চোখের আলো ফেরার অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন অভিনেতা, নাট্য ও চলচিত্র নির্মাতা মাসুদ মহিউদ্দিন। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে দু চোখের আলো হারিয়েছেন তিনি। নাট্যজগতে যারা
কাজ করছেন মাসুদ মহিউদ্দিনকে চেনেন না এর সংখ্যা খুবই নগন্য। সদা হাস্যজ্জ্বল এ মানুষটি ছোটবেলা থেকেই ছিলেন পরোপকারী ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার। পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার শ্রীরামপুর ইউনিয়নের রাজাখালী গ্রামে মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম মাসুদ মহিউদ্দিনের। বাবা স্কুল শিক্ষক হওয়ায় পারিবারিক ভাবেই বেড়ে ওঠেন আদর্শ মানুষ হিসেবে। সৈয়দ আলতাফ হোসেন ও সেতারা বেগম দম্পতির তিন সন্তানের মধ্যে মাসুদ মহিউদ্দিন জ্যেষ্ঠ সন্তান। ভাই সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ ও বোন সৈয়দ বদরুন্নেছা মেরী সবার ছোট। গ্রামে জন্মগ্রহণ করলেও বেড়ে ওঠেন পটুয়াখালী শহরের শিমুলবাগ এলাকায়। পটুয়াখালী টাউন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং পটুয়াখালী সরকারি কলেজে থেকে এইচএসসিসহ অর্থনীতিতে অনার্স- মাস্টার্স শেষ করে জড়িয়ে পড়েন অভিনয়ে। অসংখ্য মঞ্চ-নাটক, টিভি ও সিনেমায় অভিনয়সহ একাধিক ধারাবাহিক নাটক ও চলচিত্র নির্মান করেছেন। তিনি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে পুলিশের ছোড়া গুলিতে দুচোখের আলো হারিয়েছেন। দেশজুড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলন চলাকালে মাসুদ মহিউদ্দিন নেমেছিলেন ছাত্রদের পাশে।
গত ১৯ জুলাই বেলা ১১ টার দিকে ঢাকার উত্তরায় আন্দোলনরত অবস্থায় তিনি আহত হন।পুলিশের ছোড়া ছররা গুলিতে দুচোখে আঘাতপ্রাপ্ত হন।আহত অবস্থায় উত্তরায় কোন হাসপাতালে চিকিৎসক না পাওয়ায় এক বন্ধুর সহায়তায় আগারগাঁওয়ে চিকিৎসা নিতে পথিমধ্যেও বাঁধাপ্রাপ্ত হয়েছেন কয়েকবার। হেলিকপ্টার থেকে গুলিবর্ষণের কারণে যথা সময়ে হাসপাতালে পৌঁছাতে খানিকটা বেগ পেতে হয়েছিলো এমনটাই বলছিলেন তিনি। জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে সঠিক চিকিৎসা না মেলায় সেখান থেকে ইস্পাহানি ইসলামিয়া আই ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হসপিটালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। চোখের কয়েকটি সার্জারী সম্পন্ন হলেও এখন পর্যন্ত চোখের আলো ফেরেনি তাঁর। তবে ওই হাসপাতালের ডাক্তার আশার আলো দেখিয়েছেন। ইস্পাহানি ইসলামিয়া হাসপাতালে চিকিৎসায় এক চোখে ৬০ শতাংশ আলো আসলেও অন্যটিতে এখন পর্যন্ত কোন আলো আসেনি। আরো কিছু জটিল অপারেশন করতে হবে হয়তো তখন মিলতে পারে চোখের আলো।কবে মিলবে চোখের আলো কবে আবার সাবলীল চলাফেরা শুরু হবে সে প্রতিক্ষায় কাটছে দিন।
ইস্পাহানি ইসলামিয়া আই ইনস্টিটিউটের চিকিৎসায় তিনি সন্তুষ্টি প্রকাশ করে বলেন, বাইরের দেশের থেকেও এখানের চিকিৎসা অনেক ভালো। এখানকার ডাক্তার হতে শুরু করে নিম্নপর্যায়ের কর্মচারীরাও খুবই আন্তরিক। পৃথিবীতে আগের মত করে দেখতে প্রায় ৪ মাস ভাড়া বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি।
চিকিৎসা ব্যয়, পরিবারের ভরনপোষণের বিষয়ে কারো প্রতি আক্ষেপ না করে বলেন, আমরা সকলে যেন মানবিক হই। মাসুদ মহিউদ্দিন চোখের আলো ফিরে পেয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার প্রত্যাশা করেন বন্ধু বান্ধব, আত্মীয় স্বজন।
আপনার মতামত লিখুন :