রেলওয়ে স্টেশন নির্মাণ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। গতবছর ১২ই সেপ্টেম্বর এই প্রকল্পটি বাংলাদেশ রেলওয়ে ও ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আরটিসি -এসএইচজে মধ্যে চুক্তিবদ্ধ হয়।
চুক্তিবদ্ধ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মেয়াদকাল ধরা হয়েছে ৫৪০ দিন। এই প্রকল্পের অধীনে ১২ হাজার ৪৭০ বর্গফুট আয়তনের দ্বিতল বিশিষ্ট স্টেশনে ভবন নির্মাণ, যাত্রী সাধারণের নিরাপদ ও আরামদায়ক করার জন্য বর্তমান প্ল্যাটফর্মকে ১২ ফুট থেকে ২৫ ফুট প্রশস্তকরণ, স্টেশন ভবন সংলগ্ন প্ল্যাটফর্মের সেড আধুনিকায়ন ও স্টেশনের সামনের অংশের ছাদটিতে জনসাধারণের জন্য বিশাল পার্কিংয়ের সুবিধা রাখা হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার রেল পাড়ার বাসিন্দা মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, চুয়াডাঙ্গার রেল স্টেশনটি অনেক পুরাতন একটি স্টেশন। বর্তমান যে ভবনে কাযক্রম চলছে সেই ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সরকার নতুন একটি স্টেশন নির্মাণ করছে। আশা করছি স্টেশনটি খুব দৃষ্টিনন্দন স্টেশন হবে। ইতোমধ্যে নতুন ভবনের নির্মাণ কাজ প্রায় শেষের দিকে।
রেল যাত্রী হাসান আলী বলেন, নিরাপদে ঢাকায় যাতায়াতের জন্য ট্রেনের কোন বিকপ্ল নেই চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশনটি অনেক পুরাতন একটি স্টেশন ।এখানে রাতে যে যাত্রীরা বসবে তেমন কোন ব্যবস্থা ছিল না এখন দৃষ্টিনন্দন চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশন নির্মাণ করায় আমরা অনেক খুশি।
অটোচালক আবিদ হোসেন বলেন, চুয়াডাঙ্গার এই স্টেশনে প্রায় প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ বার ট্রেন আপ-ডাউন করে। স্টেশনটি পরিপূর্ণ নির্মাণ হলে ট্রেনে চলাচলকারী যাত্রী সাধারণ অনেক উপকৃত হবেন।পাশাপাশি আমরা যারা অটোচালক আছি তাদের গাড়ি রাখার জন্য একটি নিদিষ্ঠ স্থান হবে।
চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মো. মিজানুর রহমান বলেন, ব্রিটিশ আমলে নির্মিত চুয়াডাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশনের সেই পথ ধরে আজ দেশের বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত করছে চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুর, ঝিনাইদহ অত্র এলাকার মানুষ। নতুন স্টেশন ভবন নির্মাণ করার কারণে ১৬৫ বছরের পুরানো ঐতিহ্যবাহী এ স্টেশনটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। তবে আধুনিক দ্বিতল বিশিষ্ট স্টেশন নির্মাণ শেষ হলে যাত্রীদের সুযোগ-সুবিধা আরো বহু গুণে বাড়বে।
আপনার মতামত লিখুন :