জমজ দুই বোনের জন্মের ছয় দিনের মাথায় এক মাস আগে আমাদের মা মারা গেছেন। গত তিন দিন আগে পুলিশ আমার বাবাকে ধইরা নিয়ে গেছে। তিনি এখন জেলে আছেন। ঘরে অসুস্থ দাদী। আমাদের দেখাশোনা করার মতো কেউ নেই। আমরা এখন কিভাবে বাঁচবো? কান্নাজড়িত কন্ঠে এভাবেই কথাগুলো বলছিলো গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার চিত্রাপাড়া গ্রামের শিশু সাজ্জাদ মিয়া (১৩)।
স্কুলছাত্র শিশু সাজ্জাদ চিত্রাপাড়া গ্রামের জামাল মিয়ার বড় সন্তান ও স্থানীয় এম এম খান উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র।
সরেজমিনে জানাগেছে, গত একমাস আগে জামাল মিয়ার স্ত্রী সাথী বেগম একসঙ্গে দুই কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। এর ছয় দিন পর সাথী বেগম মারা যান। স্ত্রীর মৃত্যুর পর সদ্য জন্ম নেওয়া দুগ্ধপোষ্য দুই কন্যাসন্তানসহ চার ছেলে মেয়েকে নিয়ে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন। ঘরে অসুস্থ মা ও চার শিশু সন্তানের লালনপালন করে দিন কাটে দিনমজুর জামাল মিয়ার।
এ অবস্থায় গত শুক্রবার (৮ নভেম্বর) দিবাগত রাতে কোটালীপাড়া থানা পুলিশ জামাল মিয়াকে বাড়ি থেকে ধরে থানায় নিয়ে যায়। এরপর তাকে গোপালগঞ্জ সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়। গোপালগঞ্জ সদর থানা পুলিশ পরদিন শনিবার (৯ নভেম্বর) জামাল মিয়াকে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক শওকত আলী দিদার হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে জেল হাজতে প্রেরণ করেন।
জামাল মিয়ার ভাই মনির মিয়া বলেন, আমার ভাই বর্তমানে কোন রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত নেই। একসময় সে আমতলী ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ছিলো। পুলিশ কি কারণে আমার ভাইকে ধরে নিয়ে হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে জেল হাজতে পাঠিয়েছে তা আমাদের জানানেই।
তিনি আরো বলেন, আমার ভাইয়ের প্রথম সন্তান সাজ্জাদ মিয়া এম এম খান উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। দ্বিতীয় সন্তান ফারিয়া চিত্রাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণির ছাত্রী। এছাড়ও ১ মাস বয়সি দুটি কন্যা সন্তান রয়েছে। এই দুই কন্যা সন্তান জন্মের ছয় দিনের মাথায় জামালের স্ত্রী সাথী বেগম মারা যায়। আমার বৃদ্ধা মায়ের দেখাশোনা আমার ভাই জামালই করতো। এখন জামালের চার শিশু সন্তান ও বৃদ্ধা মায়ের দেখাশোনা করার কেউ নেই। দ্রুত সময়ের মধ্যে আমি আমার ভাইর মুক্তি চাই।
প্রতিবেশী কাইয়ুম মিয়া বলেন, জামাল কোন রাজনীতির সাথে জড়িত নাই। তারপরেও তাকে কেন একটি রাজনৈতিক হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে জেল হাজতে পাঠানো হলো? জামালের অবুঝ চার শিশু সন্তানের দায়িত্ব এখন কে নিবে? জামালকে যেভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ অন্যায় ও অমানবিক। তাই এই চার শিশুসন্তান ও অসুস্থ বৃদ্ধা মায়ের দিকে তাকিয়ে আমারা এলাকাবাসী জামালের মুক্তির দাবী জানাই।
জামালের ছেলে সাজ্জাদ মিয়া বলেন, কয়েকদিন পরেই আমার বর্ষিক পরীক্ষা শুরু হবে। স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। বাড়িতেও বই পড়তে পারি না। মার স্কুলের বেতন ও পরীক্ষার ফি কে দিবে? আমার একমাস বয়সী দুই বোনের দুধের টাকা কে দিবে? আজ তিনদিন আমাদের চুলা জ্বলে না। বাড়ীর আশপাশের লোকজন আমাদের খাওন দিচ্ছে, এভাবে কয়দিন চলবে? আমার বাবাকে মিথ্যা মামলায় আটক করা হয়েছে। আমরা আমাদের বাবাকে ফেরত চাই। কোটালীপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ আবুল কালাম আজাদ বলেন, জামাল মিয়া ঢাকার তেজগাঁও থানা শ্রমিক লীগের যুগ্ম আহবায়ক ছিলো বলে আমরা জেনেছি। তাই তাকে রাজনৈতিক মামলায় আটক করে গোপালগঞ্জ সদর থানায় পাঠানো হয়। সেখানে একটি হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :