যশোরের চৌগাছার তিন দিনের ঐহিত্যবাহী খেজুর গুড়ের মেলা উৎসব মুখর পরিবেশে শেষ হয়েছে। মেলার শেষ দিনেও ছিল দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়। শেষ সময়ে একটু কম দামে গুড় কিনতে এসেছেন অনেকেই। তবে মেলার জমজমাট সমাপনী অনুষ্ঠানে নজর ছিল বেশিরভাগ দর্শনার্থীর। ক্রেতা-দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর ছিল মেলা প্রাঙ্গণ। উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে তৃতীয় বারের মাতো গুড় মেলার শেষ দিন শুক্রবারে এমন চিত্র দেখা গেছে।
শুক্রবার ১৭ জানুয়ারি খেজুর গুড়ের মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গণি শেলী। তিনি বলেন, মেলা শব্দটি শোনার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মনে আনন্দের অনুভূতি সৃষ্টি হয়। মেলার আক্ষরিক অর্থ মিলন। মেলার সঙ্গে গ্রামীণ জনগোষ্টীর কৃষ্টি ও সংস্কৃতির যোগাযোগ নিবিড় । বাংলার এই সংস্কৃতিতে থাকে সব ধর্মের মানুষের সমন্বয়।
তিনি বলেন, খেজুর গুড় যশোরবাসীর নিজস্ব শিল্প। এরই মধ্যে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। যশোর জেলা খেজুর গুড় ঐতিহ্যের ধারক-বাহক। আর চৌগাছার মানুষ সেই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে মেলার আয়োজন করেছে। আমি এই উপজেলারই সন্তান। আমি এখানে আসতে পেরে খুবই আনন্দিত।
তিনি বলেন, মেলায় আগত গাছিরা তাদের উৎপাদিত খাঁটি গুড় ন্যায্য মুল্যে বিক্রি করার জায়গা পেয়েছে। আবার ক্রেতারাও খাঁটি গুড় কিনতে পারছেন। গুড় ক্রেতা ও বিক্রেতার এই ঠিকানা ‘গুড় মেলা’ আরো আকর্ষণীয় করার জন্য জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশনা দেন। তিনি বলেন সারা দেশে যশোরের খেজুর গুড়ের চাহিদা রয়েছে। তবে নির্ভেজাল খেজুর গুড়ের গ্যারান্টি দিতে হবে। বিলুপ্ত প্রায় এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে প্রশিক্ষণ দিয়ে নতুন নতুন গাছি তৈরি করার পরামর্শ দেন তিনি।
সমাপনী অনুষ্ঠানের সভাপতি খুলনার বিভাগীয় কমিশনার ফিরোজ সরকার বলেন, আমি ইতিমধ্যেই রেলওয়ে বিভাগের সাথে কথা বলেছি। যশোর থেকে কৃষি পণ্যবাহি বিশেষ ট্র্রেনে দেশের রাজধানীতে যশোরের খেজুর গুড় পৌছানোর ব্যবস্থা করা হবে। যাতে এই জেলার মানুষ খুব সহজেই গুড় ঢাকায় পৌছাতে পারে।
অনুষ্ঠানে খুলনা বিভাগীয় কমিশনার ফিরোজ সরকারের সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব ড. আ. খ. ম. খবিরুল ইসলাম, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মাহবুবুর রহমান মিলন, খুলনা রেঞ্জের ডি.আই.জি রেজাউল হক, যশোর জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম, যশোরের পুলিশ সুপার জিয়াউদ্দিন আহমেদ।
যশোর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী আসাদুজ্জামান, চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুস্মিতা সাহা, সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাসমিন জাহান, চৌগাছা থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) কামাল হোসেন, উপজেলা বিএনপির সভাপতি এমএ সালাম, উপজেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা গোলাম মোর্শেদ, উপজেলা বিএনপির সেক্রেটারী মাসুদুল হাসানসহ দেশের বিভিন্নস্থানে কর্মরত চৌগাছার কৃতিসন্তানরা, উপজেলার বিভিন্ন স্তরের রাজনীতিবিদ, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
মেলায় অংশ নেওয়া বিক্রেতারা জানান, এবারের মেলায় বেশ ভালো সাড়া পেয়েছেন তারা। প্রায় সারা দিনই ক্রেতা-দর্শনার্থীরা ছিলেন। প্রত্যাশার চেয়ে বেশি সাড়া পেয়েছেন এমন মন্তব্যও করেছেন অনেকে। কেউ কেউ জানিয়েছেন ক্রেতা কম ছিল তাদের স্টলগুলোতে।
তিনদিনব্যাপী মেলায় শ্রেষ্ঠ ৩ জন গাছিকে পুরস্কার দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। এছাড়া ১১ টি ইউনিয়নের শ্রেষ্ঠ ১১ গাছিকেও পুরস্কার দিয়েছে। উপজেলার শ্রেষ্ঠ গাছির প্রথম পুরস্কার হিসেবে ১০ হাজার টাকা ও সনদ পেয়েছেন স্বরুপদাহ ইউনিয়নের সাঞ্চডাঙ্গা গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক। দ্বিতীয় হয়ে পাতিবিলা ইউনিয়নের আব্দুল গাজী পেয়েছেন ৭ হাজার টাকা ও সনদ। ৩য় পুরস্কার পাঁচ হাজার টাকা ও সনদ পেয়েছেন সুখপুকুরিয়া ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রমের মিজানুর রহমান। এছাড়া উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন থেকে মেলায় অংশগ্রহনকারী সকল গাছিদের বিশেষ পুরস্কার দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
আপনার মতামত লিখুন :